চট্টগ্রামে বিশ্বের প্রথম মানব হাড়ের লাইব্রেরি

  14-09-2018 09:26AM

পিএনএস ডেস্ক : লাইব্রেরি শব্দটি মনে হলেই যে কারও চোখে ভেসে উঠবে সারি সারিভাবে সাজানো বইয়ের ভাণ্ডার। তবে এবার বন্দরনগরী চট্টগ্রামে গড়ে উঠেছে এমন এক ব্যতিক্রমী লাইব্রেরি যা শুধু বাংলাদেশেই প্রথম নয়; যা নেই সারাবিশ্বের আর কোথাও। এই লাইব্রেরি সাজানো হয়েছে বই দিয়ে নয়; বরং মানব শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড় দিয়ে। যার নাম দেওয়া হয়েছে বোনস লাইব্রেরি। আশ্চর্য মনে হলেও এমন অসম্ভবকে সম্ভব করেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক)। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বলছেন, একাডেমিক জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি এই লাইব্রেরিতে মেডিকেল শিক্ষার্থীরা হাড় নিয়ে নানামুখী গবেষণা ও জ্ঞান চর্চারও সুযোগ পাবেন।

জানা গেছে, চমেক নতুন একাডেমিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় নির্মিত এই লাইব্রেরিতে মানবদেহের বিভিন্ন অংশের হাড় সংরক্ষণ করা হয়েছে। বিশিষ্ট চিকিৎসক মনসুর খলিলের নামে নামকরণ করা হয়েছে এই বোনস লাইব্রেরির।

সরেজমিন গিয়ে লাইব্রেরিরে ঢুকতেই এর প্রবেশমুখে চোখে পড়ে মানুষের একটি আস্ত কঙ্কালের। একটু ভেতরে যেতেই ধীরে ধীরে দেখা যায় মানুষের মাথা, পাঁজর, মেরুদণ্ড, হাত, পাসহ নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের হাড়ের। বোঝার সুবিধার্থে প্রতিটি হাড়ের বৈজ্ঞানিক নামও রাখা হয়েছে এখানে। একই সঙ্গে সারিবদ্ধভাবে সাজানো প্রতিটি হাড়ের পাশে রাখা হয়েছে এর শারীরিক অবস্থান, নাম্বার এবং অস্থির কোন অংশের কি নামসহ যাবতীয় তথ্যও।

কর্তৃপক্ষের দাবি, এটি বিশ্বের প্রথম বোনস লাইব্রেরি। বর্তমানে এখানে মানব শরীরের ১৫ সেট হাড় সংরক্ষণ করা হয়েছে। এসব সেট একাডেমিকভাবে কাজে লাগাতে পারবেন ২৫০ শিক্ষার্থী। তবে আগামী জানুয়ারির মধ্যে এখানে ৫০ সেট হাড় সংরক্ষণ করা হবে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সুবিধার জন্য লাইব্রেরিতে বোনস ইস্যুকরণেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। লাইব্রেরিতে বসে শিক্ষার্থীরা যাতে হাড় নিয়ে নানামুখী গবেষণা ও জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পান, সেজন্য রাখা হয়েছে গোলাকার বেশ কিছু টেবিলও।

সম্প্রতি ব্যতিক্রমী এ লাইব্রেরি দেখতে এসেছিলেন চমেক হাসপাতাল পরিচালনা পর্যদ সভাপতি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এ সময় তিনি এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, চমেক কলেজ ছাত্র সংসদ ও ছাত্রলীগের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশে প্রথমবারের মতো বোনস লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাদের এমন সৃজনশীল উদ্যোগ দেশের মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে এটি অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেও দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

চমেক অধ্যক্ষ ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, বোনস লাইব্রেরি চালুর বিষয়টি দেশের জন্য একটি দৃষ্টান্ত। এটিই বিশ্বের একমাত্র বোনস লাইব্রেরি। দেশের কোনো মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের লাইব্রেরি নেই। মেডিকেলে অধ্যয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো বোনস লাইব্রেরি। যে কাজ অন্য কেউ করতে পারেনি, সেটিই আমরা করে দেখিয়েছি। এর মাধ্যমে জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি এই লাইব্রেরিতে বসে মেডিকেল শিক্ষার্থীরা হাড় নিয়ে নানামুখী গবেষণা ও জ্ঞানচর্চার সুযোগ পাবে।

চমেক ছাত্রলীগের সভাপতি ডা. নাহিদ হাসান বলেন, এই প্রতিষ্ঠান সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে। এসব কাজ করা হয় ছাত্রলীগ মনোনীত ছাত্র সংসদে বিজয়ী প্যানেলের মাধ্যমে। বোনস লাইব্রেরি এসব কাজের সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত। এটি স্থাপনের একমাত্র উদ্দেশ্য মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান যাদের জন্য ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায় একসেট বোনস কেনা খুবই কষ্টসাধ্য তাদের উপকার করা। লাইব্রেরিটি স্থাপন করতে দিন রাত কাজ করতে হয়েছে। কলেজের এনাটমি ডিসেকশন থেকে সাতটি ফুল সেট পাই ও আটটি সেট বোনস পাই আমরা পেয়েছি ডোনেশন হিসেবে।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন