ছাত্রী হলে ‘পোশাক’-সংক্রান্ত নোটিশ নিয়ে বিতর্ক

  24-08-2017 04:07PM

পিএনএস ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলে ছাত্রীদের পোশাক-সংক্রান্ত নোটিশ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। হলের একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, গতকাল বুধবার হলের বিভিন্ন জায়গায় একটি নোটিশ টাঙানো ছিল।

এতে উল্লেখ করা হয়, হলের ভেতর দিন বা রাত হোক, কখনোই ছাত্রীদের অশালীন পোশাক (সালোয়ারের ওপর গেঞ্জি) পরা যাবে না। এ পোশাকে হলের কার্যালয়ে কোনো কাজের জন্য ঢোকা যাবে না। কেউ যদি তা করেন, তবে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে হল কর্তৃপক্ষ বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেবে।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে হলের নোটিশ বোর্ড, হলের গেটের সঙ্গে লাগোয়া দেয়াল এবং হলের অভ্যর্থনাকক্ষে গিয়ে দেখা যায়—আরেকটি নোটিশ লাগানো। দুটো নোটিশেই ‘হল কর্তৃপক্ষ’ লেখা থাকলেও এতে হল কর্তৃপক্ষের কারও কোনো সই নেই।

আজকের নোটিশে বলা হয়েছে, ‘সকল আবাসিক ছাত্রীদের জানানো যাচ্ছে যে, ছাত্রীদের কক্ষ, বারান্দা, বাথরুম ও ব্যক্তিগত এলাকা ব্যতীত অত্র অফিস এলাকায়/হল অফিসে কোন কাজের জন্য যথাযথ পোশাক পরিধান করে আসতে হবে। হলের ভাবমূর্তি রক্ষা করবার দায়িত্ব সকলের।’ —আদেশক্রমে হল কর্তৃপক্ষ।

গতকাল থেকে হল কর্তৃপক্ষের আগের নোটিশটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে চলছে তুমুল বিতর্ক। তবে হল কর্তৃপক্ষ আগের নোটিশটি হল কর্তৃপক্ষের নয়, সেটি মেয়েদের পক্ষ থেকে লাগানো হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। ছাত্রীদের কক্ষ, বারান্দা, বাথরুম ও ব্যক্তিগত-সংক্রান্ত যে নোটিশ, তা হল কর্তৃপক্ষের দেওয়া বলে জানানো হয়েছে।

আজ সকাল ১০টা থেকে পৌনে বেলা ১১টা পর্যন্ত হল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য নেওয়ার জন্য প্রতিবেদক হলের অফিস রুমে অবস্থান করেন। হলের প্রভোস্ট সাবিতা রেজওয়ানা রহমান তখন একটি বোর্ডের সভায় ছিলেন। হলের জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া একজন নারী কর্মকর্তা তখন প্রতিবেদকের উপস্থিতির কথা জানিয়ে প্রভোস্টের মুঠোফোনে খুদে বার্তা দেন। এরপর তাঁর সঙ্গে কথাও বলেন ওই কর্মকর্তা।

পরে জানান, প্রভোস্ট ব্যস্ত আছেন। কখন হলে আসবেন, এর ঠিক নেই। তখন জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া কর্মকর্তার কাছে ছাত্রীদের পোশাক-সংক্রান্ত নোটিশ সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করে তিনি বলেন, ‘অনেক দিন থেকেই বলা হচ্ছে। কিছু মেয়ে শুনছে না।’ এর বাইরে তিনি আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

হল কর্তৃপক্ষ এ ধরনের নোটিশ দিতে পারে কি না, তা জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, নোটিশের পক্ষে-বিপক্ষে অনেকে কথা বলছেন। পক্ষেই বলছেন বেশি।

তবে বেলা আড়াইটার দিকে হল কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে জানানো হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া নোটিশটি হল কর্তৃপক্ষ দেয়নি।

তবে হলে থাকা একজন ছাত্রী গতকালের নোটিশের ছবিটি দিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘গতকাল পর্যন্ত ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া নোটিশটিই হলে টাঙানো ছিল। তবে আজকে সকাল থেকে অন্য একটি নোটিশ দেখা যাচ্ছে।’

দুপুরে হলের আবাসিক শিক্ষক ড. ফাহমিদা ইয়াসমিন মুঠোফোনে বলেন, ‘হলে ২২ শ মেয়ে, তাদের বাবা, মা, গেস্টসহ অনেককে নিয়ে কাজ করতে হয়। হলের ইন্টারনাল বিষয়ে আজকের নোটিশটি দেওয়া হয়েছে। তবে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া নোটিশের দায়িত্ব হল কর্তৃপক্ষ নেবে না। আজকের নোটিশটির দায়িত্ব হল কর্তৃপক্ষ নিচ্ছে। আর ফেসবুকে যে নোটিশ, তা মেয়েদের পক্ষ থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হয়ে থাকতে পারে। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রথম আলো অনলাইনে এ ধরনের সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় আমরা লিখিত প্রতিবাদ পাঠিয়েছি।’

হল কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে মেয়েরা কীভাবে এ ধরনের নোটিশ লাগাতে পারেন—এ প্রশ্নের উত্তরে ফাহমিদা ইয়াসমিন বলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের খবর জানিয়ে অনেক সময় হল কর্তৃপক্ষ নোটিশ দেয়। মেয়েরা এই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে পারেন।

২০১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের কাছে প্রায় সাত একর জায়গার ওপর এ হলের যাত্রা শুরু। নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীর সমতা প্রতিষ্ঠায় সারা জীবন কাজ করা কবি সুফিয়া কামালের নামে হলটির নামকরণ করা হয়েছে।

আজ সকালে হল গেটে বেশ কয়েকজন আবাসিক ছাত্রীর সঙ্গে প্রতিবেদকের কথা হয়। একজন জানালেন, এক ছাত্রীকে কেন্দ্র করে হলে এ ধরনের নোটিশ টাঙানো হয়েছে। তাঁর মতে, কিছু মেয়েকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এটা ঠিকই হয়েছে। হলে পুরুষ কর্মচারীরা থাকেন। তাঁদের সামনে ভালো পোশাকে যেতে হবে।

তিন বছরের বেশি সময় ধরে হলে থাকা একজন ছাত্রী বলেন, হল কর্তৃপক্ষ ছাত্রীদের পোশাক নিয়ে এভাবে নোটিশ দিতে পারে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ বলেন, ‘হলের ভেতরে মেয়েরা তাদের কমফোর্ট বা স্বাচ্ছন্দ্য অনুযায়ী পোশাক পরবে। এ নিয়ে হল প্রশাসনের হস্তক্ষেপের সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।’

পিএনএস/জে এ/ মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন