রপ্তানি হচ্ছে মাছের উচ্ছিষ্ট অংশ, আয় শত কোটি টাকা

  08-04-2018 05:33PM

পিএনএস ডেস্ক:মাছের উচ্ছিষ্ট অংশ বিদেশে রপ্তানি করে শত কোটি টাকা আয় করছে বাংলাদেশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব অপ্রচলিত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ইউরোপসহ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। আর সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হচ্ছে- কার্প জাতীয় মাছের আঁশ, ফুলকা, পিত্ত ও চর্বি, চিংড়ি মাছের মাথা ও খোসা, কাঁকড়ার খোলস, হাঙ্গরের লেজ-ডানা-চামড়া।

রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, মাছের উচ্ছিষ্ট এসব অংশ সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হচ্ছে ইতালি, জাপান, কোরিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং, চীন, জার্মানি, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে। এসব অপ্রচলিত পণ্য দিয়ে বিভিন্ন দেশে স্যুপ তৈরি হয়। এই স্যুপের চাহিদা সবচেয়ে বেশি পূর্ব এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।

স্থল বন্দর সূত্র জানায়, চীন ও ভিয়েতনামেই প্রতি মাসে প্রায় ১০০ টন চিংড়ির মাথা ও খোসা এবং প্রায় ৫০ টন কাঁকড়ার খোলস রপ্তানি করা হয়। আর ইউরোপ ও এশিয়ার দেশগুলোতে কোরাল, বোয়াল, রুই, কাতলা, লাক্কা, আইড়সহ বিভিন্ন মাছের বায়ু থলি, পিত্ত, চর্বি রপ্তানি করা হচ্ছে।

কাস্টমস সূত্র জানায়, গড়ে প্রতি মাসে দেড়শ’ টন মাছের উচ্ছিষ্ট রপ্তানি করা হয়। যা থেকে ২০ থেকে ২৫ লাখ ডলার আয় করা হয়। এছাড়া প্রতি মাসে প্রায় ২০০ থেকে আড়াইশ’ টন মাছের আঁশ, ৮০ টন হাঙ্গরজাত পণ্য রপ্তানি করা হয়। তাতে প্রায় ১৫ লাখ ডলার আয় হচ্ছে।

জানা যায়, রাজধানী ও সমুদ্র তীরবর্তী জেলাগুলো থেকে এসব অপ্রচলিত পণ্য সংগ্রহ করা হয়। একটি গ্রুপ ঢাকার শ্যামবাজার, কাওরান বাজার ও হাতিরপুল বাজার থেকে নাম মাত্র মূল্যে এসব অংশ সংগ্রহ করে থাকে। বিভিন্ন বাজারে যারা মাছ কাটেন, তারা সারা দিনে কাটা মাছের উচ্ছিষ্ট অংশগুলো একত্র করে রাখেন। দিন শেষে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা নগদ টাকায় কিনে নেন। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন হোটেল থেকেও মাছের ফেলে দেওয়া অংশ সংগ্রহ করেন তারা।

মাছের এসব উচ্ছিষ্ট অংশ কেনা-বেচার জন্য রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও শ্যামবাজারে দুটি আড়ত রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা এখাঁন থেকে কেনার পর প্রক্রিয়াজাত করে স্থলবন্দর দিয়ে বিদেশে চালান করেন। অপ্রচলিত পণ্য হওয়ায় এগুলো বিমানে পরিবহন করতে কিছুটা সমস্যাও রয়েছে। এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আফজাল হোসেন জানান, মাছের এসব অংশ আগে হোটেল থেকে ফ্রি আনা যেত। কিন্তু এখন সব অংশই কেজি দরে কিনে আনতে হয়। পরে বাছাই করে রপ্তানিকারকদের কাছে বিক্রি করি।

পটুয়াখালী, খেপুপাড়া, কক্সবাজার ও টেকনাফের বিভিন্ন আড়ত থেকে মাছের পাশাপাশি হাঙ্গরের লেজ-ডানা-চামড়া সংগ্রহ করা হয়। আর খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন আড়ত থেকে চিংড়ি মাছের মাথা ও মাছের খোসা এবং কাঁকড়ার খোলস সংগ্রহ করা হয়।

মাছের উচ্ছিষ্ট অংশ রপ্তানিকারক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দেশের বাইরে ব্যাপক চাহিদা থাকায় আমি এসব সংগ্রহ করে রপ্তানি করছি। তবে এসব পণ্য অপ্রচলিত হওয়ায় বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। পুঁজি কম, ব্যবসাও কম তাই নিজেরাই মাঠপর্যায় থেকে এগুলো সংগ্রহ করি। তারপর প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি করছি।’

তিনি জানান, বিভিন্ন দেশ থেকে চাহিদাপত্র আসার পর সে অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়। তবে এসব পণ্য প্রক্রিয়াকরণ করার পরও গন্ধ হওয়ার কারণে পরিবহনে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, মাছের উচ্ছিষ্ট অংশগুলো অপ্রচলিত হওয়ায় রপ্তানি পণ্যের তালিকায় এখনও নাম ‍ওঠেনি। তবে এসব রপ্তানির ফলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব জানন, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য দিন দিন বাড়ছে। এসব অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানি উৎসাহিত করতে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা দেয়ার কথা ভাবছে সরকার।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন