বেরোবি’তে ১০ শিক্ষকের ১৯ পদ থেকে পদত্যাগ,ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত

  09-11-2014 02:09PM

পিএনএস,(নজরুল মৃধা) রংপুর : বেগম রোকেয়া বিশ্ব বিদ্যালয়ে আবারো অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। রোববার পদোন্নতি বঞ্চিত ১০ শিক্ষক ১৯টি পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
শিক্ষকরা সহকারি রেজিষ্ট্রারের কাছে তাদের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। পদত্যাগকারি শিক্ষকরা হলেন ড. আর এম হাফিজুর রহমান সেলিম(৫টি পদ থেকে পদত্যাগ), ড. সাইদুল হক(৩টি পদ), ড. মোর্শেদ হোসেন(৪টি), শিক্ষক আলী রায়হান, তারিকুল ইসলাম, রফিউল আজম, জাহিদ হোসেন, শেখ মাজেদ, সাইদুর রহমান এবং তানিয়া তোফাজ ১টি করে পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি বিভাগের অনার্স ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
পদত্যাগ পত্রে বলা হয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ দিন ধরে সহযোগী অধ্যাপক এবং সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি বন্ধ করে রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমান প্রশাসন। কোষাধ্যক্ষের পদটি গত বছরের ১৭ আগস্ট খালি হয়ে গেলেও সে পদে কাউকে নিয়োগ না দিয়ে ভিসি নিজেই সে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এছাড়াও দুটি অনুষদের ডিন, ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক, কয়েকটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানসহ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক পদেও ভিসি এককভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এসব পদে থাকলেও তিনি বেশিরভাগ সময় ঢাকাতে অবস্থান করায় বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা কর্মকান্ড ব্যাহত হচ্ছে, প্রশাসনে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছয়টি বিভাগের শিক্ষার্থী তাঁদের স্নাতক ডিগ্রী শেষ করলেও স্নাতকোত্তর ডিগ্রীর বিধিমালা করার বিষয়ে ভিসি উদাসীন। এরফলে শিক্ষার্থীরা তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এমনকি ছাত্রদের আবাসিক হল, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটোরিয়া ও মসজিদের কাজ অনেক আগে শেষ হলেও সেগুলো চালু না করে শিক্ষার্থীদের সুবিধা বঞ্চিত করে রেখেছেন। প্রায় ছয় হাজার শিক্ষার্থী থাকলেও মেডিকেল সেন্টারের অবস্থা নাজুক। সেখানে চিকিৎসক নিয়োগের বিষয়েও তাঁর কোন পদক্ষেপ নেই। গত বছরের ৬ মে ভিসি অধ্যাপক ড. একেএম নূর-উন-নবী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮ মাস আগে যোগদান করলেও তার আমলে অবকাঠামোগত দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন হয়নি।
বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. একেএম নূর-উন-নবী দায়িত্ব গ্রহণ করার ১৮ মাসে তিনি একবারও সহযোগী এবং সহকারী অধ্যাপকদের পদোন্নতির জন্য আপগ্রেডেশনের ব্যবস্থা করেননি। দীর্ঘদিন থেকে পদোন্নতি বঞ্চিত এসব শিক্ষকরা ২৭ অক্টোবর উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। পহেলা নভেম্বর ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষক সমিতি। সংবাদ সম্মেলনে ভিসিকে এসব বিষয়ে আলটিমেটাম দেন শিক্ষকরা। কিন্ত এরপরও কোন সুরাহা না হওয়ায় আজ রোববার তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি রেজিস্ট্রার মোর্শেদ আলমের কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দেন। সহকারি রেজিস্ট্রার মোর্শেদ আলম এর সত্যতা স্বীকার করেছেন সাংবাদিকদের কাছে।
এদিকে শিক্ষকরা বিভিন্ন দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ২১টি বিভাগের অনার্স ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল আগামী ৪, ৫ ও ৬ ডিসেম্বর। কিন্তু এখন ওই সময়ে আর পরীক্ষা হবে না। এছাড়া আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনের যে সময়সীমা ছিল তাও দুসপ্তাহ বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্ধিত মেয়াদ অনুযায়ী ১০ নভেম্বরের পরিবর্তে ২৫ নভেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত মোবাইল ফোনে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. সাইদুল হক ও সাধারন সম্পাদক ড. পরিমল চন্দ্র বর্মন জানান, দাবি দাওয়া না মানায় শিক্ষকরা তাদের স্ব-স্ব দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছে।
এব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক ড. একেএম নূর-উন-নবী জানান, শিক্ষকরা তাদের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে তিনি শুনেছেন। তিনি আরো বলেন, শিক্ষকরা পদত্যাগ করায় শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা প্রহণ করা সম্ভব হবে না। তাই ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।


পিএনএস/শাহাদাৎ/সামির

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন