ইসলামে শিক্ষকের মর্যাদা যেমন

  24-01-2017 12:55AM

পিএনএস ডেস্ক: জ্ঞান অর্জন এবং জ্ঞান চর্চাকে ইসলাম গুরুত্ব প্রদান করেছে। ইসলাম ধর্মে জ্ঞান অর্জন করাকে ফরজ বা আবশ্যক করা হয়েছে। পবিত্র কোরান ও হাদিসে জ্ঞান অর্জন এবং জ্ঞান চর্চা করার প্রতি ব্যাপক উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।
ইসলাম আরো বেশি গুরুত্ব প্রদান করেছে জ্ঞান বিতরণকারী শিক্ষক সমাজের ব্যাপারে। জ্ঞান অন্বেষণের গুরুত্ব ও শিক্ষকের মর্যাদা প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন, “যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে?” (সূরা আয-যুমার, আয়াত-৯)।
শিক্ষাকে সব উন্নয়নের পূর্বশর্ত হিসেবে ধরলে শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার বিকল্প নেই। তাইতো পবিত্র কোরআনের প্রথম নাজিলকৃত আয়াতে জ্ঞানার্জনের অধিকারী হতে বলা হয়েছে।
এ মর্মে আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদে বলেছেন, “পড়, তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একবিন্দু জমাট রক্ত থেকে। পড়, আর তোমার প্রতিপালক পরম সম্মানিত। যিনি কলমের দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না।” (সূরা আল-আলাক, আয়াত: ১-৫)
আল-কোরআনের শিক্ষার আলোকে জ্ঞানার্জনের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.) বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেছেন, “প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর ওপর বিদ্যা অর্জন করা ফরজ।” (ইবনে মাজা)
কোরআন মাজিদে আল্লাহ বলেছেন, “তোমাদেরকে উত্তম জাতি হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমাদের কাজ হল, তোমরা মানুষদের সৎ পথে আহ্বান করবে এবং অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে।” (সূরা আলে-ইমরান: ১১০)।
শিক্ষা দেওয়ার বিষয়ে রাসূল (সা.) বলেছেন, আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, তোমরা ফারায়েয ও কুরআন শিক্ষা এবং মানুষকে তাহা শিক্ষা দাও। কেননা আমাকে অতিসত্বরই উঠিয়ে নেয়া হবে। (তিরমিযী)
নিজে শিক্ষা অর্জন করার পরক্ষণেই অপরকে সেই শিক্ষায় শিক্ষিত ও চরিত্র গঠন করার দায়িত্বও শিক্ষকের। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে যে “আল্লাহর পরে, রাসুলের পরে ওই ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা মহানুভব যে বিদ্যার্জন করে ও পরে তা প্রচার করে।” (মিশকাত)।
জ্ঞান প্রচার করার বিষয়ে হাদিসে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তিকে দ্বীনের কোন ইলম সম্পর্ক জিজ্ঞেস করা হয় এবং তা সে গোপন রাখে তবে তাকে কিয়ামতের দিন আগুনের লাগাম পরানো হবে। (তিরমিযী, আবু দাউদ)
ইসলামে শিক্ষার বিষয়ে আরো অসংখ্য আয়াত হাদিস রয়েছে। ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিশিম।
যে জাতি যত শিক্ষিত সেই জাতি তত উন্নত। আর শিক্ষকরা জাতির প্রধান চালিকাশক্তি। সত্য ও সুন্দরের পথ হচ্ছে একজন আদর্শ শিক্ষকের সাধন-দর্শন। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র তথা দেশ ও জাতি তার দ্বারা উপকৃত হয়। এজন্য শিক্ষকদের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান দেখানো উচিত।
পরিবারকে বলা হয় প্রাথমিক শিক্ষালয়। প্রাতিষ্ঠানিক হাতেখড়িটা সবার পরিবারেই হয়। এরপর সারাজীবন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই দায়িত্ব পালন করে একজন মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে তৈরি করতে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব পালন করতে হয় শিক্ষককে।
২০০৩ সাল থেকে এদেশে 'জাতীয় শিক্ষক দিবস' পালিত হয়ে আসছে। ১৯ জানুয়ারি বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজকে যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার অঙ্গীকার নিয়ে তত্কালীন সরকার এ দিবসটি চালু করে।
শুরুতে এ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলো 'জাতি গঠনে শিক্ষক'। শুরু থেকেই শিক্ষকরা জাতি গঠনে ভূমিকা রেখে আসছে। কিন্তু শিক্ষকরা কতটুকু মর্যাদা পাচ্ছে? আজ আমরা কি দেখছি। শিক্ষকরা দাবি আদায় করতে রাজপথে নামছে। কিল ঘুষি লাথি খাচ্ছে।
যে জাতি বা দেশের শিক্ষার অবকাঠামো ও শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ যত উন্নত, দেশ ও জাতি হিসেবে সার্বিকভাবে তারাই উন্নত ও স্বয়ংসম্পূর্ণ। আর এই জাতি গঠনে মূল কাজটি করেন আমাদের শিক্ষকরা।
বাবা-মা যেমন সন্তানদের ভালবাসা, স্নেহ, মমতা দিয়ে বড় করেন, ঠিক তেমনি আমাদের শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার আলো দিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যান।
একটি উন্নত দেশ ও জাতি গঠনে শিক্ষার ভূমিকা, গুরুত্ব এবং তার প্রমাণ লিখে বা বলে শেষ করা যাবে না।
এমনকি শিক্ষার্থীদের জন্য একজন শিক্ষক তাঁর অমূল্য জীবনও উৎসর্গ করতে পারেন। এমনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর ও রসায়ন বিজ্ঞান বিভাগের প্রাণপ্রিয় শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা।
১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী গণঅভ্যুত্থাণে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন তিনি। ঐদিন পাকিস্থান হানাদার বাহিনীর ক্যাপ্টেনের হাতে নির্মমভাবে পাশবিক হত্যার শীকার হন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মেইন গেটের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর গুলির জন্য নির্দেশ এলে ড. জোহা প্রক্টর হিসাবে তাদেরকে ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করেন। ছাত্ররা পিছু হটতে না চাইলে এক পর্যায়ে পাক হানাদার বাহিনীর ক্যাপ্টেন ছাত্রদের দিকে গুলি করার জন্য নির্দেশ দেন।
কিন্তু ড. জোহা এর প্রতিবাদ করে বলেন,“ কোন ছাত্রের গায়ে গুলি লাগার আগে যেন আমার গায়ে গুলি লাগে”। কিন্তু কোন কিছুই কর্ণপাত না করে পাক হানাদার বাহিনীর ক্যাপ্টেন ড. জোহার উদ্দেশ্যে গুলি করে। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়।
সেদিন শুধু ড. জোহার গায়েই গুলি লাগে নি বরং সারা বিশ্বের শিক্ষক জাতি তথা বুদ্ধিজীবীর উপর আঘাত হানা হয়েছিল।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন