পেঁয়াজের দাম ২৪ ঘণ্টায় কমার ঘোষণার বাস্তবায়ন নেই, দেড়সপ্তাহ পরেও দাম বাড়ছে!

  28-09-2019 05:59PM

পিএনএস ডেস্ক:পেঁয়াজ সংকট কাটাতে সরকার মিয়ানমার ও অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি শুরু করে। একই সাথে টিসিবি খুচরা ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে। এতে করে কয়েক দিনের মধ্যেই ১০ টাকা কমে ৭০ টাকা কেজিতে চলে এসেছিল পেঁয়াজ; কিন্তু সপ্তাহের ব্যবধানে ফের ১০ টাকা করে বেড়ে গেছে নিত্যপণ্যটির দাম। আবার বিক্রি হতে দেখা গেছে ৮০ টাকা কেজি দরে।

সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাম কমার কথা বললেও গেল দেড় সপ্তাহেও তার প্রভাব পড়েনি বাজারে। বাজারে পেঁয়াজের দাম কমার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না।

একমাস আগেও প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, মাত্র এক মাসের ব্যবধানে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ১০০ শতাংশ ও দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ। হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষেরা।

শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কাওরান বাজার, শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা, মালিবাগ, মালিবাগ রেলগেট, নয়াবাজারসহ বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকা ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

দেশে চাহিদার চেয়ে পেঁয়াজের উৎপাদন অনেক কম। পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৪ লাখ টন, বিপরীতে দেশে উৎপাদন হয় মাত্র ১২ থেকে ১৩ লাখ টন। বাকি ১০ থেকে ১১ লাখ টন পেঁয়াজ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়, যার বেশিরভাগই আসে ভারত থেকে। সম্প্রতি ভারতের মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক ও মধ্য প্রদেশের মতো পেঁয়াজের বড় সরবরাহকারী রাজ্যগুলোতে বন্যার কারণে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে, সেখানকার সরকার পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। বর্তমানে প্রতি টন পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য দাঁড়িয়েছে ৮৫০ ডলার। দুই মাস আগেও ব্যবসায়ীরা প্রতি টন পেঁয়াজ ৩৫০ থেকে ৪০০ ডলারে আমদানি করতেন। আর, এক বছর আগে পেঁয়াজের আমদানি মূল্য ছিল মাত্র ১৫০ থেকে ২০০ ডলার। ভারত হঠাৎ রপ্তানিমূল্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেওয়ায় এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের বাজারে।

ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় খবর শুনেই গেল সপ্তাহে হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম এক লাফে প্রায় দ্বিগুণ হয়। ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরের দেশি পেঁয়াজের দাম ঠেকে এক লাফে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম দাঁড়ায় ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। পেঁয়াজের এমন দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)।

খোলাবাজারে বিক্রির পাশাপাশি পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে করণীয় ঠিক করতে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর, পেঁয়াজের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বৈঠকের পর নতুন বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন এবং বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সদস্য আবু রায়হান আল বিরুনি ঘোষণা দেন- ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমে যাবে। তবে গেল ১০ দিনেও তার প্রতিফলন ঘটেনি। এখনও দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে। আর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়।

ব্যবসায়ীরা বলেন, টিসিবি ৪৫ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করলেও তা বাজার চাহিদার তুলনায় নগণ্য। ঢাকার খুব সামান্যসংখ্যক মানুষই তা পাচ্ছেন। তাই টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রির প্রভাব বাজারে পড়ছে না। পেঁয়াজের দাম কমাতে হলে বাজারে সরবরাহ বাড়াতে হবে। বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়াতে আমদানি বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলেই মনে করেন তারা।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন