ড. ইউনূসের পারিবারিক প্রতিষ্ঠানকে মওকুফকৃত ঋণ ফেরত দিতে হবে

  05-09-2018 07:59AM


পিএনএস ডেস্ক: ড. ইউনূসের পারিবারিক প্রতিষ্ঠানকে মওকুফকৃত ঋণ ফেরত দিতে হবে। তার পারিবারিক প্রতিষ্ঠান নামে পরিচিত ‘প্যাকেজেস কর্পোরেশনকে’ নব্বইয়ের দশকে ৮৯ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হয়। পরে ২০০৫ সালে সুদসহ এই ঋণের পুরো অর্থ মওকুফ করে দেয় গ্রামীণ ব্যাংক। সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, অবৈধভাবে এই অর্থ মওকুফ করা হয়েছে। তাই ঋণের এই অর্থ গ্রামীণ ব্যাংককে ফেরত দিতে হবে। বর্তমানে এ অর্থের পরিমাণ সুদাসলে এক কোটি ৩৭ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। তবে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে একাধিকবার জানানো হয়েছে, এ ঋণের বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। কিন্তু এ কথা মানতে নারাজ সরকার। এখন আবার নতুন করে বলা হয়েছে সরকারের উচিত হবে ঋণের অর্থ ফেরত পেতে গ্রামীণ ব্যাংককে নির্দেশনা দেয়া। এ বিষয়সহ গ্রামীণ ব্যাংকের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী আগামী ২০ সেপ্টেম্বর একটি সভা ডাকার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, এ ঋণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘আমানতকারীদের স্বার্থের পরিপন্থী না হলেও গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থায়নের গঠিত ‘স্পেশাল ভেঞ্চার ক্যাপটিল ফাউন্ডেশন (এসভিসিএফ) তহবিল হতে প্যাকেজেস কর্পোরেশনের অনুকূলে স্টাডিজ, ইনোভেশন, ডেভেলপমেন্ট এবং এক্সপেরিমেনশন (এসআইডিই) প্রকল্পের উদ্দেশ্যের বাইরে অবৈধভাবে ঋণ প্রদান করায় ব্যাংকের স্বার্থ ক্ষুণœ হয়েছে। তাই এসভিসিএফ তহবিল অদ্যাবধি গ্রামীণ ব্যাংকে বিদ্যমান থাকলে প্যাকেজেস কর্পোরেশনকে উক্ত ঋণের মওকুফকৃত আসল পরিশোধে উদ্যোগী হওয়ার ক্ষেত্রে গ্রামীণ ব্যাংক প্যাকেজেস কর্পোরেশনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করতে পারে। এ বিষয়ে সরকার গ্রামীণ ব্যাংকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান করতে পারে।’

২০১৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে কর্মরত থাকাকালে ওয়েজ আর্নারের সুবিধা গ্রহণ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এ প্রতিবেদনের আলোকে মন্ত্রিপরিষদ থেকে নেয়া সিদ্ধান্তের মধ্যে ছিলÑ ‘বিধিবহির্ভূতভাবে গ্রামীণ ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা, অবৈধভাবে সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহে তহবিল স্থানান্তর, বিনানুমতিতে বিদেশ সফর ও পুরস্কার-সম্মানি-রয়্যালটি গ্রহণ, অতিরিক্ত সময়ে দায়িত্ব পালনকালে বেতনভাতা ব্যতীত অন্যান্য সুবিধা গ্রহণ এবং স্বল্পসুদে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণ গ্রহণসহ যে সকল আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়ম হয়েছে সেগুলো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনবোধে আইন ও বিচার বিভাগের পরামর্শক্রমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
এসব সিদ্ধান্ত প্রতিপালন সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদকে অবহিত করার জন্যও বলা হয়। কিন্তু বেশ কয়েকটি বিষয়ে এখন পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদকে জানানো হয়নি বলে এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে বলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, ১৯৯০ সালের পর থেকে প্যাকেজেস কর্পোরেশনকে মূলধন ও চলতি ঋণ দিয়ে আসছিল গ্রামীণ ব্যাংক। তবে ২০০৫ সালের দিকে এসে ওই ঋণের সুদ ১৬ শতাংশ ও ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। এতে প্যাকেজেস কর্পোরেশনের কাছে পাওনা এক কোটি ৪৪ লাখ টাকার মধ্যে এক কোটি ৩৭ লাখ টাকাই মওকুফ হয়ে যায়। মওকুফ করা ওই অর্থের মধ্যে ৮৯ লাখ টাকা ঋণের আসল থেকে মাফ করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো তফসিলি ব্যাংক তার বিতরণ করা ঋণের আসল মওকুফ করতে পারে না, শুধু সুদ মওকুফ করতে পারে। তবে গ্রামীণ ব্যাংক অ-তফসিলি ব্যাংক হওয়ায় প্যাকেজেস কর্পোরেশনকে মওকুফ করা আসল অর্থ আদায়ের বিষয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের মতামত জানতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, অবৈধভাবে এই ঋণ দেয়ার গ্রামীণ ব্যাংকের স্বার্থ ক্ষুণœ হয়েছে। তাই গ্রামীণ ব্যাংকের উচিত ঋণের এ অর্থ আদায় করা।

জানা গেছে, ১৯৬১ সালে পাকিস্তান প্যাকেজেস কর্পোরেশন নামে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটির মালিক ছিলেন দুলা মিয়া সওদাগর (ড. ইউনূসের বাবা) ও তার ছেলেরা। ওই পরিবার এখনো প্রতিষ্ঠানটির মালিক। শেয়ারহোল্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এখনো আছেন। গ্রামীণ ব্যাংক ও প্যাকেজেস কর্পোরেশনের মধ্যে ১৫ বছরের জন্য ব্যবস্থাপনা এজেন্সি চুক্তিটি হয় ১৯৯০ সালের ১৭ জুন। ১৯৯৭ সালে প্যাকেজেস কর্পোরেশনের পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয় গ্রামীণ ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ সামগ্রীকে। সূত্র: নয়া দিগন্ত

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন