বাংলাদেশের জিডিপি: বিশ্ব ব্যাংকের পূর্বাভাস

  06-01-2021 10:03PM

পিএনএস ডেস্ক : বাংলাদেশের জিডিপি ২০২০-২১ অর্থ বছরে হ্রাস পেয়ে ১.৬ শতাংশে নেমে আসবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। মঙ্গলবার প্রকাশিত 'গ্লোবাল ইকোনোমিক প্রসপেক্ট' রিপোর্টে এ তথ্য দেয় সংস্থাটি। এতে বলা হয়েছে, মূলত করোনাভাইরাস মহামারির কারণেই বাংলাদেশের অর্থনীতি এই ক্ষতির শিকার হয়েছে। রিপোর্টে বিশ্বব্যাংক অনুমান করেছে, মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্থ বাংলাদেশের ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি ছিল ২ শতাংশ। মহামারি নিয়ন্ত্রণে লকডাউন ঘোষণা করায় এই ক্ষতি হয় বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি এমন সব ক্ষেত্রের ওপর নির্ভর করে যাতে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা সম্ভব নয়। ফলে লকডাউন চলাকালীন এ ধরণের কর্মকান্ড বাধাগ্রস্থ হওয়ায় তার প্রভাব অর্থনীতিতে পড়েছে।

রিপোর্টে বাংলাদেশে রেমিটেন্স বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক জানিয়েছে, সরকারের উদ্যোগ, প্রবাসী তহবিল গঠন এবং প্রবাসী শ্রমিকদের দেশে ফিরে আসার কারণেই উল্লেখযোগ্য পরিমানে রেমিটেন্স বেড়েছে।

এই রেমিটেন্সের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী হয়েছে। সামনের বছরগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনীতি কেমন হবে তার পূর্বাভাস দিতে গিয়ে বিশ্ব ব্যাংক জানিয়েছে, দেশের অর্থনীতি তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর নির্ভর করে। তবে এটিসহ রপ্তানি হওয়া অন্য ক্ষেত্রগুলোতেও সামনের বছরগুলোতে দুর্বল থাকবে বাংলাদেশ। এরপরেও অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে শুরু করবে বাংলাদেশ, এমনটাই জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি বাড়তে শুরু করবে এবং ৩.৪ শতাংশে পৌঁছাবে।
এদিকে রিপোর্টে দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক চিত্রও ছিল হতাশাজনক। বিশ্ব ব্যাংকের রিপোর্টে বলা হয়েছে ২০২০-২১ অর্থবছরে এ অঞ্চলের জিডিপি হবে ৩.৩ শতাংশ। পরবর্তী অর্থবছরে তা বেড়ে হতে পারে ৩.৮ শতাংশ। অর্থনীতির এই পতনের জন্য করোনাভাইরাস মহামারিকেই দায়ি করেছে সংস্থাটি। বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ এর কারণে আরো দীর্ঘ সময় ধরে ভুগতে হতে পারে দক্ষিণ এশিয়াকে। কমে যেতে পারে বিনিয়োগ ও উৎপাদন। মহামারির কারণে এই অঞ্চলে বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন করে দরিদ্র হয়েছে প্রায় ১০ কোটি মানুষ যাদের প্রতিদিনকার গড় আয় ১.৯ ডলারের কম।

তবে এ অঞ্চলে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ভারত। বিশ্ব ব্যাংক ধারণা করছে, দেশটির ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপি হ্রাস পাবে ৯.৬ শতাংশ। ভারতে মানুষের ব্যায়ের পরিমাণ কমছে এবং বেসরকারি বিনিয়োগও হ্রাস পেয়েছে। অর্থনীতির এ দুরাবস্থায় সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে শহুরে এলাকার মানুষ। তবে পরবর্তী অর্থবছরেই কিছুটা ঘুরে দাঁড়াবে ভারত। বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশটির জিডিপি হবে ৫.৪ শতাংশ। পাকিস্তানের ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি ১.৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল। তবে ২০২০-২১ অর্থবছরে ০.৫ শতাংশ বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ শতাংশ জিডিপি অর্জন করতে পারে দীর্ঘদিন ধরে ধুকতে থাকা অর্থনীতির দেশটি। এছাড়া, ভুটান, নেপাল ও মালদ্বীপের ক্ষেত্রেও বলা হয়েছে ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপি হ্রাস পাবে। পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল অর্থনীতি হওয়ায় মহামারিতে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এসব দেশ।

বিশ্ব ব্যাংকের রিপোর্টে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, ২০২১ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতি ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। তারপরেও তা মহামারির পূর্বেকার অবস্থার তুলনায় ৫ শতাংশ কম থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি বৃদ্ধি পাবে ৩.৫ শতাংশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে বৃদ্ধি পাবে ৩.৬ শতাংশ।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন