এলএনজি এলো বাংলাদেশে

  25-04-2018 03:38AM

পিএনএস ডেস্ক:দেশে ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির প্রথম চালান নিয়ে বাংলাদেশে পৌছেছে বিশেষায়িত জাহাজ ‘এক্সিলেন্স’।

মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) বেলা দুইটায় মহেশখালীর মাতারবাড়ী উপকূল থেকে তিন কিলোমিটার দূরে জাহাজটি নোঙর করে।

সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে এই গ্যাস যুক্ত করা সম্ভব হবে জাতীয় গ্রিডে। প্রাথমিকভাবে এই গ্যাস চট্টগ্রাম এলাকার শিল্পপ্রতিষ্ঠান, সারকারখানা ও অর্থনৈতিক জোনগুলোতে দেয়া হবে। পর্যায়ক্রমে প্রাকৃতিক গ্যাসের সঙ্গে মিশ্রণ হয়ে সারা দেশে পৌঁছে যাবে এই গ্যাস।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, টেস্টিং পর্যায়ে জাতীয় গ্রিডে ১০০ এমএমসিএফডি (মিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস যুক্ত করা হবে। আসতে আসতে চাহিদা অনুযায়ী এটি বাড়িয়ে প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটে নিয়ে যাওয়া হবে।

মঙ্গলবার কাতার থেকে যে কার্গো ভ্যাসেলটি মহেশখালিতে পৌঁছায়। মহেশখালি থেকে প্রতিদিন ১০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করা হলে তা থেকে আগামী ২ মাস পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে। আর প্রতিদিন ৫০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করতে হলে প্রতি ৬ দিন অন্তর এ রকম একটি জাহাজ মহেশখালিতে নোঙর করাতে হবে। এই হিসাবে বছরে ৬০টি এ ধরনের কার্গো ভেসেল এলএনজি লাগবে।

জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মহেশখালির টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত পাইপলাইন নির্মাণের কাজ শেষ। এক্সিলারেটর এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেডের (ইইবিএল) মাধ্যমে বাস্তবায়িত ভাসমান টার্মিনাল থেকে এই গ্যাস গরম করে প্রাকৃতিক গ্যাসে রূপান্তরিত করে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হবে। কাতার ছাড়াও ওমান, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গেও জি-টু-জি ভিত্তিতে এবং স্পট মার্কেট থেকেও এলএনজি কেনার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

এক্সিলারেট এনার্জি ছাড়াও দেশীয় কোম্পানি সামিট এলএনজি টার্মিনাল কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের মাধ্যমে চলতি বছরের মধ্যে আরও ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে।

এছাড়া কুতুবদিয়া ও পায়রাতে আরও এক বা একাধিক স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানায় জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র।

কক্সবাজারের মহেশখালিতে ৫০০ এমএমসিএফডি ধারণক্ষমতার দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল বা ফ্লোটিং স্টোরেজ রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) স্থাপন করা হয়েছে। এর একটি স্থাপন করেছে এক্সিলারেট এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেড (ইইবিএল) ও অন্যটি স্থাপন করবে সামিট এলএনজি টার্মিনাল কোম্পানি (প্রাইভেট)। এলএনজি আমদানিতে কাতারের রাশগ্যাস কোম্পানি এবং সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, আগামী মে মাস থেকে ইইবিএলের টার্মিনাল থেকে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৭৫ এমটিপিএ এলএনজি আমদানি করে রি-গ্যাসিফিকেশনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আর সামিটের টার্মিনাল থেকে চলতি বছর শেষে ৩ দশমিক ৭৫ এমটিপিএ এলএনজি রি-গ্যাসিফিকেশন করা সম্ভব হবে। অর্থাৎ আগামী বছর নাগাদ এ দুটি টার্মিনাল থেকে সাড়ে ৭ এমটিপিএ এলএনজি আমদানি করে তা রি-গ্যাসিফিকেশনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, এলএনজি আমদানি ও রি-গ্যাসিফিকেশনের জন্য রিভলবিং ফান্ড হিসেবে ৮৪ কোটি ৪২ লাখ ডলার প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে এলএনজির এলসিতে ৩ কোটি ডলার, ল্যাটেন্ট হিট ক্যাপচার সিস্টেমের (এলএইচসিএস) জন্য ১ কোটি ৪২ লাখ ডলার এবং এলএনজি আমদানি ও পরিচালনার জন্য রিভলবিং ফান্ড হিসেবে এসবিএলসিসহ প্রয়োজন হবে আরও ৮০ কোটি ডলার।

বিইআরসি (বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন) সূত্রে জানা গেছে, ভবিষ্যতের জ্বালানি নিরাপত্তায় ২০১৫ সালে গঠন করা হয় জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল। এখন পর্যন্ত এ তহবিলে জমা হয়েছে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। এটি একটি রিভলবিং ফান্ড হিসেবে পরিচালিত হবে। এ তহবিলের অর্থ থেকে অর্জিত সুদ ও সারচার্জ তহবিলে জমা হবে। তহবিল পরিচালনায় জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে।

আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী, এলএনজিতে মিথেনের পরিমাণ ৮৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এছাড়া ইথেন ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ, প্রপেন ২ দশমিক ১৬ শতাংশ ও বিউটেন ১ দশমিক ১২ শতাংশ। আমদানিকৃত এলএনজি গ্যাসের মান নিশ্চিতকরণে তিনটি টিম কাজ করবে। এগুলো হলো ক্রেতা পেট্রোবাংলার পক্ষে একটি, বিক্রেতা রাশগ্যাসের পক্ষে একটি ও অন্যটি ক্রেতা-বিক্রেতার সমন্বয়ে একটি স্বাধীন কমিটি।

প্রসঙ্গত, প্রাকৃতিক গ্যাস সাধারণ চাপ ও তাপমাত্রায় গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে। শীতলীকরণ (রেফ্রিজারেশন) প্রযুক্তির মাধ্যমে তাপমাত্রা কমিয়ে মাইনাস ১৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনলে তা তরলে পরিণত হয়। এই তরল প্রাকৃতিক গ্যাসকেই বলা হয় এলএনজি। একটি জাহাজে দুই থেকে আড়াই হাজার মিলিয়ন বা ২০০ থেকে ২৫০ কোটি ঘনফুট এলএনজি আনা সম্ভব।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন