গরিবের স্যার মিন্টু

  25-10-2016 06:28AM


পিএনএস: মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গিলন্ড গ্রামের ঝাল-মুড়ি বিক্রেতা মোতালেব হোসেনের মেধাবী পুত্র সানি রহমান মিন্টুর ‘শিক্ষার আলো পাঠশালা’ই হচ্ছে এলাকার দরিদ্র ছেলেমেয়েদের শিক্ষালয়। অর্থের অভাবে প্রাইভেট পড়তে পারে না এমন সব গরিব ও দুস্থ কোমলমতি শিশুকে মিন্টু বিনামূল্যে লেখাপড়া শিখিয়ে প্রতিদিন স্কুলে পাঠান। ব্যতিক্রমী এই পাঠশালা মানিকগঞ্জের সর্বমহলে নজর কেড়েছে। এলাকাবাসী জানায়, ২০১১ সালে মিন্টু ও তারা কয়েক বন্ধু মিলে গ্রামের দরিদ্র শিশুদের জন্য বিনামূল্যে একটি পাঠশালা খুলেছিলেন।

এক সময় বন্ধুরা সবাই হাল ছেড়ে দিলে কিছু দিন পাঠশালাটি বন্ধ থাকে। কিন্তু হাল ছাড়েনি মিন্টু। ২০১৪ সালে নিজে একাই সকল বাধাবিপত্তি পেরিয়ে শিক্ষার আলো নামের এই পাঠশালাটির কার্যক্রম নতুন করে শুরু করেন। অর্থ কষ্টের কারণে প্রতিনিয়তই জীবন-সংগ্রামের সঙ্গে যুদ্ধ করে মিন্টু নিজেকে তৈরি করেছেন একজন আদর্শবান মানুষ হিসেবে। অর্থের অভাবে নিজে ভালো কোনো শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে না পারলেও তিনি কখনোই মনোবল হারাননি। তাই এলাকার হতদরিদ্র কোমলমতি কোনো ছেলেমেয়ে যাতে শিক্ষার আলো থেকে ঝরে পড়ে না যায় সেজন্যই নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেছেন পাঠশালাটি। গরিবের স্যার হিসেবে পরিচিতি সানি আলম মিন্টু বলেন, আমি খুবই হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান। বাবা ঝালমুড়ি বিক্রি করে আমাদের সংসার চালায়।

অর্থের অভাবে নিজে কখনো প্রাইভেট পড়তে পারিনি। সেই উপলব্ধি থেকে আমি শিক্ষার আলো পাঠশালাটি প্রতিষ্ঠা করেছি। যাতে এলাকার দরিদ্র ঘরের ছেলেমেয়েরা আমার পাঠশালা থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রাইমারি স্কুলে গিয়ে ভালোভাবে লেখাপড়া করতে পারে। অর্থের অভাবে যাতে কারো লেখাপড়া বন্ধ হয়ে না যায় তাই আমি নিজে প্রাইভেট পড়িয়ে যা রোজগার করছি তার প্রায় সবটুকুই এই পাঠশালার দরিদ্র শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ব্যয় করছি। আমার কাছে শিক্ষা নিতে কোনো ছাত্রছাত্রীকে একটি পয়সাও দিতে হয় না।

বরং খাতা ও কলমসহ যার যা প্রয়োজন তার সবটুকুই আমি বহন করে আসছি। শিক্ষাদানের পাশাপাশি আমি মাদকবিরোধী আলোচনা এবং বাল্যবিয়ে রোধে কাজ করে যাচ্ছি। মিন্টু আরো বলেন, একটি এনজিওর দোচালা ঘরের ভেতর বর্তমানে ৬৩ জন ছাত্রছাত্রীকে শিক্ষা দিতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। আমার কোনো চাওয়া নেই শুধু সরকারের কাছে একটাই আহ্বান পাঠশালাটি টিকিয়ে রাখতে একটু জায়গা আর একটা ঘরের প্রয়োজন। ভোরের সূর্য উঠার পর পরই মিন্টুর পাঠশালায় চলে শিক্ষা কার্যক্রম। বর্তমানে সেখানে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া ৬৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ভোর পৌনে ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত ৫ম শ্রেণি, ৭টা থেকে সোয়া ৮টা পর্যন্ত তৃতীয় শ্রেণি ও চতুর্থ শ্রেণির ছেলেমেয়েদের শিক্ষাদান করা হয়।

এর পর শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেয়। মিন্টুর পাঠশালায় বিনামূল্যে শিক্ষা গ্রহণ করার ফলে ওই শিক্ষার্থীদের বাইরে কোনো ধরনের প্রাইভেট পড়তে হয় না। মিন্টুর এই পাঠশালায় যে সকল ছেলেমেয়ে শিক্ষা গ্রহণ করছে তারা বেশির ভাগই হতদরিদ্র পরিবারের। যারা তাদের সন্তানদের শিক্ষক রেখে প্রাইভেট পরাতে পারে না তারাই এই পাঠশালার সদস্য। পাঠশালায় পড়তে আসা চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আরিফা আক্তার জানালেন, বাবা টেম্পো চালায়।

তাই লেখাপড়ার জন্য বাইরে কোনো স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তে পারি না। সেজন্য মিন্টু স্যারের পাঠশালায় পড়ে প্রতিদিন স্কুলে যাই। মিন্টু স্যার সব সময় যত্নসহকারে আমাদের পড়ান। স্থানীয় চেয়ারম্যান রাকিব হোসেন ফরহাদ বলেন, মিন্টু এলাকার গরিব ছেলেমেয়েদের যেভাবে বিনামূল্যে শিক্ষাদান করে আসছে এটা প্রশংসনীয়। শুধু চেয়ারম্যান হিসেবেই নয় একজন সচেতন মানুষ হিসেবে মিন্টুর পাঠশালা চালাতে যদি কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হয় সেটা আমি করবো।



পিএনএস/বাকিবিল্লাহ্

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন