‘ঋণ খেলাপিরা নির্লজ্জ’

  28-09-2018 11:45AM


পিএনএস ডেস্ক: দেশের ঋণ খেলাপিদের মনোভাবে কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে এবার মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি ঋণ খেলাপিদের নির্লজ্জ হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, ঋণ খেলাপিদের মনোভাব এখনও চেঞ্জ হয়নি। এটা খুবই দুঃখজনক যে তারা ঋণ নিয়ে আর ফেরত দিতে চান না। তারা নির্লজ্জ।

সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের (আইবিএফবি) প্রেসিডেন্ট হুমায়ন রশীদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।

একটি ঘটনা কথা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, অনেক আগে একজন ঋণ খেলপিকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে তুমি ঋণ পরিশোধ করছেন না কেন? তখন তিনি বলেছিলেন ঋণ পেতে আমার অনেকগুলো জুতা ক্ষয় হয়েছে, এটা আমি আর পরিশোধ করবো না। এখনও এমন মনোভাবই রয়ে গেছে।

তিনি বলেন, আমি খেলাপি ঋণ কীভাবে আদায় করা যায় এ বিষয়ে একটা প্রতিবেদন তৈরি করছি। আগামী নভেম্বরে প্রতিবেদনটি তৈরি করা শেষ হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগের কর্মকর্তাদের সাহায্য নিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। ওই প্রবেদনে একটা বিষয় উল্লেখ থাকবে যে ১০ শতাংশ খেলাপি ঋণ হলেই অ্যাকশনে যেতে হবে। এই প্রতিবেদনটি আমার উত্তরসূরীদের দিয়ে যাব। উল্লেখ্য, বর্তমান অর্থমন্ত্রীর সময় দেশে খেলাপি ঋণের পরিমান বেড়েছে বেশি।

স্বাধীনতা বিরোধীর কোনও সন্তান শাস্তি পাক এটা কাম্য নয়
এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কোটা বাতিলের বিষয়ে আমার কিছু কথা হয়েছিল। তিনি কোটা বাতিলের পক্ষে শক্ত অবস্থানে আছেন। কাজেই কোটা বাতিল হবেই। এটা বাতিল করা কোনো চ্যালেঞ্জই নয়।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করেছিলাম অন্তত মেয়েদের জন্য কোটা থাকবে। কিন্তু কোটা বিরোধী এই যে আন্দোলন, সেখানে কোটা বাতিলের পক্ষে লোকজনের চিৎকার ছিল জোরালো। কাজেই কোটা বাতিল হবে। আমি মেয়েদের কোটা অপরিবর্তিত রাখার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তখন আমাকে বলেছিলেন, আমি আগে বাতিল করবো মেয়েদের কোটা। কারণ, এই কোটা বাতিলের পক্ষে তাদের চিৎকার ছিল সবচেয়ে জোরালো।’ এসময় স্বাধীনতা বিরোধীদের সন্তানদের নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতা বিরোধী একজন থাকতেই পারে। তার শাস্তিও হতে পারে। কিন্তু তার সন্তান কেন শাস্তি পাবে? কাজেই স্বাধীনতা বিরোধীর কোনও সন্তান শাস্তি পাক এটা কাম্য নয়।’

দেশের ৩৩ লাখ মানুষ এখন কর দেয়
দেশের ৩৩ লাখ মানুষ এখন কর দেয় বলে জানিয়েছেন, অর্থমন্ত্রী মুহিত। তিনি বলেন, এক সময় আমাদের দেশে করদাতার সংখ্যা ছিল ১৪ লাখ। আমরা এ সংখ্যা ২০ লাখে উন্নীত করার টার্গেট নিয়েছিলাম। কিন্তু তা ছাপিয়ে বাংলাদেশে এখন করদাতার সংখ্যা ৩৩ লাখ। তবে তা অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের কর দাতারা বয়সে তরুণ। বিশেষ করে যাদের বয়স ৪০ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে তারা করা দেয় বেশি। এটা একটা আশাব্যাঞ্জক বিষয়। তবে অন্যান্য দেশে আমাদের দেশের তুলনায় করদাতার সংখ্যা আরও বেশি।’

অনুষ্ঠানে আইবিএফবি প্রেসিডেন্ট অর্থমন্ত্রীকে ১১টি প্রস্তাব দেন।এর মধ্যে রয়েছে- করের পরিধি বাড়িয়ে ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত বিদ্যমান ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা এবং কর পরিশোধের প্রক্রিয়া সহজ করা, জমি নিবন্ধন-বিদ্যুৎ সংযোগ সহজে পাওয়া নিশ্চিত, ঋণ পাওয়া ও সহজে কর পরিশোধের প্রতিবন্ধকতা দূর করা, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের দক্ষতা বাড়ানো, বিদেশি জনবলের উপর নির্ভরতা কমানো, বিকল্প রফতানি খাত চিহ্নিত করে প্রণোদনার ব্যবস্থা করা, রফতানিমুখি শিল্পের উন্নয়নে গবেষণার ব্যবস্থা, সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচিকে আইবিএফবি সদস্যকে মনোনয়ন, বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় পরিচালক হিসেবে আইবিএফবি সদস্যকে মনোনয়ন দেওয়া।

বাংলা ফোনের জন্য সুপারিশ
অনুষ্ঠানে আইবিএফবি নেতা এবং বাংলাফোনের পরিচালক লুৎফুন্নেসা সৌদিয়া খান তার কোম্পানির আইএসপি লাইসেন্স ফেরত দেওয়ার দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়াই’ গত ১৯ সেপ্টেম্বর বাংলাফোনের আইএসপি লাইসেন্স বাতিল করেছে বিটিআরসি। এ বিষয়ে টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী ও বিটিআরসির সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দেন অর্থমন্ত্রী। বাংলা ফোনের আইএসপি লাইসেন্স বাতিল করার ক্ষেত্রে লাইসেন্সের শর্ত ভাঙাকে কারণ দেখিয়েছে বিটিআরসি।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানায়, ২০১৬ সালের অক্টোবরে লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়া, লাইসেন্সের শর্ত বহির্ভূতভাবে এনটিটিএন সেবা দেওয়া বন্ধ না করা, বকেয়া রাজস্ব পরিশোধ না করাসহ কমিশনের নির্দেশনা লঙ্ঘনের কারণে বাংলা ফোনের আইএসপি লাইসেন্স বাতিল করা হয়।

আইএসপি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বাংলা ফোনের লাইসেন্স বাতিলের পর প্রতিষ্ঠাটির যন্ত্রপাতি সিলগালা করে দেয় বিটিআরসি।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন