পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ খুঁজতে মাঠে গোয়েন্দা

  17-12-2017 11:11PM

পিএনএস ডেস্ক: হাওরে বন্যাকে ইস্যু বানিয়ে চালের দাম বাড়িয়ে দেয় এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। সরকারের নির্দেশে ওই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হলেও জড়িতরা শাস্তি পায়নি। এ ঘটনার রেষ শেষ না হতেই হঠাৎ করেই দেশে কয়েকগুণ বেশি দর বেড়েছে পেঁয়াজের। ২৬ টাকার পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি দরে।

অথচ পেঁয়াজের দাম পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ এশিয়ার কোনো দেশেই বৃদ্ধি পায়নি। পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরেও অজ্ঞাত কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে এই ভোগ্যপণ্যর দাম। তার কারণ খুঁজে বের করতে গোয়েন্দারা মাঠে নেমেছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

সম্প্রতি চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠলে এর জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। কিন্তু ওই সময় চাল সিন্ডিকেটের কোনও সদস্যকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। হঠাৎ ৩৫ টাকার চাল ৫৫ টাকা হওয়ার পর ওই মূল্য আর কমানো সম্ভব হয়নি সরকারের পক্ষে। চালের বাজার স্বাভাবিক অব্স্থায় ফিরে আসার আগেই পেঁয়াজের বাজারে দেখা দিয়েছে নতুন ঝাঁজ।

পেঁয়াজের দাম ২৬ টাকা থেকে বেড়ে ১৪০ টাকায় পর্যন্ত উঠেছে। পেঁয়াজের এই অস্বাভাবিক ঝাঁজের পেছনে এক শ্রেণির অসাধু-মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীকে দায়ী করছে সরকার। এই সিন্ডিকেটকে ধরতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের মাঠে নামিয়েছে। বাণিজ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, চালের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর চাল সিন্ডিকেটের সদস্যদের গ্রেফতারে সারাদেশের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘আমি সব জেলার ডিসিদের সঙ্গে ফোনে কথা বলব। যেখানে যেখানে চালের গুদাম আছে, সেখানে অভিযান চালানো হবে। অতিরিক্ত চাল মজুদ রাখলে মিল মালিকদের বিরুদ্ধে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। কারণ তারা সিন্ডিকেট করে বাজারে চাল সংকটের গুজব ছড়িয়েছে। তারাই সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে ষড়যন্ত্র করছে।’

এরপর দিন ১৯ সেপ্টেম্বর ‘বাংলাদেশ অটো, মেজর ও হাস্কিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি আব্দুর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলীকে ডেকে মন্ত্রণালয়ে বৈঠকও করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। এরপরও চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

এদিকে চালের বাজারে স্বস্তি ফিরে আসার আগেই শুরু হয়েছে পেঁয়াজের দামে ঊর্ধ্বগতি। জানা গেছে, পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সম্প্রতি দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শামীমা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে উপস্থিত সংস্থাগুলোর প্রতিনিধির পর্যবেক্ষণে দেশের বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি থাকার কোনও তথ্য মেলেনি। বৈঠকে জানানো হয়েছে, দেশে এই মুহূর্তে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুদ আছে। যা দিয়ে আরও এক/দেড় মাস চাহিদা মেটানো যাবে। অবশ্য এ সময়ের মধ্যেই নতুন পেঁয়াজ বাজারে চলে আসার কথা। গত সপ্তাহের ৩/৪ দিনের বৃষ্টি এটিকে কিছুটা বিলম্বিত করছে।

একইসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের দু’টি দল রাজধানীর দু’টি পাইকারি বাজার (শ্যামবাজার ও কাওরানবাজার) পরিদর্শনে গিয়ে পেঁয়াজের সরবরাহ, মজুদ ও দামের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়েছে। তারাও বাজার পরিদর্শন করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।

সেখানেও একই চিত্র পাওয়া গেছে। পর্যবেক্ষণ দলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক। পর্যাপ্ত মজুদও আছে। কোথাও সংকট দেখা যায়নি। এরপরও কেন পেঁয়াজের দাম বেড়েছে, জানতে চাইলে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কোনও কথা বলেননি।

এদিকে, বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়া নিয়ে রাজধানীর শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। দেশে বৃষ্টিতে পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। চাহিদা তো আর কমেনি। চাহিদা মতো পেঁয়াজের সরবরাহ নেই। তাই দাম বেড়েছে।

জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শামীমা ইয়াসমিন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, কমিটির পর্যবেক্ষণে এই মুহূর্তে দেশে পেঁয়াজের কোথাও কোনও সংকট নেই। মজুদও ভালো। তারপরও দেশের বাজারগুলোয় পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি সন্দেহজনক।

পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে জড়িতদের ধরতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের মাঠে নামিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন