হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে দিয়েছে সিপিডি, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটেরাদের আর কত ছাড়?

  09-12-2018 02:35PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : রাষ্ট্রের অর্থ লুটের মচ্চব চলছিল দীর্ঘকাল। হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে দিয়ে তার একটা পরিসংখ্যান দেশবাসীর সামনে উপস্থাপন করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। অর্থের শ্রাদ্ধ কীভাবে ঘটেছে, চোখে আঙুল দিয়ে খাতওয়ারি তা দেখিয়ে দিয়েছে সংস্থাটি।

৮ ডিসেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলে ‘দেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ে আমাদের করণীয় কী’ শীর্ষক এক সেমিনারের মূল প্রবন্ধে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটের হিসাব তুলে ধলা হয়। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, গত ১০ বছরে প্রতারণার মাধ্যমে ব্যাংকিং খাত থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে ২২ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। হিসাবটা যে কারো চোখ কপালে উঠার উপক্রম হবে। অথচ এ কাজটা করা হয়েছে একরকম প্রকাশ্যে। আর যারা এসব করেছে, তাদের কজন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় জাতিকে জ্ঞান দিচ্ছে। লজ্জায় লুকানোর বদলে তারা আশকারা পেয়ে হম্বিতম্বি করছে!

প্রবন্ধে খাকওয়ারি বলা হয়, জনতা ব্যাংক থেকে ১১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা, সোনালী ব্যাংক থেকে ৩ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংক থেকে ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, সোনালী, জনতা, এনসিসি, মার্কেন্টাইল ও ঢাকা ব্যাংক ৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, প্রাইম, যুমনা, শাহজালাল ও প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে ১ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা, এবি ব্যাংক ১৬৫ কোটি টাকা, এনআরবি কমার্শিয়াল ৭০১ কোটি টাকা, ফারমার্স ব্যাংক ৫০০ কোটি এবং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৬৭৯ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।

১৯৯৬ সালের পর হাল আমলে শেয়ার বাজার লুট হয়। যার ফলে অসংখ্য ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী পথে বসে। তদন্তপূর্বক নামকাওয়াস্তে পাঁচজনকে দায়ী করা হলেও এর মূল হোতারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। ফলে সুযোগসন্ধানীরা সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ব্যাংক সেক্টরকে টার্গেট করে।আর অবাধ লুটের ক্ষেত্রে কতটা প্রসারিত হয়, তার নমুনা তো সিপিডির প্রবন্ধে আছে।

আইনের মাধ্যমে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাংক মালিকদের সুরক্ষা দেয়া হচ্ছে। সাম্প্রতিক ব্যাংক কোম্পানি আইনের পরিবর্তন তার নিকৃষ্ট উদাহরণ। এতে আমানতকারীদের পুরো ঝুঁকিতে ফেলে দেয়া হয়েছে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। ঝানু অর্থনীতিবিদদের মতে, এতে ‘নিয়ন্ত্রকরা এখন নিয়ন্ত্রিত’ হচ্ছেন। ফলে আমানতকারীদের ঝুঁকির আশঙ্কা আরো বাড়ছে।

সোনালী ব্যাংক দিয়ে যার শুরু পদ্মার অন্তরালের কারিগররা সুরক্ষিত থাকায় এটি ভাইরাসে পরিণত হয়। ফলে কালক্রমে বেসিক ব্যাংক, জনতা, এনসিসি, পূবালী, মার্কেন্টাইল, ঢাকা ব্যাংক, প্রাইম, যুমনা, শাহজালাল ও প্রিমিয়ার, এবি এনআরবি কমার্শিয়াল হয়ে ফারমার্স ব্যাংকে গিয়ে ঠেকে। বাদ যায়নি বাংলাদেশ ব্যাংকও।

ব্যাংক খাতের লুটপাট এতটা সীমা ছাড়িয়ে যায যে, রাষ্ট্রীয় কোষাগারও আর নিরাপদ থাকল না। বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা চলে যায় ভীন দেশের জুয়ার আসরে!আমাদের ব্যাংকিং খাত কতটা অনিরাপদ, এর বড় অকাট্য প্রমাণ বাংলাদেশ ব্যাংকের ৬৭৯ কোটি টাকা হাওয়া হয়ে যাওয়া। এর সঙ্গে যুক্তদের আইনের আওতায় না এনে ইঁদুর-বিড়াল খেলা চলছে।

সোনালী ব্যাংকের সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা হলমার্কের মাধ্যমে লোপাটের পর ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদসহ প্রকৃত দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে এ খাতে নৈরাজ্য এতটা বাসা বাঁধ না। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, রাজনৈতিক তদবিরের কারণে মূল হোতাদের ধরা যাচ্ছে না। রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটেরা অধরা থাকা কারো কাম্য নয়। রাষ্ট্রের অর্থ লুটেরাদের বড় অংশটি চিহ্নিত। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের দুদক আন্তরিক হলে তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় এবং বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো কঠিন কাজ নয়।

লেখক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন