অর্ধেকে নেমেছে ব্যাংকের অবদান

  06-02-2018 10:58PM

পিএনএস ডেস্ক: দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাংক খাতের অবদান ক্রমেই কমছে। দুই মাসের ব্যবধানে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ব্যাংকগুলোর লেনদেন কমে অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে। তবে ব্যাংক খাতের লেনদেনে এমন নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও ডিএসইতে বেড়েছে মোট লেনদেনের পরিমাণ।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, জানুয়ারি মাসজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১০ হাজার ৭২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হয় ৯ হাজার ২৩৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ মাসের ব্যবধানে ডিএসইতে মোট লেনদেন বেড়েছে ৮৩৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ব্যাংকের শেয়ার লেনদেনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে যায়। জানুয়ারি মাসজুড়ে ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয় ১ হাজার ৯০০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
নতুন বছরে এসে লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাংকের দাপট কমলেও ২০১৭ সালের শেষদিকে শেয়ারবাজারে মহাদাপট দেখায় ব্যাংক খাত। তখন মোট লেনদেনের প্রায় অর্ধেকই চলে যায় ব্যাংক খাতের দখলে। ব্যাংক খাতের দাপটের কারণে বছরজুড়েই ঊর্ধ্বমুখী থাকে শেয়ারবাজার।

গত বছর ব্যাংকের দাপট সব থেকে বেশি ছিল সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে। এই দুই মাসে ডিএসইতে যে লেনদেন হয় তার ৪০ শতংশের ওপরে ছিল ব্যাংকের। তবে নভেম্বর মাস থেকে লেনদেনে ব্যাংকের অবদান কমতে থাকে। নভেম্বর মাসের লেনদেনে ব্যাংকের অবদান ছিল ৩৩ শতাংশ। ডিসেম্বর মাসে তা আরও কমে দাঁড়ায় ২৩ শতাংশে।

ডিএসইর সাবেক সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরের ওপর মানুষের আস্থার সংকট রয়েছে। ব্যাংক সেক্টর ডিজাস্টারে (দুর্যোগের মধ্যে)। বাজার মূলধনের অর্ধেকই ব্যাংক, বীমা এবং আর্থিক খাতের। সমগ্র আর্থিক খাতই একটা আস্থার সংকটে। এই খাত খারাপ অবস্থায় রয়েছে এটা নিশ্চিত এবং তার একটি রিফ্লেকশন (প্রতিক্রিয়া) হচ্ছে এবার ব্যাংকগুলো ওভাবে লভ্যাংশ দিতে পারবে না।
এদিকে মাসভিত্তিক ব্যাংকের শেয়ার লেনদেনের চিত্রে দেখা যায়, ২০১৭ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ব্যাংক খাতের শেয়ার লেনদেন হয় ৫ হাজার কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারিতে ২ হাজার ৩৬২ কোটি, মার্চে ৪ হাজার ৭১৬ কোটি, এপ্রিলে ২ হাজার ৮৪৭ কোটি, মে মাসে ১ হাজার ৬৮৭ কোটি, জুনে ১ হাজার ৬৮৬ কোটি, জুলাইতে ৩ হাজার ৩২৪ কোটি, আগস্টে ৫ হাজার ৬১ কোটি, সেপ্টেম্বরে ৮ হাজার ১৩৬ কোটি, অক্টোবরে ৬ হাজার ৪১৭ কোটি, নভেম্বরে ৬ হাজার ৭৬ কোটি এবং ডিসেম্বরে ২ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসের তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ব্যাংকের শেয়ারের লেনদেন কমে পাঁচ ভাগের এক ভাগে দাঁড়িয়েছে। আর শেষ সাত মাসের মধ্যে ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে সব থেকে কম।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. বখতিয়ার হাসান বলেন, দীর্ঘ মন্দার পর ২০১৭ সালজুড়েই শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এ সময় ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ার দাম বেশ বেড়ে যায়। যে কারণে এখন ব্যাংকের শেয়ার দাম কিছুটা নিম্নমুখী। আর দাম কমার কারণে লেনদেনও কমেছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাত খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থা অনেক কমে গেছে। একই অবস্থা আর্থিক খাতের। এমন ধারণাও প্রচলন রয়েছে এবার ব্যাংকগুলো বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দিতে পারবে না। এরই একটি নেতিবাচক প্রভাবে হয়তো শেয়ারবাজারে ব্যাংকের অবদান কমেছে।

ডিএসইর খাতভিত্তিক তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জানুয়ারি মাসে ডিএসইতে লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে প্রকৌশল খাত। তিন মাস ধরে এই খাতটি লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। জানুয়ারি মাসজুড়ে প্রকৌশল খাতের শেয়ার লেনদেন হয় ১ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ। আগের মাস ডিসেম্বরে এ খাতের শেয়ার লেনদেন হয় ১ হাজার ২২৭ কোটি টাকা, যা মোট লেনদেনের ১৩ দশমিক ২৯ শতাংশ।

তৃতীয় স্থানে থাকা ওষুধ খাতের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। মোট লেনদেনে ১২ দশমিক ৯০ শতাংশ অবদান রেখে এর পরের স্থানেই রয়েছে বস্ত্র খাত। জানুয়ারি মাসজুড়ে এ খাতের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা।

বাকি খাতগুলোর মধ্যে জানুয়ারিতে মোট লেনদেনের ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং ৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ আর্থিক খাতের। লেনদেনে বাকি সবকটি খাতের এককভাবে অবদান ৫ শতাংশের নিচে।

এর মধ্যে খাদ্যের ৪ দশমিক ৯১ শতাংশ, টেলি কমিউনিকেশনের ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ, বিবিধ খাতের ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ, বীমার ২ দশমিক ৩১ শতাংশ, সিমেন্টের ২ দশমিক ৮৩ শতাংশ, আইটির ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ, সিরামিকের ১ দশমিক ৬৬ শতাংশ, চামড়ার ১ দশমিক ৪২ শতাংশ, সেবা ও আবাসনের ১ দশমিক ২৩ শতাংশ, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, ভ্রমণের দশমিক ৭৭ শতাংশ, পাটের দশমিক ১৫ শতাংশ, কাগজ ও মুদ্রণের দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ এবং বন্ডের দশমিক শূন্য ১ শতাংশ অবদান রয়েছে।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন