শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে রুয়েট ভিসি অবরুদ্ধ

  04-02-2017 07:53PM

পিএনএস: ক্রেডিট প্রথা বাতিলের দাবিতে অবরুদ্ধ হয়ে নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়েছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) ভিসি অধ্যাপক মোহা. রফিকুল আলম বেগ। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মো. কামরুজ্জামানসহ বেশ কয়েকজন প্রশাসনিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও অবরুদ্ধ রয়েছেন।

ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে নিজেদের রক্ত দিয়ে ‘৩৩ ক্রেডিট প্রথা বাতিল চাই’ লিখে দাবি আদায়ে ভিসি কার্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করায় তিনি অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

ক্যাম্পাসে দিনভর আন্দোলনের পর বিকালে প্রশাসন ভবনে ঢুকে ভিসির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। বিকাল সাড়ে ৫টায় সংকট নিরসনে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রুয়েট প্রশাসন মীমাংসা বৈঠকে বসতে চাইলেও রাজি হননি শিক্ষার্থীরা। তারা দাবি আদায়ে রুয়েট ভিসিকে অবরুদ্ধ করে রাখেন।

ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, দাবি আদায়ে সকাল ১০টায় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্ত্বরে অবস্থান নেন। পরে বেলা ১১টা থেকে ক্রেডিট প্রথা বাতিলে ক্যাম্পাসে কয়েক দফা বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।

দুপুর আড়াইটার দিকে তারা স্লোগান দিতে দিতে প্রশাসন ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়েন। পরে তারা ভবনের দ্বিতীয় তলায় ভিসি অধ্যাপক মো. রফিকুল আলম বেগের কার্যালয়ের সামনে বারান্দায় বসে স্লোগান দিতে থাকেন তারা।

একপর্যায়ে রুয়েট প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তারা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মীমাংসা বৈঠকে বসার আহ্বান জানান। তবে শিক্ষার্থীরা তাতে সাড়া দেননি। এ কারণে বিকালে অফিস সময় শেষে কার্যালয় থেকে বের হতে পারেননি রুয়েট ভিসি। এতে গোটা ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।


এদিকে দুপুরে রুয়েট ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নিজেদের শরীর থেকে ইনজেকশনের সিরিঞ্জ দিয়ে রক্ত নিয়ে তা দিয়ে ক্রেডিট প্রথা বাতিলের দাবিতে স্লোগান লিখছেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে রুয়েট ভিসি অধ্যাপক মোহা. রফিকুল আলম বেগ বলেন, একাডেমিক কমিটির মিটিংয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে সমাধানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের মীমাংসা বৈঠকে ডাকা হলেও আমাদের আহ্বানে তারা সাড়া দেয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মো. কামরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। শিক্ষার্থীদের দাবি অযৌক্তিক বলে তিনি মোবাইল কল কেটে দেন।

জানা গেছে, রুয়েট শিক্ষার্থীদের পরবর্তী বর্ষে উত্তীর্ণ হতে বাধ্যতামূলক ৪০ ক্রেডিটের মধ্যে ন্যূনতম ৩৩ ক্রেডিট অর্জন করতে হয়।

২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে এ প্রথা চালু করে রুয়েট প্রশাসন। এর আগে কোনো শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অকৃতকার্য বা অনুপস্থিতির কারণে ন্যূনতম ক্রেডিট অর্জন করতে ব্যর্থ হলেও পরবর্তী বর্ষে ক্লাস-পরীক্ষা দিতে পারতো। সেক্ষেত্রে পরবর্তী পরীক্ষায় উক্ত ক্রেডিট অর্জন করতে হতো। নিয়ম চালুর পর ২০১৫ সালের আগস্টে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। পরে দাবি আদায় ছাড়াই আন্দোলন বন্ধ করে দেন তারা।

প্রায় দেড় বছর পর আবারও একই দাবি নিয়ে ২৮ জানুয়ারি থেকে টানা আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন দমাতে গত ৩১ জানুয়ারি ১৪ ও ১৫ সিরিজের শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে প্রশাসন। পরদিন ১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ জারি করা হয়।
টানা চারদিন আন্দোলনের পর বুধবার সরকারি ছুটি এবং বৃহস্পতি ও শুক্রবার রুয়েটের সাপ্তাহিক ছুটিতে আন্দোলন বন্ধ থাকে।

শনিবার আবারও শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ে আন্দোলনে নেমেছে। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রুয়েট প্রশাসনও নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন।

পিএনএস/বাকিবিল্লাহ্

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন