রাবিতে ভাস্কর্য উল্টে রেখেছে শিক্ষার্থীরাই!

  18-04-2017 03:46PM

পিএনএস ডেস্ক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে রাখা ভাস্কর্যগুলো উল্টে রেখে প্রতিবাদ জানিয়েছে অনুষদের শিক্ষার্থীরাই। অনুষদের শিক্ষকরা বলছেন, কিছু শিক্ষার্থী ক্ষোভের বশে ভাস্কর্যগুলো উলটপালট করেছে। শিক্ষার্থীদের দাবি, বিভাগের কিছু সমস্যার কারণে তারা ভাস্কর্যগুলো উল্টে রেখে প্রতিবাদ করেছে।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভাস্কর্য বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ইউসুফ আলী স্বাধীন ও ইমরান হোসেন রনি সাংবাদিকদের কাছে বলেন, দীর্ঘদিন থেকে আমাদের বানানো এই ভাস্কর্যগুলো এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে। কিন্তু এগুলো সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। শিক্ষকদের বিভিন্ন সময় বলেছি চত্বরের চারপাশে দেয়াল দিয়ে এটা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে। কিন্তু সেটা করা হয়নি। আর এটা খোলামেলা থাকায় বহিরাগতরা এসে আমাদের বানানো এ শিল্পকর্মগুলো নষ্ট করে ফেলছে। এজন্য আমর ৩০-৪০ জন শিক্ষার্থী মিলে ভাস্কর্যগুলো যাতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় সেজন্য উল্টিয়ে রেখেছি। কোনো ভাস্কর্য ভাঙা হয়নি।

তবে শিক্ষার্থীদের এমন আচরণকে অন্যায় বলে অভিহিত করেছেন চারুকলা অনুষদের অধিকর্তা অধ্যাপক মো মোস্তাফিজুর রহমান।

সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের তৈরি ভাস্কর্যগুলো ওলটপালট করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। একটি ভাস্কর্যও ভাঙা হয়নি। ফেলে রাখা ভাস্কর্যগুলো শিক্ষকদের কক্ষের সামনে রাখা হয়েছে।

চারুকলা অনুষদ সূত্রে জানা যায়, মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যার প্রেক্ষিতে বিভাগের শিক্ষার্থীরা সোমবার দিবাগত রাতে প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী ভাস্কর্যগুলো ওলটপালট করে রাখে।

এ বিষয়ে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোস্তফা শরীফ আনোয়ার বলেন, এই ঘটনায় সাত জন জড়িত থাকার কথা জানা গেছে। আমরা বিষয়টি প্রক্টরকে অবহিত করেছি, পরে রেজিস্ট্রারকেও অবহিত করব। তাদের ব্যাপারে একাডেমিক সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে জড়িত সাতজনের নাম জানতে চাইলে তিনি নাম জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনুষদের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের চারুকলায় যে পরিবেশ তা পরিবর্তন করা দরকার। ভাস্কর্যগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে, পুরো পরিবেশটা অপরিচ্ছন্ন হয়ে আছে। এগুলোর সংস্কারের বিষয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে অনেক বার কথা হলেও তারা এ বিষয়গুলো এড়িয়ে যান। এতে বাধ্য হয়ে হয়ত বিভাগের বড় ভাইয়েরা এটা করেছে যেন বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। তবে প্রতিবাদ জানানোর মাধ্যমটা সঠিক ছিল না। অন্য কোন উপায়ে তারা প্রতিবাদ জানাতে পারতেন।

এদিকে ভাস্কর্য উলটপালট রাখায় ক্ষুব্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এ বিষয়ে চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের অধ্যাপক সিদ্ধার্থ শংকর তালুকদার বলেন, এটা প্রতিবাদ জানানোর ভাষা হতে পারে না। যারা এটা করেছে তারা ভালো করেনি। এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ করেছে তারা।

ভাস্কর্য উলটপালট করায় মৌলবাদী বা প্রতিক্রিয়াশীলদের ইন্ধন রয়েছে কি না জানতে চাইলে অনুষদের অধিকর্তা অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বিষয়টি নাকচ করে বলেন, বিষয়টি ছোট। এটা আমাদেরই কিছু শিক্ষার্থীর কাজ। আমাদের অনুষদটা নতুন। এখানে নানা রকম সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যার প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানাতে এভাবে ভাস্কর্যগুলো ওলটপালট করে রেখে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এখানে রাজনৈতিক কোন ব্যাপার নেই। এখানে কোন মৌলবাদী শক্তি জড়িত থাকলে তারা ভাস্কর্যগুলো এভাবে শুইয়ে না রেখে ভেঙ্গে ফেলতো। তবে শিক্ষার্থীরা যেভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে সেটা ঠিক করেনি।

এদিকে ভাস্কর্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখার পেছনে মৌলবাদী ও প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর ইন্ধন রয়েছে কি না তার তদন্তের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে রাবি শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার দুপুর দিকে ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ শেষে ছাত্রলীগ টেন্টে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, শিক্ষার্থীরা এ কাজ করতে পারে না। এখানে নিশ্চয়ই ইন্ধন দেয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের।

ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র হিসেবে এমনটি করা হয়েছে বলে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বিভাগকে তদন্তের দাবি জানানো হয় সমাবেশে।

সার্বিক বিষয়ে মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোস্তফা শরীফ আনোয়ার বলেন, প্রতিবাদ জানানোর অনেক উপায় আছে। এটা প্রতিবাদ জানানোর ভাষা হতে পারে না। শিক্ষার্থীদের এই কাজটা আমাদের অত্যন্ত আঘাত দিয়েছে। যারা একাজ করেছে তারা একাডেমিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে। একাডেমিক কমিটিতে জড়িত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন