তবুও তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক!

  13-07-2017 08:40PM

পিএনএস ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগে বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নির্ধারিত যোগ্যতা না থাকার পরও ৬ জনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আর বিজ্ঞপ্তিতে সর্বচ্চ ৭ জনকে নেয়ার কথা থাকলেও অতিরিক্ত আরও দুইজনজনসহ মোট ৯ জনকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

২০১৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত হয়েছিল কোনো বিভাগ/ইন্সটিটিউটে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনের অতিরিক্ত একজনের বেশি নিয়োগ করা যাইবে না। অতিরিক্ত দুইজনকে নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে সিন্ডিকেটের এই সিদ্ধান্তের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন করেছে বিভাগটি। এমনকি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতেও চাতুর্যের আশ্রয় নেয়া হয়েছে।

শিক্ষক নিয়োগের ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘দুটি স্থায়ী প্রভাষকের পদ পূরণের জন্য এবং ছুটিজনিত শূন্য পদের বিপরীতে তিনজন অস্থায়ী প্রভাষক নিয়োগের জন্য রেজিস্ট্রারের দফতর হইতে প্রাপ্তব্য নির্ধারিত ফরমে বাংলাদেশি নাগরিকদের নিকট হইতে দরখাস্ত আহ্বান করা যাচ্ছে। তাৎক্ষণিকভাবে সৃষ্ট শূন্য পদের স্থলে আরও দুইজন অস্থায়ী প্রভাষক নিয়োগ করা যাইতে পারে।’

বিভাগীয় সূত্রে জানা গেছে, বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পর ১৫ জন আবেদন করেন। এদের মধ্য থেকে বিভাগের ‘সিঅ্যান্ডডি কমিটি’ ১২ জনের নাম পাঠায় সিলেকশন বোর্ডে। গত ১৫ জুন সিলেকশন বোর্ডের সভায় ৯ জনকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। অথচ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৭ জনকে নেয়ার কথা ছিল। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে গৃহীত সিদ্ধান্তকে লঙ্ঘন করেছে।

একই বিজ্ঞাপনে প্রার্থীদের যোগ্যতা প্রসঙ্গে বলা হয়, ‘প্রার্থীদের অবশ্যই ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিষয়ে চার বছর মেয়াদি বিবিএ এবং এমবিএ ডিগ্রিধারী হইতে হইবে এবং উভয় পরীক্ষায় সিজিপিএ ৪.০০ এর মধ্যে ৩.৭৫ সহ এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫.০০ এর মধ্যে ন্যূনতম ৪.২৫ থাকিতে হইবে। উপযুক্ত প্রার্থীর অভাবে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা যাইতে পারে। অন্যান্য যোগ্যতা সমান থাকিলে উচ্চতর ডিগ্রিধারীগণকে অগ্রাধিকার প্রদান করা যাইতে পারে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞাপনে এভাবে কখনো শর্ত শিথিলের বিষয়টি উল্লেখ থাকে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক মনে করেন অনুষদের প্রভাবশালী এক শিক্ষকের কন্যাকে নিয়োগ দিতেই বিজ্ঞপ্তিতে শর্ত শিথিল করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। যাতে নিয়োগের সময় সবার সমালোচনা এড়ানো যায়, সেই কৌশল হিসেবেই এভাবে বিজ্ঞপ্তিতে চালাকী করা হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।

জানা গেছে, যাদেরকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে তাদের মধ্য থেকে দুইজন স্থায়ী প্রভাষক পদে হাজেরা আক্তার ও ফাহমিদা মুস্তাফিজ এবং বাকি অস্থায়ী প্রভাষক পদে ৭ জনের মধ্যে অনামিকা দত্ত ছাড়া ৬ জনই নিয়োগের শর্ত পূরণ করছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুসারে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে ন্যূনতম সিজিপিএ ৩.৭৫ থাকতে হবে। যা এই ছয় জনের কারো নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিজ্ঞাপনের অতিরিক্ত একজন যদি নিয়োগ দিতে হয় তবে নিয়োগের বিষয়ে সিঅ্যান্ডডি কমিটির সুপারিশ সিলেকশন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্বেই বোর্ডের কাছে সে তথ্য পাঠানোর কথা। এখানে সে নিয়ম তো মানা হয়নি, সাথে নিয়ম লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত দুইজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগের চেয়ারম্যান ও সিলেকশন কমিটির সদস্য মো. রকিব উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটির মতো বিশাল জায়গায় যদি আপনি পলিসি অ্যাপ্লাই করার চেষ্টা করেন তাহলে তো কঠিন হয়ে যাবে। অনেক সময় শর্ত শিথিল করার প্রয়োজন পড়ে। তাছাড়া আমাদের বিজ্ঞপ্তিতেও শর্ত শিথিলের বিষয়টি উল্লেখ ছিল।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমেদ বলেন, ‘ওই বিভাগটিতে দীর্ঘদিন নিয়োগ হয় না। এরই মধ্যে অনেকগুলো ব্যাচ বের হয়ে গেছে। যেখানে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী রয়েছে। আমরা তাদের সুযোগ দিতে চাই। যেহেতু ভালো ভালো ছেলেমেয়ে নির্ধারিত শর্ত পূরণ করতে পারেনি, তাই বিভাগ থেকে শর্ত শিথিল করা হয়েছে।’

বিজ্ঞাপনের অতিরিক্ত নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যদি ভালো কাউকে পাই এবং জায়গা খালি থাকে তাহলে অতিরিক্ত নিলে ক্ষতি কী? যোগ্য প্রার্থী হলে তো নিতেই পারি।

সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের বিষয়ে বলেন, ‘ডিসিপ্লিন মেইনটেন্স করার জন্য আমরা সিন্ডিকেটে আইন করি। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থেই সেই আইন ভঙ্গ করতে হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, শর্ত পূরণ না করার পরেও কাউকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে আমার জানা নেই। সিলেকশন কমিটি এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবে। বিজ্ঞাপনের অতিরিক্ত নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, যদি পদ খালি থাকে, তবে বিজ্ঞাপনের অতিরিক্ত নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে।

পিএনএস/জে এ মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন