রাবিছাত্রীকে উদ্ধারের দাবিতে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও

  17-11-2017 10:02PM


পিএনএস ডেস্ক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সামনে থেকে এক ছাত্রীকে সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তাকে উদ্ধারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করেছেন শিক্ষার্থীরা।

আজ শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (সন্ধ্যা পৌনে ৭টা) চলছিল। এর আগে নিখোঁজ ছাত্রীর সন্ধান দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দুই ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিল আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা ছাত্রী আবাসিক হলের সামনে থেকে এক ছাত্রীকে মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। অপহরণের শিকার ওই ছাত্রী বাংলা বিভাগের স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষার্থী। তিনি তাপসী রাবেয়া ছাত্রী অবাসিক হলের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার মাতাজি এলাকায়।

সকাল ৮টার পর দীর্ঘ প্রায় ৮ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও ওই ছাত্রীর কোনো সন্ধান না পেয়ে তার সহপাঠীসহ হলের শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। এরপর বিকাল সাড়ে ৪টা দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি ছাত্রী আবাসিক হলের শত শত শিক্ষার্থী উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের বাসভবনের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেয়। তারা নিখোঁজ ছাত্রীর সন্ধান দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিখোঁজ শিক্ষার্থীর সন্ধান না পেয়ে অবশেষে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে আন্দোলনরত ছাত্রীরা চলে যায়। এর পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়। তারা নিখোঁজ শিক্ষার্থীর সন্ধান দাবিতে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে প্রশাসনবিরোধী নানা স্লোগান দিতে থাকেন। সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।

এর আগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের চোখের সামনে আমাদের সহপাঠীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার স্বামীর সাথে তালাক হয়েছে। আইনত তালাক কার্যকর না হলেও তাকে কেউ এভাবে নিয়ে যেতে পারে না। এভাবে হলের সামনে একটা মেয়েকে তুলে নিয়ে গেল। ক্যাম্পাসে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? আজ তাকে নিয়ে গেছে কাল অন্য কাউকে নিয়ে যাবে।

শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস ঘটনাস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। পরে বিকেল ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবদুস সোবহান বাসভবন থেকে বেরিয়ে আসেন। তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে তাদের আন্দোলন স্থগিত করতে বলেন। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ‘অযৌক্তিক’ উল্লেখ করে তাদের বলেন, ‘এটা তাদের স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপার। স্বামী তার স্ত্রীকে নিয়ে গেছে। অন্যায় হলে সেটা আইন দেখবে। এখানে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’

উপাচার্য ওই ছাত্রীকে দ্রুত সময়ের মধ্যে খুঁজে বের করার আশ্বাস দিলেও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। পরে উপাচার্য ব্যর্থ হয়ে তার বাসভবনে ফিরে যান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমি পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা, র‌্যাবকে জানিয়েছি। তারা খোঁজ খবর নিয়ে দেখছে। ওই ছাত্রীকে খুঁজে বের করতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।’

আন্দোলনের এক পর্যায়ে ওই ছাত্রীর বাবা ঘটনাস্থলে আসেন। পরে তিনি উপাচার্যের সাথে কথা বলার জন্য তার বাসভবনে প্রবেশ করেন। উপাচার্যের সাথে প্রায় আধাঘণ্টা কথা বলে বেরিয়ে এসে প্রশাসনের পদক্ষেপের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘আমি এখনো আমার মেয়ের কোনো সন্ধান পাইনি। এজন্য আমি খুবই উদ্বিগ্ন। এখনো জানি না আমার মেয়েকে কে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। তবে তার স্বামী আমার মেয়েকে ‘উঠিয়ে নিয়ে যাবে’ বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমার মেয়েকে উদ্ধারে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। আমার প্রশাসনের কাছে দাবি থাকবে আমার মেয়েকে যেন দ্রুত ফিরিয়ে দেয়।’

প্রসঙ্গত, শুক্রবার সকালে ভুক্তভোগীসহ তার তিনজন সহপাঠী স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা দেয়ার উদ্দেশে হল থেকে বের হন। এসময় বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা হলের সামনে সাদা মাইক্রোবাসে তার সাবেক স্বামী সোহেল রানাসহ ৫-৬ জন যুবক তার পথরোধ করে জোরপূর্বক তাকে তুলে নিয়ে যায়।

পিএনএস/কামাল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন