ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দু শিক্ষার্থীদের তেহারিতে গরুর মাংস, শিক্ষার্থীদের ভাঙচুর

  15-04-2017 12:45PM

বর্ষবরণ উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ক্যানটিন ভাঙচুর করেছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। পরিচালককেও ঘটনার সময় মারধর করা হয়।

শুক্রবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। হিন্দু শিক্ষার্থীদের গরুর মাংস দিয়ে রান্না করা তেহারি পরিবেশন করায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানান প্রত্যক্ষর্শীরা। ভাঙচুরের পর ক্যানটিনটি বন্ধ রয়েছে।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষ হওয়ার পর এ আয়োজনের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের মাঝে তেহারি পরিবেশন করা হয়। পরে শিক্ষার্থীরা জানতে পারেন যে, খাবারে গরুর মাংস ছিল। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ক্যান্টিনে ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে বাংলা নববর্ষ- ১৪২৪ উদযাপন কমিটির সমন্বয়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এম আমজাদ আলী, চারুকলা অনুষদের ডিন ও শিক্ষকরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

চারুকলার স্বেচ্ছাসেবীদের একজন জানান, মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য যারা রাতভর কাজ করেছেন, তাদের সকালের নাস্তা হিসেবে জাকিরের কাছ থেকে ‘তেহারি’ নেওয়া হয়েছিল।

“আমাদের ক্যান্টিনে কখনও গরুর মাংস আসে না। কেউ জানত না যে তেহারি গরুর মাংস দিয়ে রান্না করেছে। খাওয়ার পর সন্দেহ হলে জাকিরকে জিজ্ঞাসা করা হয়। তখন সে গরুর মাংস দেওয়ার কথা স্বীকার করে।” তাতে ক্ষিপ্ত হয়েই কিছু শিক্ষার্থী ক্যান্টিন ভাংচুর করে বলে জানান ওই স্বেচ্ছাসেবী।

এ অনুষদের সাবেক একজন শিক্ষার্থী জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে চারুকলার ক্যান্টিনে কখনোই গোমাংস দেওয়া হত না। মঙ্গল শোভাযাত্রা ঘিরে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টায় পরিকল্পিতভাবে জাকির এ কাজ করেছেন কি না- সে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।

একই সন্দেহ এসেছে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেনের কথায়।

তিনি জানান, “এটা খুবই দুঃখজনক। চারুকলার ক্যান্টিনে কখনো গরুর মাংস পরিবেশন করা হয় না। সে এটা কেন করল- তা তদন্ত করে দেখতে হবে। এর মধ্যে একটা দুরভিসন্ধি আছে বলে মনে হচ্ছে।”
এ বিষয়ে ক্যান্টিন মালিক জাকির জানান, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে গরুর তেহারিও রান্না করা হয়। “চারুকলার ছাত্র সোহাগ, সবুজ, মিঠুন সকালে ওই তেহারি খেয়ে কয়েক প্যাকেট নিয়ে যায়।”

তিনি বলেন, বৈশাখ উদযাপন প্রস্তুতির সময় সোহাগ, সবুজ, মিঠুনসহ উদযাপন কমিটির সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন তার দোকানে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা বাকি খায়। ওই বকেয়া টাকা পরিশোধ করবে না বলেই গরুর মাংসের তেহারি বাইরে গিয়ে কয়েকজন হিন্দু ছাত্রকে খাইয়ে আমার বিরুদ্ধে উসকে দিয়েছে।

তার এই অভিযোগ নাকচ করে চারুকলার ছাত্র কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-সম্পাদক সোহাগ বলছেন, বাকি খাওয়ার সঙ্গে এই ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই।

নিজেরা খাওয়ার পর গরুর তেহারি কেন হিন্দু সহপাঠীদের দিলেন জানতে চাইলে সোহাগ জানান, “আমরা সারা রাত কাজ করার পর সকালে ওই তেহারি খেয়েছিলাম। তাই সেখানে গরুর মাংস রয়েছে কি না সেটি ওইভাবে খেয়াল করা হয়নি।”

জাকিরের আগে চারুকলার ক্যান্টিন চালাতেন মিজানুর রহমান নামে একজন। তিনিও বিভিন্ন সময়ে বকেয়া টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে না পাওয়ার অভিযোগ করেন।

মিজানুর জানান, “গত বছর বৈশাখ প্রস্তুতির সময় আমার কাছেও তারা ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা বাকি খায়। পরবর্তীতে টাকা চাওয়ায় আমাকে ক্যান্টিন থেকে বের করে দিয়ে জাকিরকে পরিচালনার দায়িত্ব দেয়।”

ক্যান্টিন ম্যানেজার জাকির হোসেন বলেন, ‘আমি জানতাম না যে ক্যান্টিনে গরুর মাংস পরিবেশন করা যাবে না। তাই না বুঝে এ কাজ করেছি।’ বৈশাখ উদযাপনে শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ক সাগর হোসেন সোহাগ বলেন, ‘চারুকলা অনুষদে গরুর মাংস রান্না সম্পূর্ণরূপে নিষেধ। কিন্তু ক্যান্টিন ম্যানেজার নাকি বিষয়টি জানেনই না। এটা কেমন কথা। না জেনে তিনি ক্যান্টিন পরিচালনা করছেন? তিনি পরিকল্পিতভাবেই এ কাজ করেছেন। আমাদের দাবি তাকে ক্যান্টিন থেকে বিতাড়িত করতে হবে এবং তদন্ত স্বাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. এম আমজাদ আলী বলেন, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে এটি অনেক গভীর ষড়যন্ত্র। ওই ক্যান্টিন ম্যানেজার (জাকির) বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি নজরুল মাজারের নিরাপত্তাকর্মী। নিরাপত্তা কর্মে দায়িত্ব পালনকালেও প্রক্টরিয়াল টিমের সঙ্গে তার একাধিকবার বিভিন্ন বিষয়ে ঝামেলা হয়েছে। তাকে অনেক আগে থেকে নজরে রাখা হয়েছে। এখন সন্দেহ আরো বেড়েছে। বাকিটা তদন্ত স্বাপেক্ষে বলা যাবে।’

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন