সন্দেহ ও অবিশ্বাস ছাত্রলীগে

  15-03-2019 08:21AM


পিএনএস ডেস্ক: বহুপ্রতীক্ষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচন শেষ হলেও রেশ এখনো কাটছে না। এ নির্বাচনে নানা অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগে আন্দোলন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে সরকারবিরোধী ছাত্রসংগঠনগুলো। পুনরায় নির্বাচনের দাবিতে অনশনও করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ। তবে ছাত্রলীগ ডাকসু নির্বাচনের ফল মেনে নিলেও এ নির্বাচন সরকার সমর্থিত ছাত্রসংগঠনে চরম সন্দেহ, অবিশ্বাস ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। ছাত্রলীগ প্যানেল বিপুল ভোটে জয়ী হলেও ভিপিসহ হেরে যাওয়া মাত্র দু’টি পদে ভোটের ব্যবধান কোনোভাবেই মানতে পারছে না নেতাকর্মীরা। বিষয়টি নিয়ে চরম অস্বস্তি বিরাজ করছে ক্ষমতাসীন দলে।

সরকারের বিভিন্ন সূত্র জানায়, ছাত্রলীগ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে জোর করে হারিয়ে দেয়া হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের মতো নির্বাচনের আগের রাতে সিল মারাসহ নানা অনিয়ম ও কারচুপির প্রতিবাদে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল হয়ে উঠলে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে ভিপি পদটি ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। আর শোভনকে হারিয়ে দিয়ে ক্যাম্পাস শান্ত রাখার চেষ্টা করে সরকারের কর্তাব্যক্তিরা। শিক্ষাঙ্গনে স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে শোভনও হাইকমান্ডের এ সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। শোভনের এমন ইতিবাচক মনোভাব ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। তাকে ত্যাগী ও আদর্শবান ছাত্রনেতা হিসেবে উল্লেখ করে ভবিষ্যতে আরো বড় কোনো জায়গায় প্রত্যাশা করে পোস্ট করেছেন হাজারো শুভাকাক্সক্ষী। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের কাছেও ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন তিনি।

তবে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অনেকের মতে, শুধু সরকারই নয়- ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং, ঈর্ষা ও আঞ্চলিকতার বলি হয়েছেন ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন। নিজেদের জয় নিশ্চিত করতে ছাত্রলীগ প্যানেলের অন্য প্রার্থীরা রাতের আঁধারে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাকর্মীদের সাথে আঁতাত করেন। তাদের অনেকেই গোপনে কোটা আন্দোলনের প্রার্থীদের সাথে অদৃশ্য প্যানেল তৈরি করে নিজেদের বিজয় নিশ্চিত করেছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলন সমর্থিত ভিপি নুরুল হক নূরের ভোটের সাথে ছাত্রলীগ প্যানেলের বিজয়ী অনেকেরই ভোট কাছাকাছি হওয়ায় এমনটাই মনে করছেন নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগ প্যানেলের জিএস ও এজিএসসহ বড় কয়েকটি পদে প্রার্থীদের বাড়ি দক্ষিণবঙ্গে। নির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নূরের বাড়িও দক্ষিণবঙ্গে। আঞ্চলিকতার ভিত্তিতে কোটা আন্দোলনসহ ছাত্রলীগ নেতাদের একটি প্যানেল তৈরি করা হয়। তারা শুধু ওই অঞ্চলের প্রার্থীদের নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। এ ছাড়া ছাত্রলীগ এবং ডাকসু নির্বাচনের দায়িত্ব পাওয়া দক্ষিণবঙ্গের নেতারাও উত্তরবঙ্গের শোভনকে ভিপি হিসেবে মেনে নিতে পারেননি। ফলে শেষ পর্যন্ত শোভনের পরাজয় অনিবার্য হয়ে যায়।

এবারের ডাকসুতে ভোটের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ছয়জন প্রার্থী ১১ হাজারের কম বেশি ভোট পেয়েছেন। কোটা আন্দোলনের ভিপি নূর পেয়েছেন ১১ হাজার ৬২ ভোট। আর বাকি সবাই ছাত্রলীগ প্যানেলের। এর মধ্যে এজিএস সাদ্দাম পেয়েছেন ১৫ হাজার ৩০১ ভোট। তিনিই সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন। সদস্য পদে যোশীয় সাংমা চিবল ১২ হাজার ৮৬৮, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সা’দ বিন কাদের চৌধুরী ১২ হাজার ১৮৭, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক শামস ই নোমান ১২ হাজার ১৬৩ এবং সদস্য পদে রফিকুল ইসলাম ঐতিহ্য ১১ হাজার ২৩২ ভোট পান। এ ছাড়া ছাত্রলীগ প্যানেলের জিএস গোলাম রাব্বানীর ভোটও কাছাকাছি।

ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাথে শুরুর দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অনেক নেতাই সম্পৃক্ত ছিলেন। কিন্তু সরকারের কঠোর অবস্থান এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির পর তাদের অনেকেই কেটে পড়েন। তবে প্রশাসন ও ক্ষমতাসীনদের দমন-পীড়নের মুখেও আন্দোলন অব্যাহত রেখে ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নজর কাড়েন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। সুষ্ঠু ভোট হলে কোটা সংস্কার আন্দোলন সমর্থিত নূর-রাশেদ প্যানেল বিপুল ভোটে জয়ী হবে এমন আশঙ্কা ছিল ক্ষমতাসীনদের মধ্যেও। ফলে ভেতরে ভেতরে ছাত্রলীগ প্যানেলের প্রার্থীরাও কোটা আন্দোলন নেতাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন। এ ক্ষেত্রে শোভনকে হারানোর পেছনে ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী ও এজিএস সাদ্দামকে ভিলেন হিসেবে মনে করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। নুরুল হক নূরের সাথে তাদের পরোক্ষ যোগাযোগের বিষয়টিও উল্লেখ করেন তারা। সংগঠন এবং ক্যাম্পাসে নিজেদের কর্তৃত্ব জোরদার করতে কৌশলে শোভনকে হারিয়ে দেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক নেতা বলেন, ‘এ নির্বাচন ছাত্রলীগের মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছে। একই প্যানেলের প্রায় সবাই কাছাকাছি ভোট পেলেও ছাত্রলীগ সভাপতির ভোট কম কেন তা নিয়ে সবার কাছে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ছাত্রলীগে কারা ঘাপটি মেরে আছে তাদের অবিলম্বে খুঁজে বের করতে হবে। সে জন্য প্রয়োজনে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করতে পারে আওয়ামী লীগ। না হলে এই বিভক্তি ভবিষ্যতে আরো খারাপ কিছু বয়ে আনতে পারে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন