নিরাপদ শ্রেণীকক্ষের অভাবে কোমলমতী শিশুরা স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে

  18-04-2019 04:47PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : বরগুনায় সম্প্রতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের ছাদ ধসে এক শিশু শিক্ষার্থী প্রাণ হারিয়েছে। মারাত্মক জখম হয়েছে আরো তিনজন। সহপাঠীর দুঃখজনক পরিণতিতে কোমলমতী শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে। ঘটনার পর সারা দেশে এমন ঝুঁকিপূর্ণ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খবর আসছে মিডিয়ায়।

সিলেটের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খবর এসেছে একটি জাতীয় দৈনিকে। দৈনিকটির খবরে প্রকাশ, নিচতলা ঝুঁকিপূর্ণ, অথচ দোতলার কাজ চলছে। এতে শঙ্ক্ষিত শিশু শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। সমানভাবে আতঙ্কিত অভিভাবকরা। দৈনিকটি সচিত্র প্রতিবেদন করেছে। খবরটি সচেতন যে কাউকে ভীত না করে পারে না। বিষয়টি শিশু শিক্ষার ক্ষেত্রে স্পষ্ট বাধা ও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ানোর আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ঝুঁকিপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এভাবে শিশু শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

মিডিয়ায় আরো একটি আতঙ্ক সৃষ্টিকারী খবর এসেছে যে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার ফতেহপুর উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের ছাদে ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদ থেকে প্রায়ই খসে পড়ছে পলেস্তারা। বেরিয়ে আছে রড। ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে ইতিমধ্যে অনেকে আহত হয়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আহতও হচ্ছেন। এর পরও ঝুঁকি নিয়ে ভবনটিতে পাঠদান চলছে। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। ঘটতে পারে জগন্নাথ ট্র্যাজেডির মতো

সর্বশেষ গত মঙ্গলবার সকালে পাঠদানের সময় ঝড় শুরু হলে ভবনটির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কক্ষের ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর পড়ে। এতে প্রথম শ্রেণীর ইমন মিয়া এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর ফজলুল হক, মিতা আক্তার, মো. জাহিদুন আহত হয়। সহকারী শিক্ষক জেবুন্নেছা কবির ও দিলরুবা আক্তারের পিঠেও পলেস্তারার টুকরো পড়ে। আহত শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, ছাদ থেকে কংক্রিট পড়ায় ক্লাস করতে তাদের ভয় লাগে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যালয়টির উত্তর পাশে পাঁচ কক্ষবিশিষ্ট একটি পুরোনো ভবন রয়েছে। প্রায় চার বছর আগে উপজেলা প্রশাসন মৌখিকভাবে এটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। এ ছাড়া ১৯৯৫ সালে নির্মিত একটি ভবন ও ২০০৮ সালে নির্মাণ করা আরেকটি ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ১৯৯৫ সালে নির্মিত ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। বিদ্যালয়টিতে অফিস কক্ষ, শিশু শ্রেণী, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমসহ অন্তত ৯টি কক্ষ দরকার। সেখানে দুটি ভবনে রয়েছে ছয়টি কক্ষ।

সহকারী শিক্ষক মনি রানী শীল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ১৫ বছর ধরে এ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছি। এখন পরিস্থিতি আরও খারাপ। এখন তো ঝড়ের দিন। একটু আকাশ খারাপ হলেই ভয়ে মনটা আঁতকে ওঠে। কখন যে পুরো ভবনটি ধসে পড়ে—এই ভয়ের মধ্যেই থাকতে হয়।’ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শরীফ রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় শিশুদের নিরাপত্তায় দ্রুত কী করা যায়, সে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

সব কিছুর একটা মেয়াদ থাকে। যে ভবনটি ১৯৯৫ ও ২০০৮ ভবনগুলো এত দ্রুত ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা উচিত। একইভাবে বরগুনায় ঘটনায় নিহত ও আহতদের ব্যাপারটি মাথার রেখে সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদার ও তদারককারী ইঞ্জিনিয়ারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ জরুরি। এক্ষেত্রে কাজের মান ও হত্যা দুটি অভিযোগ আনতে হবে। এ দায় ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়ার এড়াতে পারেন না।

যেকোনো নির্মাণ কাজের একটা ন্যূনতম স্থায়িত্বকাল নিশ্চয় আছে। এর আগে কোনো সমস্যা হলে এর দায় সংশ্লিষ্ট ঠিকারদার ও তদারককারী ইঞ্জিনিয়ারকে নিতে হবে- এমন একটি শর্ত থাকা বাঞ্ছনীয়। একসময় ঢাকার মেয়র থাকা অবস্থায় মির্জা আব্বাস রাস্তার কাজে পাঁচ বছর পর বিল দেওয়ার একটা নিয়ম চালু করেন। এতে ঠিকাদারের কাজে ফাঁকিবাজির সুযোগ অনেকটা হ্রাস পায়। এসব ক্ষেত্রেও টাকার একটা অংশ নির্দিষ্ট সময়ের পরে দেওয়া যেতে পারে কিনা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার।

সচেতন জনগোষ্ঠী, অভিভাবক, শিক্ষক ও কোমলমর্তী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে নিরাপদ শ্রেণীকক্ষের দাবি উঠেছে। যে দাবি যৌক্তিক। যে শিশুরা পাঠদানের জন্য শ্রেণী কক্ষে যাবে, সেটা ঝুঁকিপূর্ণ এবং জীবনহরণের কারণ হলে শিশুরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে ভয় পাবে, এটাই স্বাভাবিক। ইতিমধ্যে যে ভয়-আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এটা শিশু শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা বৈকি। নিরাপদ ও ঝঁকিমুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চিহ্নিতপূর্বক অনতিবিলম্বে সংস্কার জরুরি বলে মনে করছে অভিজ্ঞ মহল।

প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন