উত্তরা মেডিকেলে ভর্তিতে মেধাতালিকাকে উপেক্ষা

  17-12-2017 03:10PM

পিএনএস ডেস্ক : উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজে মেধাতালিকাকে উপেক্ষা করে ‘আগে এলে আগে পাবেন’ ভিত্তিতে ভর্তি প্রক্রিয়া চলছে। ফলে মেধাতালিকার সামনের সারিতে থাকা অনেকে ভর্তির সুযোগ পাবেন না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

এই কলেজে মোট আসন ৯০টি। এর মধ্যে বিভিন্ন কোটায় ১৮টি । আর সাধারণ কোটায় ৭২টি আসন। এর মধ্যে গত ১১ ডিসেম্বর প্রথম দিনে ১৫টি আসনে ভর্তি হয়ে যান শিক্ষার্থীরা। আজ বাকি ৫৭ আসনে ভর্তি চলছে।

কলেজের অধ্যক্ষ আকরাম হোসেন বলেন, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর ভর্তির নোটিশ প্রকাশ করা হয়। এরপর তাঁদের কাছ থেকে ৯০০ শিক্ষার্থী ভর্তি ফরম সংগ্রহ করেন। প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশ করে ৭৩ জনকে ডাকা হয় (মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার তালিকায় সিরিয়াল ৭০৮১ পর্যন্ত)। ১১ ডিসেম্বর ভর্তি হন ১৫ জন। সাধারণ কোটার বাকি ৫৭ আসনের জন্য ১৪ ডিসেম্বর দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ করা হয়। এই তালিকার ৭৪ নম্বর সিরিয়াল থেকে ৫১৩ পর্যন্ত ডাকা হয়। সেদিন বিকেল পাঁচটার দিকে নোটিশ বোর্ডে ও সাড়ে পাঁচটায় ওয়েবসাইটে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়। আজ দ্বিতীয় মেধাতালিকা অনুযায়ী ভর্তির তারিখ।

সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় থেকে মেধাতালিকায় থাকা শিক্ষার্থীরা তাঁদের অভিভাবকদের নিয়ে কলেজে ছুটে আসেন। বেলা একটার দিকে কলেজের সাত তলায় অফিস কক্ষের সামনে প্রায় ৩০০ জনের মতো শিক্ষার্থীর ভিড় দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের অনেকেই অভিযোগ করেন, মেধাতালিকায় পেছনের দিকে থেকেও অনেকে আগেই ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে আগে এসে অফিস কক্ষে পে স্লিপ জমা দিয়ে ভর্তির টোকেন নিয়ে দাঁড়িয়ে গেছেন।

এখানে মেধাতালিকা অনুযায়ী কোনো সিরিয়াল নেই। কাউকে সে অনুযায়ী ডাকাও হচ্ছে না। আগে এলে আগে পাবেন ভিত্তিতে চলছে ভর্তিপ্রক্রিয়া। অথচ এ ধরনের কোনো কথা নোটিশের কোথাও বলা ছিল না। কয়েকজন অভিযোগ করেন, যাঁদের আগে থেকে এখানে পরিচিত আছে বা যোগাযোগ করেছেন, তাঁরাই অন্যায়ভাবে ভর্তির সুযোগ নিচ্ছেন।

অভিভাবকের কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয় বিকেলে পাঁচটায়। তখন ব্যাংক বন্ধ। অথচ ওই দিনই ১৭ জন শিক্ষার্থী পে অর্ডার (১৫ লাখ ৮৬ হাজার) জমা দেন। এটা কেমন করে সম্ভব? তাঁরা আজ সকালে এসে ভর্তি হয়ে যায়। এরপরও আমরা অনেকক্ষণ লাইন ধরে আছি। কিন্তু ভেতর থেকে অফিসের লোকজন ডেকে ডেকে লাইন থেকে কাউকে কাউকে নিয়ে যাচ্ছে। এখানে কোনো নিয়মশৃঙ্খলা নেই। এর প্রতিবাদ করলে পুলিশ এসে আমাদের ওপর চড়াও হয়।’

আগে এলে আগে ভর্তির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, ‘গত বছর আমরা মেধাতালিকা অনুযায়ী ডেকেও শিক্ষার্থী পাইনি। তাই আমরা এবার এই পদক্ষেপ নিয়েছি।’ কে আগে এসেছে, কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি। আর বৃহস্পতিবার পে অর্ডার জমা দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি ব্যাংকের বিষয়। হয়তো তাদের সিরিয়াল সামনের দিকে। তাই হয়তো তারা আগাম জমা দিয়ে রেখেছিল।

ভর্তির টোকেন নিয়ে ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকা একজন তাহসান আহমেদ। তাঁর সিরিয়াল ৩৪০। (মেধাতালিকায় সিরিয়াল ১৪৫৫৬)। তিনি বলেন, ‘আমি বৃহস্পতিবার নোটিশ দেখে গেছি। আজ সকালে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে ভর্তির জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছি।’

যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে পাস শেখ কল্লোল এখানে ভর্তির জন্য এসেছেন। তাঁর এখানকার সিরিয়াল ৩১২। ভর্তির টোকেন নম্বর ৩৫। তিনি বলেন, বৃহস্পতি ও শুক্রবারও কলেজের ওয়েবসাইটে খুঁজে তিনি কিছু পাননি। আগে এলে আগে পাবেন সে রকমও কিছু ছিল না। কিন্তু তার বাবা খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে জানতে পেরেছেন।

৯০০ জনের মধ্যে ১৬৭ নম্বর সিরিয়ালে থেকেও তখনো বাইরে পে অর্ডার নিয়ে অপেক্ষায় ভৈরব থেকে আসা জিদনী তানহা ।

মেধাতালিকায় তাঁর স্থান ১০০০৪। তিনি বলেন, অফিসে যোগাযোগ করলে তাঁকে বলা হয় আপনি ভর্তি হতে পারবেন। ১৭ তারিখ চলে আসেন। এই দিনই শেষ দিন। কিন্তু ১২টার পর তিনি এসে পৌঁছান। দেখেন এখানে মেধাতালিকা অনুযায়ী কিছুই হচ্ছে না। তিনি এখনো টাকা জমা দিতে পারেননি।

সিরিয়ালে ১৩৮ নম্বরে থাকা এক তরুণী। তিনি ঢাকার ফার্মগেট থেকে এসেছেন। বলেন, তিনি ওয়েবসাইটে কিছু খুঁজে পাননি। আত্মীয়ের মাধ্যমে খবর পেয়ে এসেছেন। টাকাও জমা দিয়েছেন। কিন্তু ভেতরে ঢুকতে পারেননি।

তারেক আহমেদ এমনই একজন ভর্তিচ্ছু। মেধাতালিকায় তাঁর স্থান ৭১৪০। তাঁর ভর্তির টোকেন নম্বর ৪৬।

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন