বেরোবিতে চিকিৎসক নিয়োগ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ

  29-11-2016 11:34AM


পিএনএস, রংপুর : রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) এবার দুজন চিকিৎসক নিয়োগ নিয়ে কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। এক বছর আগে যে চিকিৎসক লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় ফেল করেছিল এবার তাকেই প্রথমস্থান অধিকারী দেখিয়ে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্য একজন নিয়োগ পাওয়া আবেদনকারী কর্মস্থলে যোগদান না করায় এ পদে গোপনে অন্য একজনকে নিয়োগ দেয়ার জন্য চলছে তোড়জোড়, দুই প্রার্থীর পক্ষে তদবির। এ ঘটনা জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেল সেন্টারে দুজন চিকিৎসক নিয়োগ দেয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে ৯ জন চিকিৎসক আবেদন করে। পরে ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত হয় লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা। ওই পরীক্ষা নেয়ার দায়িত্বে ছিলেন রংপুর মেডিকেল কলেজের তৎকালিন অধ্যক্ষ বিশিষ্ট চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. জাকির হোসেন। পরীক্ষা শুরুর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে বসেই তাৎক্ষণিক প্রশ্ন তৈরি করেন তিনি। সেই প্রশ্নপত্র দিয়ে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই পরীক্ষায় সুলতানা তারান্নুম ও আরেকজন আবেদনকারী লিখিত ও মৌখিক দুটি পরীক্ষাতে অংশ গ্রহণ করে ফেল করায় সেই পরীক্ষা এবং নিয়োগ দুটিই বাতিল করে দেয়া হয়।

এরপর আবারও নিয়োগ দেয়ার জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এবার আবারও নতুন করে আবেদনপত্র আহ্বান করা হলে ১৮ জন চিকিৎসক আবেদন করে। এদের মধ্যে দেশের নামকরা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীসহ বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করা চিকিৎসক ছিলেন। চলতি নভেম্বর মাসেই আবেদনকারী চিকিৎসকদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। এবার পরীক্ষায় এক্সপার্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রংপুর মেডিকেল কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক অনিমেষ রায়। তিনি তার সঙ্গী হিসেবে মেডিকেল কলেজের কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে না নিয়ে একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষককে সঙ্গে নিয়ে আসেন। এরপর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় সেই ফেল করা চিকিৎসক সুলতানা তারান্নুম নিজামীকে এবার পাস করা নয় একেবারে প্রথম স্থান অধিকারী হিসেবে দেখানো হয়। দ্বিতীয় স্থান লাভ করে সুধাংস সরকার মনোনীত হন।

ফলাফল প্রকাশ করার পর প্রথম স্থান অধিকারী ডা. নিজামী যোগদান করলেও দ্বিতীয় স্থান লাভকারী স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করা চিকিৎসক সুধাংস সরকার যোগদান করেনি। এদিকে প্রথম পরীক্ষায় ফেল করা আবেদনকারী একেবারে প্রথম স্থান অধিকার করার বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে তোলপাড় শুরু হয়। পুরো বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে কানাঘুষা শুরু হয়।

বিষয়টি জানাজানি হলে পুরো বিষয়টি জানতে রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. অনিমেষ চন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংবাদকে জানান, প্রথমবার ফেল করলে পরের বার প্রথম স্থান অধিকার কি করতে পারে না? বলে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন। আবেদনকারী চিকিৎসকসহ বিভিন্ন মহলের অভিযোগ এবার পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আগে থেকেই তৈরি করে নিয়ে আসা হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে বসেই প্রশ্ন তৈরি করা হয়েছে। সহযোগী হিসেবে রংপুর মেডিকেল কলেজের কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে আনা হলো না কেন জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করেননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, বিশেষ ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়ার জন্য আগে থেকে প্রশ্নপত্র তৈরি করে তা পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়ার জন্য করা হয়েছিল।

এ ব্যাপারে পরীক্ষা কমিটির অন্যতম সদস্য রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. সাইদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে জানিয়ে কোন মন্তব্য করবেন না বলে জানান। এদিকে দ্বিতীয় স্থান লাভকারী চিকিৎসক সুধাংস সরকার যোগদান না করায় ওই পদে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পছন্দের একজনকে গোপনে নিয়োগ দেয়ার পাঁয়তারা চলছে বলে জানা গেছে। এ ক্ষেত্রে ২ জন আবেদনকারী তাদের তালিকায় আছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে একজনকে নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানা গেছে। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসক নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করার সময় অপেক্ষার তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। ফলে আগের আবেদনকারীদের নিয়োগ দেয়ার কোন সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। নতুন করে আবেদনপত্র আহবান করাই আইনসম্মত বলে অভিমত তাদের।

অনেকে আবার পুরো ঘটনা তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন বলেও অভিমত প্রকাশ করেছেন।

উল্লেখ্য যে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন দন্ত চিকিৎসক এবং আরেকজন অবসরপ্রাপ্ত মহিলা ডাক্তারসহ কয়েকজন কর্মচারি দিয়ে কোনোমতে চলছে মেডিকেল সেন্টার।দামী ওষুধগুলো কিনতে হয় বাইরে থেকে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন