ছাগল পালন বাড়ছে সারা দেশে

  22-01-2019 09:09AM


পিএনএস ডেস্ক: দেশে ছাগল পালনের হার বেড়ে চলেছে। বাড়তি আয়ের পথ হিসেবে শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত মানুষের মধ্যে এ ক্ষেত্রে এক ধরনের সাড়া পড়েছে। জানা গেছে, বগুড়া ও ঝিনাইদহে বিশেষ জাতের ছাগলের কদরও তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে বগুড়া থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক আবদুর রহমান টুলু ও ঝিনাইদহ প্রতিনিধি শেখ রুহুল আমিন অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। বগুড়া : আলো দেখছেন আলোর পথের পরিশ্রমীরা। ভালো আয় ও বেকারত্ব দূর করতে গ্রামীণ ও শহুরে যুবক-যুবতীরা ছাগল লালন-পালন করছেন। ছাগল পালন করে তারা নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নে এগিয়ে চলেছেন। বগুড়া জেলায় প্রায় ৫ হাজার যুবক-যুবতী ছাগলের খামার করে পরিবারের আয় বাড়িয়ে সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন। বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসসূত্রে জানা গেছে, বগুড়ার ১২টি উপজেলায় কমবেশি ছাগল লালন-পালনের খামার গড়ে উঠেছে। জেলায় ব্যবসায়িকভাবে ৫ সহস্রাধিক খামার রয়েছে। জেলার ১০০-এর বেশি হাটে প্রতি সপ্তাহে ছাগল কেনাবেচা হয়। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ব্যাপারীরা এগুলো নিয়ে যান। বগুড়ায় দেশি জাত ‘ব্ল্যাক বেঙ্গল গোট’ বেশি লালন-পালন হয়। এর সঙ্গে আছে ‘যমুনা পাড়ি’ বা ‘রামছাগল’। ব্ল্যাক বেঙ্গল গোটের দুধ, মাংস ও চামড়া খুব ভালো বলে পরিচিত। ফলে বাজারে এই ছাগলের চামড়ার চাহিদাই রয়েছে। এর দুধও পুষ্টিমানে ভরপুর।

বগুড়া সদরের এরুলিয়া এলাকার দি আরেফা মৎস্য খামার ও ছাগল পালন কেন্দ্রের পরিচালক রাজা মিয়া জানান, তিনি বাণিজ্যিকভাবে ছাগলের খামার গড়েছেন। তার খামারে ৬০টি ছাগল রয়েছে। তিনি খাসি, পাঁঠা ও ছাগীগুলো ওজন অনুযায়ী দাম করে বিক্রি করেন। খামারের ছাগল বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোরবানির হাটে বিক্রি হয়। ছাগলগুলোকে তিনি সকালে ভুসি, দুপুরে নেপিয়ার কাঁচা ঘাস, বিকালে আবারও ছোলা-ভুসি বা মটর-ভুসি দেন। পাঁঠার ওজন বাড়াতে ভাত ও ভাতের ফেনও দেওয়া হয়। রাজা মিয়া আরও বলেন, মাছের খামারের জন্য পুকুরের চারপাশ দিয়ে তিনি ছাগলের জন্য নেপিয়ার ঘাস চাষ করেন। সারা বছর এ ঘাস দিয়ে ছাগলের খামারের সিংহভাগ খাবারের জোগান দেন। একটি পরিপূর্ণ ছাগল পালন বাবদ তার খরচ হয় ৫-৬ হাজার টাকা। এ ছাগল তিনি বিক্রি করেন ১০-১২ হাজার টাকায়।

বগুড়ার ধুনট উপজেলার পারধুনট এলাকার বিধবা মর্জিনা বেগম জানান, তার আয়ের আর কোনো পথ নেই। তাই ছাগল পালন করে সংসার চালান। সময় পেলে কৃষিকাজও করেন। মাংস ব্যবসায়ীদের কাছে এক বছর থেকে ১৪ মাস বয়সী ছাগল বিক্রি করেন।

ধুনট উপজেলার আরকাটিয়া গুচ্ছগ্রামের দিনমজুর মাসুদ রানার স্ত্রী পাপিয়া খাতুন (২৫) জানান, স্বামী যা রোজগার করেন তা দিয়ে সংসার ভালো করে চলত না। কয়েক বছর আগে তিনি ধুনট উপজেলা পল্লী উন্নয়ন বোর্ড অফিস থেকে স্বল্প সুদে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ছাগল পালন শুরু করেন। গত বছর ঋণ পরিশোধ করার পরও তার খামারে ৪টি ছাগল রয়েছে। তিনি বলেন, এ বছর যদি বেশি টাকা ঋণ পাওয়া যায় তাহলে ছাগলের খামারটি বড় করবেন এবং গরু লালন-পালন করবেন।

বগুড়া সদরের বানদিঘি পূর্বপাড়ার ছাগলের খামারি আলহাজ আবদুুল হান্নান জানান, তিনি প্রথমে শখের বসে ছাগলের খামার গড়েন। প্রথম দিকে কোরবানির হাটে বড় বড় ছাগল বিক্রি করেন। গত কোরবানির হাটে দুটি খাসি বিক্রি করেছেন ৫২ হাজার টাকায়। আগামী কোরবানির হাটেও বেশ কিছু ছাগল বিক্রি করবেন। তিনি জানান, একটি পরিপূর্ণ ছাগল হতে ১৪ মাস লাগে। এ ১৪ মাস ঠিকমতো লালন-পালন করলে খাসির ওজন দাঁড়াবে ১৬ থেকে ১৭ কেজি। বিক্রি হবে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকায়। তিনি বলেন, ছাগল পালনে কোনো লোকসান নেই। রান্নার কাজের সবজির ছালবাকল, নষ্ট হয়ে যাওয়া ভাত, লতাপাতা, ভুসি খাইয়েও ছাগল পালন করা যায়। ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল বেশি পালন হয়। এ জাতের তেমন কোনো রোগবালাই নেই। এ ছাগলগুলোর চামড়া ও দুধের পুষ্টিমান ভালো।

বগুড়া সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সেলিম হোসেন শেখ জানান, বগুড়ায় প্রধানত দুটি জাতের ছাগল লালন-পালন করা হয়- ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ও রামছাগল বা যমুনা পাড় জাতের। এ দুটি জাতের মধ্যে সব দিক দিয়ে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের চাহিদা বেশি। জেলায় মাংসের জন্য ছাগল আসে গ্রামীণ জনপদ থেকে। জেলায় ১০০-এর মতো হাট বসে বিভিন্ন এলাকায়। এসব হাটে প্রচুর ছাগলের আমদানি হচ্ছে। এ ছাগল দিয়ে জেলার চাহিদা পূরণ হওয়ার পর ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জের চাহিদা পূরণ করা হয়। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার জানান, ছাগল লালন-পালন করে জেলায় অনেক বেকার যুবক-যুবতী সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন। জেলায় ৫ সহস্রাধিক ছাগলের খামার রয়েছে।

ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ জেলায় ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। গ্রামগঞ্জে অনেক জায়গায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এ জাতের ছাগল পালন করা হচ্ছে। বেশি বংশ বৃদ্ধির ফলে জেলার মাংসের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাইরের জেলাগুলোর মাংসের জোগানও দেওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলের মান উন্নয়ন ও প্রজননের জন্য ১৯৯৬ সালে সদর উপজেলার গোপিনাথপুর গ্রামে ৫ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করা হয় সরকারি ছাগল উন্নয়ন উপকেন্দ্র। এরপরই জেলায় শুরু হয় বাণিজ্যিকভাবে ছাগল পালন। প্রজনন ঘটানোর এই কেন্দ্রে প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ছাগল নিয়ে আসা হয়। এ অঞ্চলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এ জাতের ছাগল বেশ ভূমিকা রাখছে। তা ছাড়া ছাগলের জাতগুলো গ্রামগঞ্জের অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে গরিব ও খেটে খাওয়া মানুষ অল্প পুঁজি দিয়ে ছাগল কিনে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছলতা আনছে।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার শৈলমারী বাজারে সবিতা রানী এ জাতের ছাগল পালন করে এরই মধ্যে স্বাবলম্বী হয়েছেন। সদরের হলিধানী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর, কোলা, কাশিপুর, নাটাবেড়ে, কাতলামারী গ্রামের প্রায় প্রতি বাড়িতে এ জাতের ছাগল পালন করা হচ্ছে। জেলা সদর, হরিণাকু ু, মহেশপুর, কোটচাঁদপুর, কালীগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামে গরিব ও খেটে খাওয়া মানুষ অর্থনৈতিক মুক্তির পথ হিসেবে এ জাতের ছাগল পালন করছেন।

ঝিনাইদহ সরকারি ছাগল উন্নয়ন উপকেন্দ্রের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বর্তমানে নানা সংকট থাকলেও সরকারি এ উপকেন্দ্রটির মাধ্যমে এ অঞ্চলে ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জাত বৃদ্ধির জন্য স্বল্পমূল্যে নিয়ে প্রতি বছরের মতো এবারও কেন্দ্রটি থেকে ২২টি প্রজনন বৃদ্ধির ছাগল (পাঁঠা), ৩১টি ছাগী ও ৩০টি ছোটবড় ছাগল গরিব মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. হাফিজুর রহমান জানান, ছয়টি উপজেলায় ৩ শতাধিক খামারে ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল পালনের সঙ্গে জড়িত আছে লক্ষাধিক পরিবার। এ অঞ্চলে আগের তুলনায় ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল বৃদ্ধি পেয়েছে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন