সব ব্যাংকে সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার ৯ আগস্ট থেকে কমতে পারে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা

  03-08-2018 11:21AM

পিএনএস ডেস্ক : আগামী ৯ আগস্ট থেকে সব ব্যাংক সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে ঋণ এবং ৬ শতাংশ সুদে আমানত নেওয়ার ঘোষণা কার্যকর করবে। এর আগেই সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো হবে। গতকাল অনুষ্ঠিত সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান ও এমডিদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের এক বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। রাজধানীর শেরেবাংলানগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান, ব্যাংক পরিচালকদের সংগঠন বিএবির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমানসহ সরকারি-বেসরকারি বেশিরভাগ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে গত ১ জুলাই থেকে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ এবং ৬ শতাংশ সুদে তিন মাস মেয়াদি আমানত নেওয়ার ঘোষণা দেয় ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবি। তবে বেশিরভাগ ব্যাংক তা কার্যকর করেনি। জানা গেছে, বৈঠকে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, সঞ্চয়পত্রের সুদহার না কমিয়ে ব্যাংকগুলোর ঋণ আমানতে ঘোষিত নতুন সুদহার কার্যকর কঠিন। ব্যাংকে আমানতের তুলনায় সঞ্চয়পত্রে প্রায় দ্বিগুণ সুদহার থাকলে আমানতকারীরা ব্যাংকে আসতে চাইবে না। এ সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামী ৮ আগস্ট সঞ্চয়পত্রে সুদহার কমানোর লক্ষ্যে একটি পর্যালোচনা বৈঠক করা হবে। তখন ব্যাংকগুলো ৯ আগস্ট থেকে ভোক্তা ঋণ, ক্রেডিট কার্ড ও অনিয়মিত ঋণ ছাড়া অন্য সব ক্ষেত্রে ৯ শতাংশ সুদ কার্যকরে সম্মত হয়। আর শুধু তিন মাস নয়; সব ধরনের আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, আমানতের সুদহার ৬ শতাংশের বেশি হবে না। ঋণ বিতরণ করতে হবে ৯ শতাংশ সুদে। ৯ আগস্টের পর কেউ না মানলে সাংবাদিকরা রিপোর্ট করতে পারেন। তিনি জানান, ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিট নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভোক্তা ঋণ ও ক্রেডিট কার্ডে ব্যাংকগুলোর আপত্তি রয়েছে। তিনি বলেন, দেশে কোনো

তারল্য সংকট নেই। বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে সরকারি সংস্থার আমানতের ৫০ শতাংশ রাখার সুযোগের ফলে তাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। কিছু ব্যাংক ইতিমধ্যে নতুন সুদহার কার্যকর করেছে। ৯ আগস্ট সবাই করবে। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্রের সুদহার পর্যালোচনায় আগামী ৮ আগস্ট বৈঠক করা হবে বলে তিনি জানান।

বর্তমানে সঞ্চয়পত্রের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ব্যাংক আমানতের সুদহার আরও কমার পরিপ্রেক্ষিতে সঞ্চয়পত্রে গ্রাহকদের আগ্রহ আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সুদহার কমাতে বেশ কিছুদিন ধরে ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানোর কথা বলা হচ্ছে। এ অবস্থায় সরকার সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো বিষয়ে পর্যালোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নিল।

সুদহার কমানোর কথা বলে সিআরআর ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ, রেপোর সুদহার কমানো, সরকারি সংস্থার আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখার সুযোগসহ বিভিন্ন সুবিধা নিয়েও কার্যকর করতে না পারায় নানা মহলে সমালোচনা রয়েছে।

সঞ্চয়পত্রের সুদহার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, সাধারণত সঞ্চয়পত্রের সুদহার মাঝেমধ্যে পর্যালোচনা করা হয়। কোনো সময় ২ বছর, ৩ বছর, আবার প্রতি বছরেও হতে পারে। বাজারের সুদহারের সঙ্গে সামঞ্জস্য না হলেই পর্যালোচনা করা হয়। এ নিয়ে আগামী ৮ আগস্টে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এবিবির চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির স্বার্থে এবিবিও ৯ শতাংশ সুদহার কার্যকর করতে চায়। বেশিরভাগ ব্যাংক ১ জুলাই থেকে ঘোষিত সুদহার কার্যকর করেছে। আর আমানত সুদহার কমানোর বিষয়টা অর্থমন্ত্রী দেখছেন। তিনি বলেন, সরকারি খাতের আড়াই লাখ কোটি টাকা আমানত আছে। এ আমানত পেলে ঋণের সুদ এমনিতেই কমে আসবে। বৈঠকে তা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন