সাত দিন পর ক্লাসে বুয়েট শিক্ষার্থীরা

  22-06-2019 02:37PM


পিএনএস ডেস্ক: ক্লাসে ফিরেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। একটানা আন্দোলন করে সাতদিন পর শনিবার তারা ক্লাসে ফিরে। ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের নবনিযুক্ত পরিচালককে অপসারণ ও সাবেকুন নাহার সনির নামে ছাত্রী হলের নামকরণ করাসহ ১৬ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে লিখিত আশ্বাস (নোটিশ) পাওয়ার পরই শিক্ষার্থীরা আজ ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন।

লিখিত আশ্বাস অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের ১৬ দফা দাবির কয়েকটি বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও কয়েকটির ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। একাডেমিক কয়েকটি বিষয়ের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী, সিদ্ধান্ত নেবে কাউন্সিলকে অনুরোধ করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

আন্দোলনে অংশ নেয়া একজন বুয়েট শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, শুক্রবার রাত একটার পর তারা লিখিত আশ্বাসের ওই নোটিশ পান। পরে সবার সম্মতিতে শনিবার থেকেই ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন তারা।

১৫ জুন ঈদের ছুটি শেষে বুয়েট খোলার দিন থেকেই ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ওই আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। টানা আন্দোলনের ষষ্ঠ দিনে বৃহস্পতিবার বুয়েট ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে চার ঘণ্টার বৈঠক শেষে তাদের দাবিদাওয়া মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুক্রবার শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর বিষয়ে লিখিত আশ্বাস দেওয়ার কথাও জানান তিনি।

শিক্ষার্থীদের ১৬ দফা দাবি
শিক্ষার্থীদের ১৬ দফা দাবি ছিল: বুয়েট ফটক নির্মাণের জন্য সিভিল-আর্কিটেকচার বিভাগের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি গঠন ও নকশার জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা আয়োজন করার আনুষ্ঠানিক নোটিশ, নতুন নিয়োগ পাওয়া বিতর্কিত ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালককে অপসারণ করে শিক্ষার্থীবান্ধব কাউকে নিয়োগ, ২০০২ সালে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত বুয়েট ছাত্রী সাবেকুন নাহার সনির নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলের নামকরণ, ডাবল সাপ্লিমেন্ট পরীক্ষা দেওয়ার পদ্ধতিটি পুনর্বহাল, আবাসিক হলগুলোর অবকাঠামোগত কাজগুলো দ্রুত সম্পাদন, সিয়াম-সাইফ সুইমিংপুল কমপ্লেক্স স্থাপনের জন্য উপাচার্যের স্বাক্ষরে নোটিশ, নির্মাণাধীন টিএসসি ভবন ও ন্যাম ভবনের কাজ সম্পন্ন করা, নিয়মিত শিক্ষক মূল্যায়ন প্রোগ্রাম চালু করা, যাবতীয় লেনদেনে ডিজিটাল পদ্ধতির প্রবর্তন, নির্বিচারে ক্যাম্পাসের গাছ কাটা বন্ধ করা ও যত গাছ কাটা হয়েছে উপাচার্যের উপস্থিতিতে তার দ্বিগুণ গাছ রোপণ, গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি, শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক ইমেইল আইডি দেওয়া, ক্যাম্পাসে ওয়াইফাই ব্যবস্থার উন্নয়ন, ব্যায়ামাগার আধুনিকায়ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠের উন্নয়ন এবং পরীক্ষার খাতায় রোল নম্বরের পরিবর্তে কোড সিস্টেম চালু।

যে দাবির ব্যাপারে যে আশ্বাস দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন:
বুয়েট ফটক নির্মাণের জন্য সিভিল-আর্কিটেকচার বিভাগের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ইতিমধ্যেই একটি কমিটি করা হয়েছে এবং নকশার জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা আয়োজন করার আনুষ্ঠানিক নোটিশ শিগগিরই জারি করা হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের নবনিযুক্ত পরিচালক অধ্যাপক আবুল কাশেম মিয়া পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। শিগগিরই এই পদে শিক্ষার্থীবান্ধব একজন শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হবে। সাবেকুন নাহার সনির নামে ছাত্রী হলের নামকরণের বিষয়টি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মকানুন পর্যালোচনা করে ছাত্রী হলের নাম পরিবর্তনের বিষয়ে মতামত দিতে ইতিমধ্যেই উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি করা হয়েছে। ডাবল সাপ্লিমেন্ট পরীক্ষার বিষয়টি একাডেমিক কাউন্সিলের আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

আবাসিক হলগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজ দ্রুত সম্পাদনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে জানায় প্রশাসন৷ এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা তাঁদের প্রয়োজনীয় কাজের অগ্রাধিকারভিত্তিক তালিকা দেবেন৷

শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে প্রশাসন জানায়, কোনো কৃতী সাঁতারুর নামে সুইমিংপুল কমপ্লেক্স নির্মিত হতে পারে৷ কাজটি প্রক্রিয়াধীন, বর্তমানে একনেক সভায় পাঠাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে৷ নির্মাণাধীন ভবনগুলোর কাজ দ্রুত সম্পাদনে অসুবিধা দূর করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

সব বিভাগে নিয়মিত কোর্স শিক্ষক মূল্যায়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিষয়টি একাডেমিক কাউন্সিলের সভার আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ ছাড়া, তিন মাসের মধ্যে শ্রেণিকক্ষগুলোতে সাউন্ড সিস্টেম স্থাপনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় লেনদেনে ডিজিটাল পদ্ধতির প্রবর্তনে তিন মাসের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ক্যাম্পাসকে আরও সবুজ করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেবে প্রশাসন৷ শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি উপস্থিত থেকে ক্যাম্পাসে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করবেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানো ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে অনুদানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ফান্ডের ব্যবস্থা করবে।

শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক ইমেইল আইডি দেয়ার বিষয়টি প্রশাসন এক মাসের মধ্যে সম্পন্ন করবে বলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

ক্যাম্পাসে ওয়াইফাই ব্যবস্থার উন্নয়নের কাজ দুই মাসের মধ্যে সম্পন্ন করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিডিরেনের ফাইবার অপটিক সিস্টেম স্থাপনের কাজ শেষ করে অবস্থার আরও উন্নতি করা হবে৷

ব্যায়ামাগার আধুনিকায়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। সাত দিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়কে চাহিদা জানাবেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠের উন্নয়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। খেলার মাঠ ভাড়া দেওয়া যাবে না, শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের গ্রহণযোগ্য অনুষ্ঠান বা খেলাধুলায় স্বল্প সময়ের জন্য নির্ধারিত ভাড়ায় মাঠ ব্যবহার করতে দেওয়া হবে। পরীক্ষার খাতায় রোলের পরিবর্তে কোড সিস্টেম চালুর বিষয়টি একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় উপস্থাপন করা হবে এবং এ ব্যাপারে কাউন্সিলকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হবে।

১৬ দফা দাবির বাইরেও শিক্ষার্থীদের আরও কিছু আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। গ্রন্থাগারে শিক্ষার্থীদের গবেষণা কাজের উপযোগী কম্পিউটারের ব্যবস্থা, অরিজিনাল সফটওয়্যার ক্রয় ও রোবটিক্স ল্যাব ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে একজন শিক্ষককে দায়িত্ব দেবে কর্তৃপক্ষ। হলগুলোর গ্রন্থাগারের উন্নয়ন ও নিয়মিত খোলা রাখার বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হল প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে সভা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাবেন শিক্ষামন্ত্রী।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন