বাকৃবি গবেষকদের ভাগনা (বাটা)’র মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন ও জাত উন্নয়নে সফলতা

  03-10-2018 05:37PM

পিএনএস, ময়মনসিংহ প্রতিনিধি : বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক লাইন ব্রিডিং কৌশলের মাধ্যমে দেশীয় সুস্বাদু ভাগনা (বাটা)মাছের পোনা উৎপাদন ও জাত উন্নয়নে সফলতা পেয়েছেন। কৃষি গবেষণা কাউন্সিল ও ন্যাশনাল অ্যাগ্রো টেকনোলজি ফেইজ-২ এর আর্থিক সহায়তায় দীর্ঘ তিন বছরের গবেষণায় মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. একে শাকুর আহম্মদ ও অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ গোলাম কাদের খান গবেষণাটি সম্পন্ন করে এ সফলতা অর্জন করেন।

বুধবার (০৩ অক্টোবর)সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষদীয় চেম্বারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ সময় বলা হয়,গবেষণায় পুরুষ মাছকে অনেক নারী মাছের সঙ্গে প্রজনন ঘটানো হয়। লাইন ব্রিডিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে বিভিন্ন স্টকের মধ্য থেকে উচ্চ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ভাগনা (বাটা) মাছ আবিষ্কার করে পরবর্তী জেনারেশনে বংশধরদের মধ্যে তাদের জিনগত অবদান বাড়ানো যায়, যা ভাগনা (বাটা) মাছের জাত উন্নয়নে সহায়ক।

লাইন ব্রিডিং এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে একটি মাছকে তার বংশধরদের সঙ্গে ক্রস করানো হয়। ঐতিহ্যগতভাবে একটি পুরুষ মাছকে অনেক নারী মাছের সঙ্গে প্রজনন ঘটানো হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন লাইনের মধ্যে প্রজনন ঘটিয়ে প্রজাতির মধ্যে জিনগত বৈচিত্র্যতা রক্ষা করা যায়। ভাগনা মাছের জাত উন্নয়নে লাইন ব্রিডিং একটি অতিপ্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপুর্ণ কৌশল।

ভাগনা মাছের বৈজ্ঞানিক নাম ল্যাবে আরিজা, হ্যামিলটন ১৮০৭(Labeo ariza, Hamilton 1807)। ছোট কার্পজাতীয় মাছগুলোর মধ্যে ভাগনা একটি অন্যতম জনপ্রিয় মাছ। এটি বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। তবে বাংলাদেশের আত্রাই, যমুনা, কংস ও ব্রহ্মপুত্র নদ সহ বিভিন্ন নদীতে এ মাছটি পাওয়া যায়। ভাগনা (বাটা)মাছ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভাংগন বাটা, ভাগনা, ভাংগন, ভাগনা বাটা এমন নানা নামে পরিচিত।

এ মাছ আকারে ৩০ সেমি ও ওজনে প্রায় ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। এরা পুকুরের তলার খাদক। কম বয়সে এরা জুওপ্ল্যাংটন এবং বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সব খাবারই খায়। বর্তমান মাছটির বাজারমূল্য ৫০০ টাকা কেজি। ভাগনা মাছ উচ্চ পুষ্টিগুণসম্পন্ন। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট রয়েছে। খেতে অনেক সুস্বাদু হওয়ায় অতীতকাল থেকেই বাংলার মানুষের কাছে ভাগনা মাছ একটি স্বাদের মাছ হিসেবে পরিচিত।বর্তমান সময়ে প্রাাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে ভাগনা মাছের প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক উৎস থেকে অধিক পরিমাণে আহরণ, বাসস্থান ধ্বংস এবং ইকোলজিক্যাল পরিবর্তনের কারণে এ মাছটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।

এই গবেষণায় বাংলাদেশের তিনটি নদী আত্রাই (দিনাজপুর), কংস (ময়মনসিংহ) এবং যমুনা (সিরাজগঞ্জ) থেকে প্রাকৃতিক ভাগনা মাছের পোনা জেলেদের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। গবেষণায় থেকে দেখা গেছে, ভাগনা মাছ ৬০ দিন চাষের পর মাত্র ৩ গ্রাম ওজন লাভ করে। ভাগনার গ্রোথ প্যাটার্ন খুব ধীর প্রকৃতির। প্রাকৃতিক উৎসের ভাগনা মাছের গ্রোথ বদ্ধ উৎসের মাছের চেয়ে ভালো। নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে তাদের লালন পালন করে গোনাডাল ম্যাচুরেশনকে ত্বরান্বিত করা হয়। এর পর লাইন ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে ভাগনা মাছের উচ্চ গুণাগুণসম্পন্ন পোনা উৎপাদন করা হয়।

গবেষণায় ৬টি লাইন তৈরি করা হয়, এর মধ্যে লাইন ৪ (কংস ও আত্রাই)-এর থাকা মাছ গুলোর দৈর্ঘ্য ও ওজন সবচেয়ে বেশি পাওযা যায়। বর্তমানে লাইন-৪ থেকেই উন্নতজাতের মা মাছ তৈরি করা হচ্ছে।

প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. একে শাকুর আহম্মদ বলেন, লাইন ব্রিডিং কৌশলের ভাগনা মাছের পোনা উৎপাদন এটি বাংলাদেশে প্রথম। এই পদ্ধতির মাধ্যমে ভাগনা মাছকে সংরক্ষণ ও বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে হলে উচ্চ গুণসমম্পন্ন পোনা উৎপাদনের কোনো বিকল্প নেই।

দেশে আমিষের চাহিদা পূরণ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে এ মাছটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ভবিষ্যৎতে অধিকসংখ্যক পোনা উৎপাদন করে দেশের উন্মুক্ত জলাশয় বিশেষ করে হাওরাঞ্চলে ছাড়ার পরিকল্পনা আছে। এ ছাড়া এই চলমান গবেষণা সম্পন্ন হলে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন মৎস্য হ্যাচারিতে এ মাছ পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে আরও জানান তিনি।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন