জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ হতে পারে : বিশ্বব্যাংক

  02-10-2018 09:32PM

পিএনএস ডেস্ক : চলতি অর্থবছরে (২০১৮–১৯) মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ বলে পূর্বাভাস দিয়েছে দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে এই প্রবৃদ্ধি হবে। মেগা প্রকল্পের কারণে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে। কিন্তু ব্যবসায় পরিবেশে উন্নতি না হওয়ায় বেসরকারি বিনিয়োগে তেমন উন্নতি হয়নি।

আজ মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে এই কথা বলা হয়েছে। এই প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।

মূল প্রবন্ধের ওপর বিশেষ আলোচক ছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান এবং বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। এ ছাড়া বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান।

বিশ্বব্যাংক বলছে, প্রবৃদ্ধিকে সংখ্যা দিয়ে না দেখে গুণগত মান দিয়ে দেখা উচিত। প্রবৃদ্ধির সুফল সাধারণ মানুষ পাচ্ছে কি না, তা দেখতে হবে।

বিশ্বব্যাংক মনে করে, সামষ্টিক অর্থনীতিকে চার ধরনের চাপ আছে। এগুলো হলো খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতির উল্লম্ফন, বিদেশি অর্থায়নের ঘাটতি, তারল্য সংকট এবং বাজেট ঘাটতির পরিমাণ বৃদ্ধি।

বিশ্বব্যাংক আরও বলেছে, বেসরকারি খাতে বিপুল বিনিয়োগ দরকার। বড় অবকাঠামোতে আরও সরকারি–বেসরকারি বিনিয়োগ করতে হবে। প্রবাসী আয় ও রপ্তানিতে আয় বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। রাজস্ব আদায় বৃদ্ধিতে নতুন ভ্যাট আইনটি বাস্তবায়ন করা জরুরি। বিদ্যুতের লোড ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে কার্যকর করতে পারলে বছরে ১৬৫ কোটি ডলারের সমপরিমাণ তেলের দাম সাশ্রয় করা সম্ভব।

প্রধান প্রধান রপ্তানি বাজারে সীমিত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় দাতাদের অর্থায়নের ওপর জোর দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। আর্থিক খাতে সুশাসন বিশেষ করে খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি আরও উন্নতি করার তাগিদ দিয়েছে এই সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংক বলছে, গত অর্থবছরে খেলাপি ঋণের হার ১০ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। মোট খেলাপি ঋণের ৪৮ শতাংশই রাষ্ট্র মালিকানাধীন ছয় ব্যাংকের। ৪০টি বেসরকারি ব্যাংকের আছে ৪৪ শতাংশ খেলাপি ঋণ।

জাতীয় নির্বাচন অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান বলেন, সব দেশই নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি খুবই ভালো। কিন্তু এটি সংখ্যা দিয়ে বিবেচনা না করে, মান দিয়ে বিবেচনা করা উচিত।

মূল প্রবন্ধ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, প্রবৃদ্ধিতে দুটি বড় চিন্তার বিষয় আছে। একটি হলো, এই প্রবৃদ্ধি টেকসই হবে কি না। অন্যটি হলো প্রবৃদ্ধির সুবিধা সবাই পাচ্ছে কি না। অর্থনীতিতে রূপান্তর আনা দরকার। কেননা বাংলাদেশে এখনো ৩ কোটি ৯০ লাখ লোক দরিদ্র। তাদের মধ্যে ১ কোটি ৯০ লাখ অতি দরিদ্র।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকারি হিসাবে ৮ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। কিন্তু অনেক দুর্বলতা আছে। এই দুর্বলতা নিয়ে এই প্রবৃদ্ধি টেকসই করা কঠিন। বেসরকারি বিনিয়োগ স্থবির হয়ে আছে। আগে রপ্তানিনির্ভর প্রবৃদ্ধি ছিল। এখন অভ্যন্তরীণ চাহিদানির্ভর প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, প্রবৃদ্ধির বিতর্ককে সংখ্যার বাইরে নিয়ে যেতে হবে। বিতর্ক হওয়া উচিত গুণগত মানসম্পন্ন প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে হবে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রমে রাজনৈতিক সুশাসনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে হবে।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন