ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির মধ্য দিয়ে বিদায় নিচ্ছে ২০১৬

  31-12-2016 02:18AM


পিএনএস : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ (জাবি) বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনার মধ্য দিয়ে বিদায় নিচ্ছে ২০১৬ সাল। জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ায় অনেককে কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ঢাবির ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষে বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ক’ ইউনিটের অধীনে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১৩ জনকে আটক করার পরতাদের প্রত্যেককে দুই বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গত ২১ অক্টোবর ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালত আটক ১৩ জনকে সাজা প্রদান করেন।

এছাড়া ঢাবির ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির দায়ে এক পরীক্ষার্থীকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ঢাবির ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আমজাদ আলী জানিয়েছেন, পাবলিক পরীক্ষা আইন, ১৯৮০-এর ৯ (খ) অনুযায়ী তাদের সাজা দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এদিকে প্রশ্নফাঁস ও অনিয়মের অভিযোগ এনে ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি প্রক্রিয়া স্থগিত করে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার আর্জি জানিয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। গত ১১ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আ.স.ম সায়েম আলী পাঠান হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট দায়ের করেন।

এর আগে গত ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হওয়ার ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা চলাকালীন প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকা ও জালিয়াতির অভিযোগে ৭ জনকে গ্রেফতার করেছিলো পুলিশ। এছাড়া নয় লাখ টাকায় ‘ঘ’ ইউনিটে মেধা তালিকায় ৫ম স্থান অর্জন করার অভিযোগও উঠেছে এক ছাত্রী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।

এছাড়া শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধিন সান্ধ্যকালীন স্নাতকোত্তর কোর্সের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেও ভর্তির জন্য মেধা তালিকায় নাম আসে পল্লবী বাড়ৈ নামে ভর্তিচ্ছুর। গত ১৮ নভেম্বর এ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

পরবর্তী সময়ে ঢাকা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক পল্লবী বাড়ৈর পরিবারের পক্ষ থেকেই এ ঘটনার পেছনে কোনো জালিয়াতি আছে কি না- তা তদন্ত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের কাছে আবেদন করা হয়।

ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এ ঘটনাকে বড় অনিয়ম অভিহিত করে তদন্ত করে এর রহস্য উদ্ঘাটনসহ এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হবে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, এটা সুখবর যে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে বলে ফল প্রকাশ হয়েছে তার পক্ষ থেকেই অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছে। শিক্ষার্থী সৎ বলেই বিষয়টি জানিয়েছে। অবশ্যই এর রহস্য বের করা হবে।

এদিকে গত ২৬ অক্টোবর চবির ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষের বিভিন্ন ইউনিটের পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে ৮ শিক্ষার্থীকে আটক করে চবি প্রশাসন। এরমধ্যে টাকার বিনিময়ে অন্যের হয়ে পরীক্ষা দিতে এসে ছয় শিক্ষার্থী ও প্রযুক্তির সহায়তায় পরীক্ষা দিতে গিয়ে দুই শিক্ষার্থী ধরা পড়েন।

গত ২৯ অক্টোবর চবি ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ (সম্মান) ‘ই’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে একই পরিবারের চার সদস্যকে আটক করেবিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে আটকদের মধ্যে তিনজনকে জনকে কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এছাড়া গত ৩ নভেম্বর চবি কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের অধীন ‘সি-৩’ ইউনিটের (বিজ্ঞান শাখা) ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

গত ৩ নভেম্বর বিকেলে অনুষ্ঠিত ‘সি-৩’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে সঠিক উত্তরটির বামপাশের বৃত্তটি ঝাপসা করে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে যারা আগে থেকেই এ বিষয়টি জানতো তারা সবগুলো প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে সক্ষম হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীরা এই ঘটনাকে ভয়ঙ্কর জালিয়াতি হিসেবে উল্লেখ করে।

পরদিন এ ইউনিটের প্রকাশিত ফলে দেখা যায় পরীক্ষায় ১২০ এর মধ্যে ১১৮.৯৯ পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে এক শিক্ষার্থী। এছাড়া ফলাফলের ১ম সারির বাকি ২৯ জনই অস্বাভাবিক নম্বর পেয়ে উর্ত্তীণ হয়। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ইতিহাসে বিরল ঘটনা বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপার্চায প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বিষয়টি দেখা হবে বলে গণমাধ্যমকে জানান।
অভিযোগটি সত্য হলে এ ব্যাপারে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও ওই সময় সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন তিনি।

গত ২৬ অক্টোবর জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারী ও এক ভর্তি শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এদিকে গত ২০ ও ২১ নভেম্বর দুই দিনে জাবির ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি অভিযোগে ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

জাগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার সময় ‘সি’ ও ‘এ’ এবং ‘ডি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার আগে দুই জন পরীক্ষার্থী, কোচিং সেন্টারের একজন পরিচালক এবং জালিয়াতি চক্রের এক এজেন্টকে আটক করে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়। এছাড়া ‘ডি’ ইউনিটের ৫ জন পরীক্ষার্থীকে সূত্রাপুর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর, ২৪ সেপ্টেম্বর, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২১ অক্টোবর এবং ২৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে আটকদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে কর্তৃপক্ষ। গত ২৭ ডিসেম্বর আটকের প্রায় এক মাস পর কর্তৃপক্ষ মামলাটি করে।

এর আগে গত ২৬ নভেম্বর ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়েল ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী আল আমিন ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ইশরাত ইমতিয়াজ হৃদয়সহ ১০ জনকে আটক করেছিল পুলিশ। পরবর্তী সময়ে অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আল আমিনকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি ছাড়াও গত ৮ অক্টোবর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন প্রশ্নপত্র জালিয়াতির অভিযোগে রাজশাহীতে ১১ জনকে আটক করে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। পরদিন সন্ধ্যায় পুলিশের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন