রবির বিরুদ্ধে ৯২৫ কোটি টাকা কর ফাঁকির অভিযোগ

  09-02-2018 01:05PM


পিএনএস ডেস্ক: মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেডের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ তুলে পাওনা প্রায় ৯২৫ কোটি টাকা দাবি করে চিঠি পাঠিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) থেকে গত মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত ৫টি চিঠি অপারেটর রবির কাছে পাঠায়।

চিঠি পাঠানোর কথা স্বীকার করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) কর কমিশনার মতিউর রহমান বলেন, ‘এটা বড় ধরনের কর ফাঁকি। অন্য কোন টেলিকম কোম্পানি এ ধরনের কর ফাঁকি দেয়নি।’

তাদের কাছ থেকে ফাঁকি দেয়া কর আদায়ে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

অপারেটর রবি ও এয়ারটেল একীভূত হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষার উদ্যোগ নেয় এনবিআর। এনবিআরের হিসেবে, রবি ২০১৩-১৬ সাল পর্যন্ত ৭১১ কোটি ৮২ লাখ ১১ হাজার ৯১৭ টাকা ফাঁকি দিয়েছে।

একই সময়ে অপারেটরটি অবৈধ রেয়াত নিয়েছে ১১৬ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৫ কোটি টাকা ইন্টারকানেকশনে (এক অপারেটর থেকে অন্য অপারেটরে সংযোগ স্থাপন) ফাঁকি দিয়েছে।

এনবিআরের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, প্রতিষ্ঠানটি ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিধি বহির্ভূতভাবে ১১৬ কোটি ৪০ লাখ ৫১ হাজার ৬২ টাকা ২৫ পয়সা রেয়াত নেওয়ার মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে।

অন্য চিঠিতে বলা হয়, মোবাইল অপারেটরটি ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ইন্টারকানেকশন চার্জের উপর ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৬ হাজার ৩৪৮ টাকা ৬৭ পয়সার মূসক ফাঁকি দিয়েছে। এছাড়া ২০১২ সালে ইন্টারকানেকশন চার্জের ওপর ১ কোটি ৬৫ লাখ ১৫ হাজার ৮০২ টাকা ৩ পয়সা মূসক পরিশোধ না করে ফাঁকি দিয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, রবি ও এয়ারটেল এর একীভূত করার ক্ষেত্রে চার্জ ফি ১০০ কোটি টাকা এবং এয়ারটেল লিমিটেডের অনুকূলে বরাদ্দকৃত টু-জি তরঙ্গ চার্জের ক্ষেত্রে ২০১১ সালে সর্বশেষ টু-জি লাইন্সেস এর আওতায় তরঙ্গ নবায়ন মূল্যের সমন্বয়ে ৫০৭ কোটি টাকাসহ ৬০৭ কোটি টাকার ওপর মূসক প্রযোজ্য। একীভূত ফি ও তরঙ্গ চার্জের উপর আনাদীয় রাজস্ব বাবদ ৯১ কোটি ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করতে দাবিনামা জারি করা হয়।

২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি এসএপি সফটওয়্যার খাতে ৫৫৩ কোটি ৬১ লাখ ১২ হাজার ৫২৮ টাকা ২০ পয়সার মূসক ও ১৫৮ কোটি ২০ লাখ ৯৯ হাজার ৩৮৮ টাকা ৮৪ পয়সার উৎসে মূসক কম পরিশোধ করে ফাঁকি দিয়েছে বলে এনবিআরের নিরীক্ষায় উঠে আসে।

সর্বমোট রবি ৯২৪ কোটি ৪৯ লাখ ৮৫ হাজার ১২৯ টাকা ৯৯ পয়সা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে বলে দাবি এনবিআরের।

এনবিআরের চিঠি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে রবির হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স শাহেদ আলম বলেন, ‘আমাদেরকে এনবিআর যখন শোকজ লেটার পাঠায় তখন তা দেখে উপায় ছিল না কি বা কেন ক্লেইম করছে। তখন আমরা অডিট রিপোর্ট চেয়েছিলাম, তিন সপ্তাহ পরে অডিট রিপোর্ট পাঠায়।’

‘অডিট রিপোর্ট পাওয়ার পর আমরা সময় চাইলাম অ্যাসেস করার জন্য, তারা সময় না দিয়ে ডিমান্ড নোট পাঠিয়ে দিলেন। আমার এটি বলেছি এভাবে তো ডিমান্ড নোট পাঠাতে পারেন না আমাদের বক্তব্য ছাড়া। আমরা মনে করছি এই অডিটের কোন ভিত্তি নেই কারণ আমাদের কোন বক্তব্য নেই।’

এনবিআরের চিঠির বিষয়ে শাহেদ বলেন, ‘এখানে ৫টি ডিমান্ড আছে। একটি হচ্ছে ইন্টারকানেকশন চার্জ নিয়ে বিটিসিএল সংক্রান্ত, বিটিসিএলের ভ্যাট নিয়ে এনবিআরের উচিত বিটিসিএলকে ধরা, আমাকে কেন ধরছে, সার্ভিসটা বিটিসিএলকে দিয়েছে, আমি ভ্যাট দিলে বিটিসিএল মূসক চালান দেবে। বিটিসিএল মূসক চালান না দিলে কিভাবে টাকা দেব। বিটিসিএল যদি ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন না করে তাহলে সে যত সেবা দেয় তাহলে ভ্যাটের আওতামুক্ত, এটি নতুন কোন ইস্যু নয়।’

তরঙ্গের উপর ভ্যাট একই বিষয় উল্লেখ করে সাহেদ আলম বলেন, বিষয়টি ২০১২ সাল থেকে আদালতে আছে, ২০১৪ সালে ১৫৭ নম্বর মামলায় হাইকোর্ট কিন্তু রবির পক্ষে রায় দিয়েছে এবং বিটিআরসিকে নির্দেশ দিয়েছে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন করতে, বিটিআরসি এ বিষয়ে আপিল করেছে তা পেন্ডিং রয়েছে। এটি সাবজুডিস বিষয়ে সে আমার কাছ থেকে কি ভ্যাট চাইতে পারে।’

সবচেয়ে বড় অংকের টাকার (৫৫৩ কোটি) বিষয়ে সাহেদ বলেন, যে অডিট ফাইন্ডিংয়ের কথা তারা বলছেন সেটা হচ্ছে তারা বলছেন আমাদের যে ইলেকট্রনিক অ্যাকাউন্ট সিস্টেম আছে সেখানে যে ট্রায়াল ব্যালেন্সে একটি ডেবিট ও ক্রেডিট সাইট থাকে। তারা শুধু ক্রেডিট এন্ট্রি নিয়ে আমাদের কাছে ক্লেইম করেছেন, ডেবিটি এন্ট্রির কোন ধরনের কনসিডার করেনি এটা তো হতেই পারে না।’

১১৬ কোটি টাকা রেয়াত নেওয়ার বিষয়ে শাহেদ বলেন, ভ্যাটের আইন অনুযায়ী প্রতিটি প্রোডাক্টে অব সার্ভিসে একবার মাত্র ভ্যাট হবে, প্রডাক্ট ও সার্ভিস তৈরিতে যা মালামাল লেগেছে আমি প্রতিটি জিনিসের উপর রেয়াত পাব। রেয়াত নিয়ে নিয়ে কিন্তু ভ্যাট হবে একবার। রাউটার বা সার্ভার কিনলে এগুলো আউটসোর্স ভ্যাট, এগুলো ছাড়া তো ব্যবসা চালাতে পারবো না। যে ভ্যাট আমি পে করেছি তা তো ক্লেইম করতে হবে আমাকে। আমাকে অ্যাডজাস্ট করতে হবে। আমরা আইনগতভাবে ভ্যাট ক্লেইম করতে পারি।

বিষয়গুলো সম্পূর্ণভাবে অন্যায্য দাবি করে শাহেদ বলেন, ‘আমরা এনবিআরের চেয়ারম্যানের কাছে এসব বিষয়ে কমপ্লেইন দিয়েছি এবং আমরা বলেছি প্রয়োজনে একটি কমিটি করেন বা অডিটর নিয়োগ করেন, আমরা ওয়ান অফ দ্য লার্জেস্ট ট্যাক্স পেয়ার, আমরা যদি ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে থাকি আপনে ব্যবস্থা নিলে মেনে নেব।’

‘এবিআর চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে, তার সিদ্ধান্ত আসার পর আমরা বিবেচনা করবো আইনী ব্যবস্থায় যাব কি যাব না’ বলেন শাহেদ।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন