পরীক্ষার খাতা দেখায় নৈরাজ্য

  23-11-2016 10:05AM


পিএনএস ডেস্ক: এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর প্রতিবছর সেই ফল পর্যালোচনার জন্য শিক্ষার্থীদের আবেদনের সংখ্যা বাড়ছে। ২০১৪ সালে আট সাধারণ বোর্ডসহ ১০ শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল পুনর্নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেছিল ৪৩ হাজার শিক্ষার্থী। গত বছর সে সংখ্যা ছিল এক লাখ ২৯ হাজার ৩০১ জন। এ বছর আবেদন করেছিল এক লাখ ৭২ হাজার ৬৫৮ শিক্ষার্থী।

পুনর্নিরীক্ষার আবেদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফল রদবদলের হারও বেড়েছে। ২০১৫ সালে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১০ শিক্ষা বোর্ডে ফল পরিবর্তন হয়েছিল দুই হাজার ৯১ শিক্ষার্থীর। এর মধ্যে অকৃতকার্য থেকে কৃতকার্য হয়েছে ৪০৪ জন, নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪৪১ জন। বাকিদের গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে। এ বছর ১০ বোর্ডে ফল পরিবর্তন হয়েছে চার হাজার ১৫২ জনের। এর মধ্যে অকৃতকার্য থেকে কৃতকার্য হয়েছে এক হাজার ৮৫২ জন, নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৮১১ জন। বাকিদের গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলছেন, ভালো পরীক্ষা দেওয়া সত্ত্বেও পরীক্ষকদের অবহেলা ও অদক্ষতায় শিক্ষার্থীরা যথাযথ ফল পাচ্ছে না। অনাকাঙ্ক্ষিত ফল বিপর্যয়ের শিকার হয়ে অনেক শিক্ষার্থী মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছে, এমনকি আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু যাঁদের কারণে এই বিপর্যয়, দায়ী সেই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে না। এতে অন্য পরীক্ষকরাও সতর্ক হচ্ছেন না। ফলে প্রতিবছর বাড়ছে ভুলের হার। সম্প্রতি আন্তশিক্ষা বোর্ডের তদন্তেও পরীক্ষকদের ভুলের বিষয়টি উঠে এসেছে।

আবার যেসব শিক্ষার্থী ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করছে তারাও শুভংকরের ফাঁকিতে পড়ছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মনে করছেন ফল পুনর্নিরীক্ষণের অর্থ নতুন করে খাতা দেখা। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। মূলত উত্তরপত্রের নম্বর যোগ ও বৃত্ত ভরাট ঠিক আছে কি না, তা দেখেই পুনর্নিরীক্ষণ শেষ করা হয়। মূল খাতায় হাতই দেওয়া হয় না।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, ফল পুনর্নিরীক্ষণে সাধারণত চারটি দিক খেয়াল করা হয়—সব প্রশ্নের উত্তরে নম্বর সঠিকভাবে দেওয়া হয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক হয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিডার) শিটে তোলা হয়েছে কি না এবং নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটের বৃত্ত ভরাট ঠিক আছে কি না। তবে উত্তরপত্র পুনরায় মূল্যায়ন করা হয় না। অর্থাত্ কোনো শিক্ষার্থী কোনো প্রশ্নে নম্বর কম বা বেশি পাবে কি না, তা দেখা হয় না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নম্বর যোগ-বিয়োগের ভুলেই প্রতিবছর একেকটি পাবলিক পরীক্ষায় হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়। এ ক্ষেত্রে পুনরায় খাতা দেখলে আবেদনকারীদের বেশির ভাগেরই ফল পরিবর্তন হতো। পরীক্ষকদেরও আরো কয়েক গুণ ভুল ধরা পড়ত।

বরিশাল বোর্ডের এবারের এসএসসির ফল বিশ্লেষণ করলে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের অভিযোগের সত্যতা মেলে। গত ১১ মে এসএসসির ফল প্রকাশিত হয়। তাতে বরিশাল বোর্ডে হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে অনেক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়। তাদের মধ্যে সর্বজিত্ ঘোষ হৃদয় নামে এক পরীক্ষার্থী ছিল। ঘোষিত ফল অনুযায়ী, বরিশাল মহানগরের উদয়ন স্কুল থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া হৃদয় চার বিষয়ে জিপিএ ৫ পেলেও হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছিল। বিপর্যয় সামলাতে না পেরে সেদিন দুপুরে আত্মহত্যা করে সে। ঘটনার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বোর্ড কর্তৃপক্ষ ফল পুনর্মূল্যায়ন করে। তাতে দেখা যায়, ভুল বোর্ডেরই। ‘খ’ সেটের খাতা মূল্যায়ন হয়েছিল ‘গ’ সেট দিয়ে। ১৪ মে নতুন করে ফল ঘোষণা করে বরিশাল বোর্ড। পুনর্মূল্যায়নে হিন্দু ধর্মে জিপিএ ৫ পায় হৃদয়। এ ছাড়া রদবদল হয় এক হাজার ৯৯৪ জনের ফল।

ফল বিপর্যয়ের বিষয়টি তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি দুই পরীক্ষক বরিশাল মহানগরের ব্রজমোহন স্কুলের শিক্ষক জুরানচন্দ্র চক্রবর্তী ও বরগুনার বেতাগী উপজেলার বিবিচিনি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক বীরেন চক্রবর্তীর দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পায়। কমিটির সুপারিশ অনুসারে গত জুন থেকে তাদের এমপিও (বেতনের সরকারি অংশ) স্থগিত করা হয় এবং সব পরীক্ষার কার্যক্রম থেকে বাদ দেওয়ার কথা জানানো হয়। কিন্তু সম্প্রতি এমপিও ছাড়ের জন্য ওই দুই শিক্ষক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরে আবেদন করেছেন। বরিশাল বোর্ডের চেয়ারম্যান ওই ঘটনাকে শিক্ষকদের ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল’ আখ্যা দিয়ে বেতন ছাড়ের সুপারিশ করেছেন।

বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, ‘যে পরীক্ষকরা ভুল করেছেন, তাঁরা এখন ক্ষমা চান। কিন্তু এখানে তো আমাদের কিছু করার নেই। যারা শাস্তি দিয়েছে আমরা তাদের কাছে ওই দুই পরীক্ষকের আবেদন পাঠিয়ে দিয়েছি। তারাই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।’

এ বছর এসএসসির ফল প্রকাশের পর চট্টগ্রাম বোর্ডে গণিতের ফল নিয়ে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। পরে বোর্ড কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে বিক্ষোভের মুখে ১৯ মে পুনরায় ফল প্রকাশ করে। তাতে এক হাজার ১১৫ জন পরীক্ষার্থী গণিতে নতুন করে জিপিএ ৫ পায়। বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের কারিগরি ভুলের কারণেই ফলে সমস্যা হয়েছিল।

ঢাকা বোর্ডের অধীনে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় ময়মনসিংহের নান্দাইল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৮ জন রসায়নে অকৃতকার্য হয়। তাদের মধ্যে এমনও শিক্ষার্থী আছে, যে সাত বিষয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছে অথচ রসায়নে অকৃতকার্য হয়েছে। জানা যায়, এই স্কুলের পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল নান্দাইল পৌরসভার চণ্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। রসায়নে ওই কেন্দ্রের জন্য নির্ধারিত ছিল ‘ক’ সেট প্রশ্নপত্র। কিন্তু পরীক্ষা নেওয়া হয় ‘খ’ সেট দিয়ে। অথচ খাতা মূল্যায়ন করা হয়েছে ‘ক’ সেট দিয়ে।

কয়েক বছর ধরে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যেই ফল প্রকাশিত হচ্ছে। জানা যায়, একজন পরীক্ষককে সাধারণত ৩০০ থেকে ৪০০ খাতা দেওয়ার কথা। কিন্তু এ নিয়ম ভেঙে অনেককেই আরো বেশি খাতা দেওয়া হয়। পরীক্ষকরা যেদিন খাতা নেন সেদিন থেকে সর্বোচ্চ ১৪ দিন সময় পান। খাতার পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে সময় বাড়ে কমে না। ফলে যাঁরা বেশি খাতা নেন তাঁদের তাড়াহুড়া করতে হয়। এ ছাড়া এমপিওভুক্ত শিক্ষক বাদে বেসরকারি শিক্ষকরাও খাতা দেখেন। কিন্তু এসব শিক্ষক ভুল করলেও বোর্ডের পক্ষ থেকে কোনো শাস্তি দেওয়ার উপায় থাকে না। আবার শিক্ষকরা বলছেন, খাতা দেখার টাকা পেতেও হয়রানি পোহাতে হয়। অনেক সময় বছর পার হলেও টাকা মেলে না।

গত বছর ঢাকা বোর্ডের এসএসসি পরীক্ষায় নার্গিস বেগম নামের একজন পরীক্ষককে রসায়ন বিষয়ের এক হাজার ৫৩০টি খাতা দেওয়া হয়। তিনি প্রশিক্ষণে থাকা অবস্থায় মাত্র ১০ দিনের মধ্যে সেই খাতা দেখে প্রধান পরীক্ষকের কাছে জমা দেন। অথচ শিক্ষাবিদরা বলছেন, সৃজনশীল বিষয়ের খাতা দেখাটা কঠিন। পুরো উত্তর না পড়ে কোনোভাবেই মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের চলতি বছরের সর্বশেষ একাডেমিক সুপারভিশন রিপোর্টে দেখা যায়, সারা দেশের ৪৫ শতাংশ শিক্ষক সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্ন করতে পারেন না। তবে শিক্ষক সমিতিগুলোর হিসাবে এ সংখ্যা অন্তত ৮০ শতাংশ। সম্প্রতি শেষ হওয়া জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায়ও (জেএসসি) গাইড থেকে হুবহু প্রশ্ন তুলে দেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ জন্য শাস্তি হিসেবে প্রশ্ন প্রণয়নে জড়িত পাঁচ শিক্ষককে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়।

একাডেমিক সুপারভিশন রিপোর্ট থেকে জানা যায়, বরিশাল অঞ্চলের ৯২ শতাংশ শিক্ষক সৃজনশীল প্রশ্ন করতে পারেন না। ঢাকা বিভাগে এমন শিক্ষকের সংখ্যা ৩৫ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৫৫ শতাংশ, সিলেটে ৪৬ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৫০ শতাংশ, রংপুরে ৪৮ শতাংশ, রাজশাহীতে ২০ শতাংশ, খুলনায় ৩৯ শতাংশ ও কুমিল্লায় ৪৭ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেসব শিক্ষক সৃজনশীল প্রশ্ন করতে পারেন না, তাঁরা কিভাবে সৃজনশীল খাতা দেখেন? ফলে খাতা মূল্যায়ন অবশ্যই ত্রুটিপূর্ণ হচ্ছে।

জানা যায়, ২০১৫ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল পুনর্নিরীক্ষণের জন্য প্রায় আড়াই লাখ আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে ফল পরিবর্তন হয় প্রায় দুই হাজার ৮০০ শিক্ষার্থীর। ঢাকা বোর্ডে ৩৩ হাজার ৪৯৬ শিক্ষার্থী ফল পরিবর্তনের আবেদন করে। এর মধ্যে ৬৮৯ জনের ফল পরিবর্তন হয়। নতুন করে জিপিএ ৫ পায় ৮১ জন, অকৃতকার্য থেকে কৃতকার্য হয় ১৯৯ জন।

চলতি বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল ঘোষণার পর তিন লাখ ৩৩ হাজার ৩২২টি উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করে শিক্ষার্থীরা। তাদের মধ্যে প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়।

সম্প্রতি পরীক্ষার ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন বেড়ে যাওয়ায় ও পরীক্ষকদের ভুল নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এ বিষয়ে গবেষণার জন্য বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিটকে (বেডু) দায়িত্ব দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাদের গবেষণায়ও খাতা মূল্যায়ন ত্রুটিপূর্ণ হচ্ছে বলে প্রমাণ মেলে। তারা বলছে, ভুল উত্তরের জন্য নম্বর দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু অনেক সময় সঠিক উত্তরের ক্ষেত্রেও নম্বর কম দেওয়া হচ্ছে। প্রধান পরীক্ষকদের খাতা ফের দেখে দেওয়ার কথা থাকলেও তাঁরা সে কাজ ঠিকভাবে করেন না। এ ছাড়া স্কুল-কলেজের নামকরা শিক্ষকরা খাতা দেখেন না বলেও প্রমাণ পেয়েছে বেডু। এসব শিক্ষক খাতা দেখার পেছনে সময় না দিয়ে কোচিং ও প্রাইভেট নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।

চলতি মাসেই আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভায় পরীক্ষকদের ভুল নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় কিভাবে খাতা দেখায় পরীক্ষকদের ভুল কমিয়ে আনা যায় সে লক্ষ্যেও কিছু ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছায় বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। সে অনুযায়ী আগামী এসএসসি পরীক্ষা থেকে আবশ্যিকভাবে খাতা দেখায় নামি-দামি শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পরীক্ষকের খাতা মূল্যায়ন শেষে নিয়ম অনুযায়ী প্রধান পরীক্ষককে খাতা চেক করা নিশ্চিত করতে হবে। আর খাতা দেখার সম্মানীও বাড়াতে হবে।

আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘অনেক সময়ই ব্যাপক নম্বরের হেরফের হয়। একেকজন পরীক্ষকের দৃষ্টিভঙ্গিও একেক রকম থাকে। এখন নম্বর কমবেশি হলে তো শিক্ষকদের ওইভাবে শাস্তি দেওয়া যায় না। হয়তো যাঁদের বেশি সমস্যা তাঁদের পরের বার খাতা দেওয়া হয় না। আমরা চেষ্টা করছি এবার থেকে খাতা দেওয়ার আগে পরীক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার, যাতে সবাই মোটামুটি একইভাবে নম্বর দেন। আর পরীক্ষকদের ডিজিটাল ডাটাবেইসও করা হচ্ছে। তবে শতভাগ নিয়মনীতি মেনে পরীক্ষক বানানোটা খুব কষ্টকর। আগামী এসএসসি পরীক্ষায় আগের চেয়ে খাতার মূল্যায়ন অনেক ভালো হবে, এটা বলতে পারি।’

অযোগ্য পরীক্ষক ঠেকাতে সম্প্রতি আন্তশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষকদের ডিজিটাল ডাটাবেইস করার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু কোনো ধরনের গাইডলাইন ছাড়া তৈরি এই ডাটাবেইসেও ঢুকে পড়ছেন অযোগ্য শিক্ষকরা। প্রতিষ্ঠানপ্রধান সম্মতি দিলেই একজন শিক্ষক হয়ে যাচ্ছেন পরীক্ষক। এতে জুনিয়র সেকশনের শিক্ষক হয়ে যাচ্ছেন মাধ্যমিকের পরীক্ষক, কলেজের শিক্ষকরাও মাধ্যমিকের পরীক্ষক হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। আবার কোনো শিক্ষক যদি স্বল্প সময়ের জন্যও কোনো একটি বিষয় পড়ান, তাহলেও তিনি ওই বিষয়ে খাতার দেখার আবেদন করতে পারছেন। এভাবেই এক বিষয়ের শিক্ষক হয়েও অন্য বিষয়ের পরীক্ষক হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন তাঁরা।

জানা যায়, ডিজিটাল ডাটাবেইস করার সময় গাইডলাইন না দিলেও পরীক্ষক হওয়ার জন্য একটি নীতিমালা রয়েছে। এতে প্রধান পরীক্ষক হতে গেলে কমপক্ষে ১২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। আর পরীক্ষক হওয়ার জন্য লাগে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা। এ ছাড়া একজন শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও তাঁর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফলও পরীক্ষক হওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচনায় আনার কথা রয়েছে। যদিও এই নীতিমালা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানা হয় না।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘একেকজন শিক্ষকের চিন্তাভাবনা একেক রকম। একজন হয়তো হার্ড (কট্টর), আরেকজন হয়তো লিবারেল (উদার)। তাই তাঁদের নম্বর দেওয়ার মধ্যেও পার্থক্য রয়েছে। আমরা সবাইকে একটা স্ট্যান্ডার্ডে আনার চেষ্টা করছি। এ জন্য আরো সময় প্রয়োজন। তবে পুনর্নিরীক্ষার আবেদন অনলাইনে হওয়ায় সহজেই শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারছে। তাই দিন দিন আবেদনকারীর সংখ্যাও বাড়ছে।’

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম রনি বলেন, ‘যিনি যে বিষয়ের শিক্ষক, তাঁকে সেই বিষয়েরই খাতা দেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকদেরই খাতা দেখতে দেওয়া উচিত, যাতে কোনো ভুল করলে তাঁদের ধরা যায়। বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণে শিক্ষকদের খাতা মূল্যায়ন শেখানো উচিত। খাতা দেখার সময়ও বাড়ানো উচিত।’ সূত্র: কালের কণ্ঠ

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন