অর্থমন্ত্রীর এভাবে প্রস্থান কাম্য নয়

  10-10-2016 04:24PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : অবসরে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাংলাদেশি অনলাইন টেলিভিশন টিবিএন টুয়েন্টিফোরকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।অর্থ খাতের চরম বিশৃঙ্খল অবস্থায় তার অবসরকে ভালো চোখে দেখছেন না বিশ্লেষকরা।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থমন্ত্রীকে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতির পদ থেকে অবসরে যেতে পারলে খুশি হতেন। প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর এবার অবসরে যাওয়ার কথা নিজ থেকেই মিডিয়াকে জানান দিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
রাজনীতি থেকে কবে নাগাদ অবসরে যাবেন, সে বিষয়ে কিছু বলেননি অর্থমন্ত্রী। তিন সপ্তাহের সফরে তিনি এখনো দেশের বাইরে। কয়েকটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে সৌদি আরব, নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে গত ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ছাড়েন মুহিত। আগামী ১২ অক্টোবর তার দেশে ফেরার কথা।
ছাত্রজীবনে রাজনীতিতে জড়ানো মুহিত পরে পাকিস্তান আমলেই সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণও ছিল তার। ১৯৭১ সালে তিনি পাকিস্তানে ওয়াশিংটন দূতাবাসে ফার্স্ট সেক্রেটারি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করে চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। আর প্রবাসী বাংলাদেশি সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর মুহিত পরিকল্পনা কমিশনের সচিব হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৮১ সালে সরকারি চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে যান তিনি। ১৯৮২ থেকে ’৮৩ সালে এরশাদ সরকারের অর্থ উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পান মুহিত। এরপর বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় উচ্চপদে চাকরি করেন তিনি।
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে বিএনপি নেতা এম সাইফুর রহমানকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এর পর থেকেই বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি।তার সময়ে শেয়াবাজার লুট ও ব্যাংকিং সেক্টরে নৈরাজ্য মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সরকারি-বেসরকারি ১১ ব্যাংকের প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে।
সাত বছর ধরে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে মুহিতের বিরুদ্ধে বলার মতো কোনো অভিযোগই উঠেনি। অভিযোগ না উঠলেও তার সময়ে অর্থ খাতের বিশৃঙ্খলতার দায় তো তিনি এড়াতে পারেন না। যে দায়ে ব্যাংকিং সচিব ওএসডি, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পদ চলে গেছে; সেখানে তার পদটা আগেই চলে যাওয়া ছিল অধিক যুক্তিযু্ক্ত।অন্য দেশ হলে অর্থমন্ত্রী নিজেই পদত্যাগ করতেন বৈকি।
আবুল মাল আবদুল মুহিত অত্যন্ত ভাগ্যবান। তিনি বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ তিন আমলেই সরকারগুলোর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব দিচ্ছেন একান্ত কাছ থেকে। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ আর তার মধ্যে এই মিলটা বেশ।মওদুদ সাহেবও এই তিনটি দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে জনাব মহিত অনন্য।দেশের জন্য তার অবদান অসামান্য। এত কিছুর পরও তার সময়ে অর্থ খাতের নাজুক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, এটা অস্বীকারের উপায় নেই। অর্থ খাতের বেহাল দশায় দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পর্যন্ত আন্তর্জাতিক লুটেরা চক্রের টার্গেটে পরিণত হয়েছে।
বয়স হয়েছে, মুহিত সাহেবকে একসময় চলে যেতে হবে এটাই স্বাভাবিক।কিন্তু সে যাওয়া তার জন্য সুখকর হোক, এই সাধারণ চাওয়াটা তার শুভাকাঙ্ক্ষিদের।তিনি বিদায় নেয়ার আগে শেয়ারবাজার লুটেরা, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপসহ ব্যাংককে দেউলিয়া করে যারা তার সুনাম ও এতদিনের অর্জনকে ম্লান করতে চেয়েছে, সেই জাতীয় শত্রু লুটেরাদের মুখোশ উন্মুচন করা জরুরি।
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা ও কৃষি ব্যাংকে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে। এর বাইরে বেসরকারি ব্যাংক আইএফআইসি, প্রাইম, মার্কেন্টাইল, প্রিমিয়ার, বেসিক ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। গরিব দেশের টাকা নিয়ে এমন হরিলুট আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থমন্ত্রী থাকা অবস্থায় সংঘটিত হয়েছে।
অর্থ খাতের এই নৈরাজ্যের নিরসন না হওয়া পর্যন্ত জনাব মুহিত সাহেবকে চলে যাওয়াটা হবে দুঃখজনক। তিনি তখন যাবেন, যখন এই খাত বদনাম মুক্ত হবে। শৃঙ্খলা ফিরে আসবে অর্থ খাতে।চিহ্নিত ব্যাংক লুটেরাদের আইনের আওতায় এনে এই খাতের শৃঙ্খলা মজবুত ভিতের উপর দাঁড় করিয়ে তার প্রস্থানই হবে অধিক যুক্তযুক্ত।
শেষ বয়সে এসে অর্থ সেক্টরের পাহাড়সম ব্যর্থতার গ্লানি মাথায় নিয়ে জনাব মুহিত সাহেবের এভাবে প্রস্থান কাম্য হতে পারে না। এ জন্য দায়ীদের শায়েস্তা করে ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় অর্থ লুটের সাহস যেন কেউ না পায়, সে রকম ব্যবস্থা করে তবেই তার অবসরে যাওয়া সময়ের দাবি।
লেখক : সাধারণ সম্পাদক- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন
ই-মেইল : [email protected]


পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন