অঞ্চলভেদে নির্ধারণ হচ্ছে পাটের বস্তা ব্যবহারের পরিমাণ

  08-10-2015 11:16PM


পিএনএস : ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি- এই ছয় ধরনের পণ্য পরিবহন ও সংরক্ষণে পাটের ব্যাগ বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে তা কার্যকর করার নির্দেশ রয়েছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তে একমত পোষণ করেছেন ব্যবসায়ীরা। চাল উৎপাদনকারী এলাকায় প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ কোটি পাটের লেমিনেটিং করা চালের বস্তা প্রয়োজন। তবে কোন এলাকায় কী পরিমাণ বস্তা প্রয়োজন তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। তাই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে অঞ্চলভিত্তিক বস্তার পরিমাণ নির্ধারণ করবে অটো মেজর এ্যান্ড হাস্কিং মিলস ওনার্স এ্সোসিয়েশন।

রাজধানীর মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনে বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত গঠিত কমিটির এক জরুরী সভায় ব্যবসায়ী সংগঠনটি এ কথা জানায়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ। এ সময় বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি), বাংলাদেশ জুট মিলস এসোসিয়েশনের (বিএজএমএ) প্রতিনিধিসহ ধান-চাল প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণনকারী ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সভায় সারা দেশে পাটের বস্তার সাপ্লাই লাইন কীভাবে ঠিক রাখা যাবে, কী পরিমাণ বস্তা মজুদ রয়েছে, মজুদ রাখা বস্তা সরবরাহ কত দিন চলবে, নতুন বস্তা উৎপাদনের প্রস্তুতি, বস্তার মূল্য নির্ধারণ, বস্তার আকার নির্ধারণ, এলাকাভিত্তিক কী পরিমাণ বস্তা প্রয়োজন তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অটো মেজর এ্যান্ড হাস্কিং মিলস ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের তৈরি করা তালিকাটি আগামী ১০ অক্টোবর এফবিসিসিআইয়ের কাছে জমা দেওয়া হবে। এ ছাড়া সকল পক্ষ সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে একমত রয়েছে। তবে বস্তার দাম নির্ধারণে ভর্তুকির বিষয়টি উঠে আসে আলোচনায়। আর সারা দেশে ধান-চাল উৎপাদনের দিক থেকে নওগাঁ, দিনাজপুর ও কুষ্টিয়াকে চিহ্নিত করা হয়।

সভায় ব্যবসায়ীদের পক্ষে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ ৫০ কেজি ধারণক্ষমতার প্রতি বস্তার মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেন। তবে বিজিএমসির পক্ষ থেকে প্রতি বস্তার মূল্য ৮৪ টাকা দাবি করা হয়। সরকার বাকি টাকা ভর্তুকি (৩৮ টাকা) দিলে প্রতি বস্তার মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণে আপত্তি নেই বলেও বিজিএমসির পক্ষ থেকে জানানো হয়। প্রতি বস্তার মূল্য নির্ধারণ ও ভর্তুকির বিষয়ে প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

এ বিষয়ে অটো মেজর এ্যান্ড হাস্কিং মিলস ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আব্দুর রশিদ পিএনএসকে বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী পাট ও পাটজাত পণ্যকে উৎসাহিত করতে ১ ডিসেম্বর থেকে সারাদেশে পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যাগের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হবে। এ সময়ের মধ্যে এ খাতের সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডোরদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসেছিলাম। বৈঠকে আমরা বস্তার ধারণ ও গুণগতমান নির্ধারণ করেছি। পাশাপাশি একটি ৫০ কেজি বস্তার মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করতে বলেছি। এ জন্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন বলেও জানানো হয়েরেছ।’

তিনি আরও বলেন, ‘সারা দেশে চাল উৎপাদনকারী জেলাগুলোতে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ কোটি বস্তার প্রয়োজন। আর কোন জেলাতে কী পরিমাণ বস্তার প্রয়োজন তা আলোচনা করে আগামী ১০ অক্টোবর এফবিসিসিআইয়ের কাছে জমা দেবে। সরকারের সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ীদের একমত রয়েছে বলেও বৈঠকে জানানো হয়।’

এদিকে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের পরিচালক (উৎপাদন ও পাট) কর্নেল (অব.) কে লেলিন কামাল পিএনএসকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রস্তাব এসেছে। ওই প্রস্তাবগুলো নিয়ে আমরা পর্যালোচনা করব। তারপর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, গত ৬ অক্টোবর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও সড়ক পরিবহন খাতে জড়িত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের বিরুদ্ধে ২৫ অক্টোবর থেকে সপ্তাহব্যাপী ‘সাঁড়াশি’ অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্তের একদিন পর ৭ অক্টোবর ব্যাসায়ীদের অনুরোধে ‘সাঁড়াশি’ অভিযানের তারিখ পেছানো হয়। আগামী ২৫ অক্টোবরের পরিবর্তে ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকরের সিদ্ধান্ত জানান বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। ওই একই দিনে পাটের বস্তার সাপ্লাই লাইন ঠিক রাখতে, বস্তার মূল্য নির্ধারণ, বস্তার আকার নির্ধারণ, কোন কোন এলাকায় কী পরিমাণ বস্তা প্রয়োজন তা ঠিক করতে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এ কমিটির প্রথম বৈঠক বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টায় এফবিসিসিআই ভবনে করার সিদ্ধান্ত জানান বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী।

বিশেষ করে ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০’ এবং ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার বিধিমালা, ২০১৩’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ ধরনের কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন