ব্যাংকের কৃত্রিম মুনাফায় কমছে মূলধনের মান

  06-11-2020 11:22AM


পিএনএস ডেস্ক: ঋণ আদায় হচ্ছে না। কিন্তু এসব ঋণখেলাপিও করা যাচ্ছে না। তবে বিদ্যমান ঋণ থেকে মুনাফা হিসেবে নেয়া হচ্ছে। এতে প্রকৃত আয় না বাড়লেও কৃত্রিমভাবে বেড়ে যাচ্ছে ব্যাংকের মুনাফা। কৃত্রিম মুনাফা বেড়ে যাওয়ায় এক দিকে এ মুনাফার ওপর সরকারের কর পরিশোধ করতে হবে।

এতে জনগণের সম্পদ সরকারের কোষাগারে চলে যাবে। অপর দিকে কৃত্রিম মুনাফার ওপর ভিত্তি করে লভ্যাংশ বণ্টন হলে ব্যাংকের মূলধনের গুণগত মান কমে যাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, গত জানুয়ারি থেকে ঋণখেলাপি নীতিমালায় ছাড় দেয়া হচ্ছে। প্রথমে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত, পরে সময় বাড়িয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করা হয়।

এ সময় থেকে ছোট বড় প্রায় সবধরনের ঋণগ্রহীতাই ঋণ পরিশোধ করছেন না। এমনিতেই ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোনো ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে বিভিন্নভাবে ছাড় দেয়ায় ব্যাংক ঋণ পরিশোধে এক ধরনের অনীহা বিরাজ করছে বড় বড় রাঘব বোয়াল ঋণখেলাপিদের মধ্যে, এর ওপর ঋণ পরিশোধে ছাড় দেয়ায় আরো সুযোগ পেয়ে যান ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপিরা। ফলে এত দিন ব্যাংকের কোনো ঋণ আদায় হচ্ছে না বললেই চলে। বিপরীতে আমানত প্রত্যাহারের চাপ বেড়ে গেছে।

এতে ব্যাংকের আয় শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। ব্যাংকাররা আশা করেছিলেন, সেপ্টেম্বরের পরে তারা ঋণ আদায়ে বড় ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। কিন্তু আরো তিন মাসের সময় দেয়ায় পুরো বছরই কোনো কোনো ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধ না করেই পার পেয়ে যাচ্ছেন। এতে ব্যাংকগুলো পড়ে গেছে চরম বেকায়দায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রচলিত নীতিমালা অনুযায়ী ঋণখেলাপি হলে কেবল ওই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঋণের ওপর অর্জিত সুদ আয় খাতে নেয়া যায় না। তা স্থগিত করে রাখা হয়। কিন্তু ঋণ খেলাপি না হলে ওই ঋণের ওপর অর্জিত সুদ আয় খাতে নিতে ব্যাংকের কোনো বাধা থাকে না।

ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দেয়ায় দীর্ঘ এক বছর এমনও ঋণ আছে যা আদায় হয়নি। ঋণ আদায় না হলে ওই ঋণ খেলাপি হওয়ার কথা। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার পর তা খেলাপি করা যাচ্ছে না। এতে ব্যাংকের ঋণ আদায় না হলেও সংশ্লিষ্টরা ঋণখেলাপি না হওয়ায় ঋণের ওপর অর্জিত সুদ ব্যাংকের আয় খাতে নিতে কোনো বাধা থাকছে না। এভাবেই ঋণ আদায় না হলেও ব্যাংকের আয় কৃত্রিমভাবে বেড়ে যাচ্ছে। সঙ্কট দেখা দেবে এ কৃত্রিম আয় থেকে মুনাফা বণ্টন করলে।

এ দিকে ব্যাংক যে পরিমাণ মুনাফা ঘোষণা করবে তার ওপর নির্ধারিত হারে সরকারের করপোরেট ট্যাক্স পরিশোধ করতে হবে। বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকের মুনাফার ওপর সাড়ে ৩৭ শতাংশ করপোরেট ট্যাক্স পরিশোধ করতে হয়। কৃত্রিম মুনাফা বেড়ে গেলে এর ওপর সরকারকে সাড়ে ৩৭ শতাংশ কর পরিশোধ করতে হবে। এতে জনগণের সম্পদ সরকারের কোষাগারে চলে যাবে। অপর দিকে কৃত্রিম মুনাফার ওপর ভিত্তি করে লভ্যাংশ বণ্টন করা হলে ব্যাংক মূলধনের গুণগত মান কমে যাবে। এতে ভবিষ্যতে যেকোনো প্রকার ঝুঁকি মোকাবেলা করার সক্ষমতা কমে যাবে।

বেসরকারি খাতের কয়েকটি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী গতকাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, প্রায় সব খাতই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত বলা চলে একটানা ব্যবসা-বাণিজ্যসহ ব্যাংক লেনদেন সীমিত হয়ে পড়ে। এর পরেও ওষুধ কোম্পানিগুলোর এ সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো হয়েছে। একই সাথে আইটি খাতের ব্যবসাও সচল ছিল।

মে মাসের পর থেকে ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীদেরও ভালো ব্যবসা চলছে। এখন তো প্রায় সব কিছু স্বাভাবিকভাবে। কিন্তু গত জুনের পর ঢালাওভাবে ঋণ পরিশোধে শিথিলতা তিন মাস বাড়ানো হয়। অথচ ওষুধ, আইটি, ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীদের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা আগের চেয়েও ভালো ছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সুযোগ দেয়ায় যারা ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম ছিলেন তারাও ঋণ পরিশোধ করছেন না। এতে ব্যাংকের ঋণ সুদে-আসলে বেড়ে যাচ্ছে।

জানুয়ারিতে ওই মাসসহ ১০ থেকে ১২টি ঋণের কিস্তি একসাথে পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু বেশির ভাগ ব্যবসায়ীই তা পারবেন না। এতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ হঠাৎ করেই কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। এতে শুধু ব্যাংকিং খাতেই বিপর্যয় নেমে আসবে না, পুরো অর্থনীতিতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সূত্র: নয়া দিগন্ত

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন