ব্যাংকে ঋণ নবায়নে জালিয়াতি

  19-03-2019 08:39AM


পিএনএস ডেস্ক: ব্যাংকের ঋণ নবায়নে জালিয়াতির পরিমাণ বেড়ে চলছে। এ ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঋণ নবায়ন করার পর ওই ঋণ পর পর তিন মাস পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে সরাসরি মন্দ ঋণে পরিণত হয়;কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নীতিমালা বেশির ভাগ ব্যাংক মানছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকটি পরিদর্শন দল বিভিন্ন ব্যাংকে পরিদর্শন করে এ চিত্র পেয়েছে। তাদের মতে, ব্যাংকগুলো নানা ফন্দিফিকির করে ঋণ নবায়নের নির্ধারিত সময়সীমা বাড়িয়ে দেখাচ্ছে। এর ফলে অনেকটা কৃত্রিমভাবে কমছে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পরিদর্শন টিমের প্রধান গতকাল জানিয়েছেন, বেশির ভাগ ব্যাংক ঋণ নবায়নে জালিয়াতির আশ্রয় নিচ্ছে। এতে ঋণ নিয়ে একধরনের লুকোচুরি করা হচ্ছে; কিন্তু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ব্যাংক হওয়ায় শুধু প্রতিবেদন দেয়ার মধ্যে তারা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছেন। ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছেন না। অপর একটি পরিদর্শন টিমের প্রধান জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে জারি করা ঋণ পুনঃতফসিল সংক্রান্ত ১৫ নম্বর মাস্টার সার্কুলারের নির্দেশনা ব্যাংকগুলো মানছে না। খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হলে ওই ঋণের কিস্তি পর পর তিন মাস পরিশোধ না করলে সরাসরি ওই ঋণ মন্দ ঋণ পরিণত হওয়ার কথা; কিন্তু বেশির ভাগ ব্যাংক এ নির্দেশনা পরিপালনের ক্ষেত্রে জালিয়াতির আশ্রয় নিচ্ছে। পরিশোধের সময় বিভিন্ন লেজারে ভিন্ন ভিন্ন সময় দেখানো হচ্ছে। পরে তদন্ত করে দেখা যায়, ঋণ পরিশোধের তারিখ ঘষামাজা করে ভিন্ন ভিন্ন সময় দেখানো হচ্ছে। এতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রকৃত খেলাপি ঋণ আড়াল করা হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক পরিদর্শন করে তা শনাক্ত করা হলেই কেবল ওই ঋণ মন্দ ঋণে স্থানান্তর করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, খেলাপি ঋণ কম করে দেখানোর ফলে এক দিকে সাধারণ শেয়ার হোল্ডাররা প্রতারিত হচ্ছেন, অপর দিকে ব্যাংকের সম্পদের গুণগত মান কমে যাচ্ছে। কেননা, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, খেলাপি ঋণ বেড়ে গেলে ব্যাংকের সরাসরি মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। খেলাপি ঋণের শ্রেণিভেদে ব্যাংকগুলোর ২৫ শতাংশ থেকে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হয়। কোনো ঋণ নিম্ন মানের হলে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয় ২৫ শতাংশ হারে, আর ৬ মাস পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে ওই ঋণ সন্দেহজনক ঋণে পরিণত হয় এবং এ ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। আর কোনো ঋণ ৯ মাস পরিশোধ না করা হলে ওই ঋণ মন্দ ঋণে পরিণত হয়। আর এ ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হয়। আর এ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয় ব্যাংকের মুনাফা থেকে। অপর দিকে মন্দ ঋণের বিপরীতে অর্জিত সুদ ব্যাংকগুলো আয় হিসেবে দেখাতে পারে না। এ ঋণের সুদ স্থগিত করে রাখা হয়। এ কারণে যে ব্যাংকের যত বেশি খেলাপি ঋণ, তত বেশি প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। আর বেশি প্রভিশন সংরক্ষণ করতে গিয়ে ব্যাংকের মুনাফা কমে যায়। অপর দিকে খেলাপি ঋণ বেশি হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ব্যাংকগুলোর বার্ষিক মানদণ্ডে খারাপ অবস্থানে চলে যায়। মূলত এটা ঠেকাতেই ব্যাংকগুলো জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে খেলাপি ঋণ কম দেখাচ্ছে।

অপর দিকে খেলাপি ঋণ কম দেখিয়ে ব্যাংকের মুনাফা ফুলে ফাঁপিয়ে বাড়ানো হচ্ছে। খেলাপি ঋণ দেখালে যেখানে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হতো, নিয়মিত দেখানোর ফলে ওই ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংক্ষণ করতে হচ্ছে না। এভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকগুলো তাদের প্রকৃত মুনাফা বেশি দেখিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তাদের আর্থিক বিবরণী দাখিল করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রকৃত হিসাব করলে অন্তত দুই ডজন ব্যাংকের নিট মুনাফা ঋণাত্মক হয়ে পড়ত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ তদন্তে এসব তথ্য উঠে আসায় ব্যাংকগুলো এর মধ্যে নানা সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে অভিয়োগ উঠেছে।

এ দিকে ঋণ নবায়ন করেই খেলাপি ঋণ কম দেখানো হচ্ছে না, এর বাইরে বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের হার আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়ে গেছে। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তাও নেয়া হচ্ছে। অনেকেই উচ্চ আদালতে গিয়ে নিজেকে খেলাপি ঋণের তালিকা থেকে নাম স্থগিত করে নিচ্ছেন। আবার ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের সহায়তায় ভুয়া ঋণ সৃষ্টি করে খেলাপি ঋণ পরিশোধ দেখাচ্ছেন। আর ঋণ অবলোপনের সংস্কৃতি তো আছেই। সব মিলে খেলাপি ঋণ কমানোর নানা কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। সূত্র: নয়া দিগন্ত

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন