প্রিমিয়ার ব্যাংকে লুটের ঘটনার কূলকিনারা মিলেনি, কর্তৃপক্ষের মুখে কুলুপ

  27-08-2018 05:38AM

পিএনএস ডেস্ক : রাজধানীর বাড্ডার লিংক রোডের প্রিমিয়ার ব্যাংকের শাখার ম্যানেজারকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে টাকা লুটের ঘটনার কোনো কূল কিনারা মিলছে না। ঘটনার একসপ্তাহ পরও সেই অস্ত্রধারীকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি, যিনি কিনা একাই গত সোমবার বিকেলে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ব্যাংকের ৯ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে একটি ভল্টের ভেতরে আটকে রেখে ক্যাশ থেকে ২৩ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে গেছেন। দিন-দুপুরে মাত্র একজন অস্ত্রধারী কীভাবে এই ঘটনা ঘটালো এ প্রশ্নেরও কোনো ‍কূল-কিনারাও করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

গত ২০ আগস্ট প্রিমিয়ার ব্যাংকের ওই শাখার ব্যবস্থাপক ফজলুল হককে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ২৩ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় এক অস্ত্রধারী। ঘটনায় পরদিন ২১ আগস্ট রাতে প্রিমিয়ার ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রাহাত আলম বাদী হয়ে অজ্ঞাত একজনকে আসামি করে বাড্ডা থানায় একটি মামলা (নম্বর-১৮) দায়ের করেন।

ব্যাংক কর্মকর্তাদের দাবি, ওই দুর্বৃত্ত শুধু টাকাই লুট করেননি, যাওয়ার সময় সঙ্গে করে সিসিটিভি ক্যামেরার ডিভিআরও (ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার) নিয়ে গেছেন বলে ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন।

তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তে এখনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। তবে সম্ভাব্য সার্বিক বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তদন্ত চলছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছে, সশস্ত্র অবস্থায় একা একজন বাধাহীনভাবে ব্যাংকে প্রবেশ; ম্যানেজারসহ অফিসে কর্মরতদের ভল্টের ভেতরে আটকে রাখা; তার আগে শাখা ব্যাংকটির ম্যানেজার ফজলুল হকের সামনের চেয়ারে বসে ৪৫ মিনিট লুটেরার অবস্থান; ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা ও গ্রাহকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত যে নিরাপত্তারক্ষী তাদের একজনের কাছেও অস্ত্র না থাকার বিষয়টি রহস্যজনক।

তদন্তে পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ওই ব্যাংকে ঘটনার দিন যারা কর্মরত ছিলেন তাদের মধ্যে কয়েকজন।

ব্যাংক কর্মকর্তাদের ভাষ্য, গত সোমবার বিকেল ৪টার দিকে একজন অস্ত্রধারী বাড্ডা লিংক রোডের গ/৮২ ও ৯০/১ ভবনের প্রিমিয়ার ব্যাংকের (শাখা) ভেতরে ঢুকে পড়েন।

এরপর সোজা তিনি ব্যাংক ম্যানেজার ফজলুল হকের কক্ষে যান। সেখানে ম্যানেজারকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভল্ট রুমে ঢুকতে বলেন।

সবাই ভল্ট রুমে ঢোকার পর অস্ত্রধারী ওই ব্যক্তি ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টার থেকে ২৩ লাখ টাকা নিয়ে চলে যান। যাওয়ার সময় তিনি ব্যাংকের ভেতর থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিআর খুলে সঙ্গে নিয়ে যান। তার হাতে অস্ত্র থাকায় ভয়ে কেউই কোনও প্রতিবাদ করতে পারেননি।

এরপর নিরাপত্তারক্ষী আলীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে অবশ্য তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ওই ব্যাংক ম্যানেজারসহ উপস্থিত সবাইকেই।

এ বিষয়ে বাড্ডা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে ব্যাংকের পক্ষ থেকে থানায় একটি মামলা হয়েছে। অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম চলছে। ঘটনাটি থানা পুলিশ ছাড়াও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য ইউনিটের সদস্যরাও তদন্ত করছেন।

তিনি জানান, ব্যাংকের সিসিটিভি ফুটেজ না পাওয়া গেলেও ওই ব্যাংক ভবনের আশেপাশের অন্যান্য ভবন ও সড়কের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। ঘটনার সময় ব্যাংকে উপস্থিত থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে অস্ত্রধারীর শারীরিক বর্ণনাও নেওয়া হয়েছে। এসব পর্যালোচনা করে অস্ত্রধারীকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় ব্যাংকের কারও সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আশরাফুল করিম জানান, সবকিছু পর্যালোচনা করে অস্ত্রধারীকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এই ঘটনায় এখনো কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটনার প্রকৃত রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন