জাবিতে ১২০০ কোটি টাকার প্রকল্প ঘিরেই কি দ্বন্দ্ব?

  04-06-2018 07:30PM

পিএনএস ডেস্ক : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) জন্য ১ হাজার ২০৮ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ প্রকল্প ঘিরে বিভাজন তৈরি হয়েছে ক্ষমতাসীন দলপন্থী শিক্ষকদের দুই অংশের মধ্যে। প্রকল্পে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে মরিয়া দুপক্ষই। এ নিয়ে আন্দোলন-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি আদালত পর্যন্তও গড়িয়েছে বিষয়টি।

জানা গেছে, প্রকল্পে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় ক্ষমতাসীন দলপন্থী শিক্ষকদের দুটি গ্রুপই প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিজেদের অনুসারীদের বসাতে চাইছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের পক্ষে একটি অংশের সামনে রয়েছেন অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ। এ অংশটির পেছনে রয়েছেন সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবীর।

দ্বিতীয় মেয়াদে অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে অধ্যাদেশ লঙ্ঘন করে নিয়োগের অভিযোগ এনে ‘উপাচার্য প্যানেল’ নির্বাচনের দাবিও করেছে পক্ষটি। এমনকি এ নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিটও করেন সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবীর এবং নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক লুত্ফর রহমান।

এ প্রশাসনের অধীনে প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শরীফ এনামুল কবীর। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। নিয়মানুযায়ী প্রতি তিন মাস অন্তর একাডেমিক কাউন্সিলের সভা হওয়ার কথা। কিন্তু গত আট মাসের মধ্যে একবার এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত উপস্থাপনের পর আর সিন্ডিকেট সভা হয়নি।

এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মান দিনদিন হ্রাস পাচ্ছে। এই দুর্বল প্রশাসনের পক্ষে এত বড় বাজেটের প্রকল্প বাস্তবায়ন ভীষণ দুরূহ হয়ে দাঁড়াবে।

বঙ্গবন্ধু-আদর্শের শিক্ষক পরিষদ পক্ষটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন এর আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. নূরুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক বশির আহমেদ। প্রকাশ্যে না হলেও পরোক্ষভাবে সিনেটে রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক মঞ্চ করে একটি গ্রুপ দাঁড়িয়েছিল। তবে মেয়াদ শেষ হওয়া ও অসহযোগিতার অভিযোগে প্রশাসনের বিভিন্ন পদ থেকে উপাচার্যবিরোধী কয়েকজনকে সরিয়ে নিজেদের শিক্ষকদের বসানোর মাধ্যমে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে বঙ্গবন্ধু-আদর্শের শিক্ষক পরিষদ।

এ দ্বন্দ্বের মূলে যে উন্নয়ন প্রকল্প, তা বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মঞ্চের মুখপাত্র সহযোগী অধ্যাপক মো. জহির রায়হান (রায়হান রাইন) এ প্রসঙ্গে বলেন, সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ যাদের হাতে থাকে, উন্নয়ন প্রকল্পও তারাই

নিয়ন্ত্রণ করেন। অনেক সময় ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যই আন্দোলন হয়ে থাকে।

যেহেতু সামনে বড় একটি উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে, বর্তমান দ্বন্দ্বের পেছনে তার একটি প্রভাব আছে বলে ধরে নেয়া যায়। বর্তমানে যারা উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে আন্দোলন করছেন, সেই অনিয়মগুলো সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবীরও করেছেন। তবে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে ‘উপাচার্য প্যানেল’ নির্বাচনের দাবিটি আমরাও করছি।

‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন’ শীর্ষক ১ হাজার ২০৮ কোটি ৬২ লাখ টাকার প্রকল্পটি আড়াই বছর ধরেই আলোচনায় ছিল। দ্বন্দ্বের সূত্রপাতও এর পর থেকে। প্রি-একনেকে পাস হওয়া প্রকল্পটির আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক, একাডেমিক, লাইব্রেরি ও আবাসিকসহ বিভিন্ন ভবন নির্মাণ করা হবে।

প্রকল্পটির আওতায় যেসব বড় কাজ করা হবে তার মধ্যে আছে— ১২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ তলা প্রশাসনিক ভবন ও ২০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন হাজার ছাত্রীর আবাসনের জন্য ১০ তলার তিনটি হল এবং একই অর্থ ব্যয়ে তিন হাজার ছাত্রের আবাসন সুবিধার জন্য ১০ তলাবিশিষ্ট আরো তিনটি হল নির্মাণ। এছাড়া হাউজ টিউটরদের ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ তলা বাসভবন, প্রভোস্টদের জন্য ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ তলা আবাসিক কমপ্লেক্স, শিক্ষকদের জন্য ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১১ তলার আবাসিক টাওয়ার এবং কর্মকর্তাদের জন্য সমপরিমাণ অর্থ ব্যয়ে ১১ তলার আবাসিক টাওয়ারও নির্মাণ করা হবে প্রকল্পটির আওতায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন বলেন, পরিকল্পনা কমিশনের প্রজেক্ট ইভ্যালুয়েশন কমিটির (পিইসি) সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা যাচাইয়ের কাজ চলছে। এরপর প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পাবে বলে আশা করছি।

প্রকল্পটির আওতায় ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সাততলাবিশিষ্ট নতুন লাইব্রেরি ভবন নির্মাণেরও কথা রয়েছে। এছাড়া ১০ তলাবিশিষ্ট লেকচার থিয়েটার ও পরীক্ষা হল নির্মাণে ব্যয় হবে ৫০ কোটি টাকা। পাশাপাশি ছয়তলার সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবনের অনুভূমিক সম্প্রসারণে ৫৬ কোটি এবং তিনতলা স্পোর্টস কমপ্লেক্স নির্মাণে ৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে। প্রকল্পের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাই আন্দোলনের মূল কারণ বলে মনে করছেন শিক্ষকদের কেউ কেউ।

যদিও উপাচার্যপন্থী একাধিক শিক্ষকের অভিযোগ, ২০০৯ সালে শরীফ এনামুল কবির উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরই ‘উপাচার্য প্যানেল’ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সে দাবিকে তিনি আমলে নেননি। সিনেটের শিক্ষক প্রতিনিধি ও রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর শরীফ এনামুল কবিরের এ দাবির পেছনে বড় ধরনের স্বার্থ রয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আমার প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের একমাত্র আবাসিক এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে যেকোনো প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করেই উন্নয়নে সচেষ্ট ছিলাম। সামনের দিনেও থাকব।-বণিক বার্তা

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন