বিনামূল্যের ২৯ লাখ বই নষ্ট হচ্ছে

  28-10-2016 06:40AM

পিএনএস: উপজেলা, জেলা শিক্ষা অফিসের সমন্বয়ের অভাবে বিনামূল্যের ২৯ লাখ বেশি বই নষ্ট হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় ৪ টনের বেশি বই পড়ার অনুপযোগী হওয়ায় ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাকি বই শিক্ষক, স্কুলের লাইব্রেরিসহ বিভিন্ন জায়গায় বিতরণ করা হবে। গতকাল শিক্ষামন্ত্রণালয়ের এ সংত্রুান্ত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। সেখানে সারা দেশে ২৯ লাখ বেশি বই উদ্বৃত্ত আছে বলে জানানো হয়। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) চৌধুরী মুফাদ আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, গত তিন বছর সমন্বয়হীনতার কারণে এই বিশাল সংখ্যক বই জমা হয়ে গেছে। এই সমন্বয়হীনতা দূর করতে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি সমন্বয় কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই কমিটিগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে জাতীয় শিক্ষাত্রুম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। আগামী শিক্ষাবছরে উপজেলা থেকে যতজন শিক্ষার্থী প্রাথমিক সমাপনীতে পাস করবে ঠিক ততজনের চাহিদা জেলায় পাঠাবে। একই ক্যাটাগরি চাহিদা পাঠাবে জেলা শিক্ষা অফিসও। জানা গেছে, সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেয়া চাহিদা অনুযায়ী এনসিটিবি বই ছাপায়। এরসঙ্গে আরো অতিরিক্ত ৫% বাফার স্টক হিসেবে ছাপানো হয়। নিয়ম অনুযায়ী, বছর শেষে অবিতরণকৃত বইগুলো পরের বছরের সঙ্গে সমন্বয় করে তালিকা দেয়ার কথা। কিন্তু গত তিন শিক্ষাবর্ষে এনসিটিবি’র সঙ্গে উপজেলা, জেলা শিক্ষা অফিসে সমন্বয়হীনতার কারণে অবিতরণযোগ্য বইগুলো পরবর্তী বছরের সঙ্গে সমন্বয় হয়নি। এতে প্রায় সারা দেশে ২৯ লাখের বেশি বই গুদামে জমা হয়। যার মধ্যে ৪ টনের বেশি বিতরণের অযোগ্য। এই বইগুলো এখন সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, ১০ টাকা কেজি দরে বিত্রিু করা হবে। এতে সরকারের ১৫ কোটি টাকার মতো গচ্চা যাবে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ থেকে ২০১৫ এ তিন শিক্ষাবর্ষের অবিতরণকৃত ও গুদামে নষ্ট বইয়ের তথ্য নিয়ে বৈঠকে বসেন ৯টি আঞ্চলিক উপ-পরিচালকরা। সেখানে তাদের ভর্ৎসনা করা হয়। স্বল্প সময়ের মধ্যে মাঠপর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করে উপ-পরিচালকরা জানান, এখানে সমন্বয়হীনতার জন্য তারা দায়ী না। এটার জন্য প্রধান দায়ী এনসিটিবি। উপজেলা, জেলা এবং এনসিটিবি’র মধ্যে সমন্বয়হীতা এর প্রধান কারণ বলেও উল্লেখ করেন তারা। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মুদ্রণশিল্প সমিতির চেয়ারম্যান তোফায়েল খান বলেন, প্রতি বছর বাফার স্টক হিসেবে ৫% বই অতিরিক্ত ছাপা হয়। এই বইগুলো বন্যাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুযোর্গকালীন সময়ের জন্য। কিন্তু বছর শেষে অবিতরণ বইগুলো পরবর্তী বছরের সঙ্গে সমন্বয় করার কথা ছিল। এক্ষেত্রে উপজেলা বা জেলা শিক্ষা অফিস সেটি করেনি এজন্য ২৯ লাখ বই গুদামে রয়ে গেছে। তিনি বলেন, এটির মূল কারণ সমন্বয়হীনতা এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের উদাসীনতা। এ ব্যাপারে মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) প্রফেসর এলিয়াস হোসেন বলেন, পড়ার অনুপযোগী বইগুলো বিক্রি এবং বাকিগুলো শিক্ষক, লাইব্রেরি, পাঠাগারে দেয়া হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের সমন্বয়হীনতা আর না ঘটে সেজন্য কমিটি গঠন হয়েছে। তারা সার্বিক বিষয়গুলো দেখভাল করবে। আর এনসিটিবি পুরো বিষয়টি সমন্বয় করবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেয়া চাহিদা অনুযায়ী এনসিটিবি বই ছাপিয়ে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বিতরণ করে থাকে। কিন্তু মাঠপর্যায় থেকে সঠিক তথ্য না দেয়ার কারণে সারা দেশের সরকারি গুদামে অসংখ্য বই পড়ে আছে। এর মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে অনেক বই। সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব অবহেলার কারণে সরকারকে গত তিন বছরে অন্তত ১৫ কোটি টাকা গচ্চা দিতে হবে। এজন্য করণীয় নির্ধারণ করতে গতকাল বৈঠকে বসে শিক্ষামন্ত্রণালয়। এনসিটিবি সূত্র জানায়, ৬ষ্ঠ,৭ম, ৮ম শ্রেণিতে ১৪টি বই পাঠ্যসূচি রয়েছে। এ ছাড়া নবম-দশম শ্রেণির বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শাখা বিভাগে ১৮ ও মানবিক বিভাগে ১৭টি বই রয়েছে। শিক্ষাবর্ষের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ১৭৬ দিন নানা ছুটিতে ক্লাস বন্ধ থাকে। বাকি ১৯৮ দিন ক্লাস হয়। প্রতি বিষয়ের ৫০ মিনিট ক্লাস ঘণ্টা হিসেবে বছরে একটি বিষয়ে ৯ হাজার ৪৫০ মিনিট ক্লাসে পড়ানো হয়। এ হিসেব করে পাঠ্যসূচির ৯টি বইয়ের গড় ওজন দেড় কেজি ধরে ছাপানো হয়। দেড় কেজি ওজনের বই ছাপাতে সরকারের খরচ হয় দুই শত ৭৭ টাকা ৯০ পয়সা। যার বাজার মূল্য এক হাজার ৫০ টাকা। কিন্তু সরকারি বিধান অনুযায়ী অবিতরণকৃত ও নষ্ট বই প্রকাশ্যে নিলামে বিক্রির সর্ব নিম্ন দর কেজি প্রতি ১০ টাকা।

অর্থাৎ অবিতরণকৃত ও নষ্ট বই নিলামে বিক্রি করলে সরকারের লোকসান কেজি প্রতি দুই শত ৬২ টাকা ৯০ পয়সা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, গত তিন শিক্ষা বর্ষের বই সঠিক ভাবে বিরতরণ করা হয়নি। অনেক জেলা ও উপজেলার সরকারি গুদামে অস্বাভাবিক বই মজুদ রয়েছে। আবার অনেক স্থানে গুদাম শূন্য রয়েছে। এ তথ্য পেয়ে টনক নড়ে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের। এরপর গত রোববার শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) চৌধুরী মুফাদ আহমেদ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে উপস্থিত থাকা এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষার্থীর সঠিক তথ্য না দেয়ায় সরকারি অর্থে ছাপানো বাড়তি বই গুদামে নষ্ট হচ্ছে। পরিবহনের সময় বই নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় চাহিদার অতিরিক্ত দুই শতাংশ বাড়তি বই সরবরাহ করা হয়। কিন্তু বই বিক্রি করে দেয়ার কারণে অনেক গুদাম খালি রয়েছে বলে বিষয়গুলো প্রাধান্য দিয়ে বৈঠকে আলোচনা করা হয়। মাউশির ঢাকা অঞ্চলের উপ-পরিচালক গৌর চন্দ্র মণ্ডল জানান, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন প্রয়োজনীয় কাজ শুরু করবো আমরা। প্রসঙ্গত, ২০১৩ শিক্ষাবর্ষে তিন কোটি ৬৮ লাখ ৮৬ হাজার ১৭২ জন শিক্ষার্থীর জন্য ২৬ কোটি ১৮ লাখ ৯ হাজার ১০৬টি, ২০১৪ সালে ৪ কোটি ৩৩ লাখ ৫৩ হাজার ২০১ জন শিক্ষার্থীর জন্য ৩১ কোটি ৭৭ লাখ ২৫ হাজার ৫২৬টি, ২০১৫ শিক্ষাবর্ষে ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৫২ হাজার ৩৭৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য ৩২ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯২৩টি নতুন বই ছাপায় এনসিটিবি।



পিএনএস/বাকিবিল্লাহ্

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন