ঢাবিতে ডেঙ্গু আতঙ্ক, আক্রান্ত ১০৩ জন

  27-07-2019 04:36PM

পিএনএস ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হলের এক শিক্ষার্থীর ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যুর পর ডেঙ্গু আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের মাঝে। বিভিন্ন হলে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে ১০৩ জন শিক্ষার্থী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন ৫/৬ জন জ্বরে আক্রান্ত শিক্ষার্থী ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে যাচ্ছে। প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ জন শিক্ষার্থীর ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য মেডিকেল সেন্টারে যাচ্ছেন।

এদিকে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, প্রায় হলেই ২ থেকে ৫ জন করে শিক্ষার্থী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু হল, জিয়া হল,সলিমুল্লাহ হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। এসব হলের গণরুমে বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের হার বেশি। এসব রুম নিচতলায় হওয়া এবং একই রুমে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী বসবাস করায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। তবে মেয়েদের হলে ডেঙ্গুর প্রকোপ ছেলেদের হলের তুলনায় কম।

এর কারণ হিসেবে রোকেয়া হলের শিক্ষার্থী আইরিন বলেন, মেয়েদের হলের রুমগুলো মেয়েরা সবসময় পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করে। তবে মেয়েদের গণরুমের কথা আলাদা। সেখানে অনেক মেয়ে একসাথে থাকে। যার কারণে পরিষ্কার রাখা সম্ভব হয় না। গণরুমগুলোতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। ঢাকা শহরে যেভাবে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে তাতে ছেলেদের হলে বেশি বা মেয়েদের হলে কম এটা কোনো বিষয় নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা ও শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধি করে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে হবে।

ডেঙ্গু আতঙ্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করার জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করে পোস্ট দিয়েছেন। অনেক শিক্ষার্থী আবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রাসনের দায়িত্বে অবহেলার কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে ডেঙ্গু রোগের কোনো কার্যকর চিকিৎসা নেই। সেখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায় না।

বৃহস্পতিবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারী ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন বলে জানা গেছে।

আব্দুল গফুর নামে মুহসীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাম্পাস আজ ডেঙ্গুর দখলে। অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। যতক্ষণ না পর্যন্ত ক্যাম্পাস আমাদের জন্য নিরাপদ না হয়। জীবন এত সস্তা না ভাই।

সাহাবউদ্দীন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, বঙ্গবন্ধু হলের বড় ভাই ডেঙ্গুতে মারা গেছে! এর জন্য কে দায়ী এই হিসেব কষবো না। আমি ডাকসুর নেতৃবৃন্দের কাছে অনুরোধ করবো জিয়া হল, জসীমউদদীন এবং বঙ্গবন্ধু হলের মাঝে যে পুকুর নামের ডোবা মশা তৈরির কারখানা রয়েছে এটা সংস্কার করা সময়ের দাবি। হয় জহুরুল হলের আদলে পুকুর বানান, না হয় ভরাট করে দেন।

বিভিন্ন হলে খবর নিয়ে জানা গেছে, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। হলের বিরূপ পরিবেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে সমস্যায় পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে, প্রথম বর্ষ ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী যারা গণরুমে থাকেন তারাই বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানা গেছে।

হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূইঁয়া বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন। আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করছি হলে যাতে ডেঙ্গু মশা বিস্তার লাভ করতে না পারে। মশা নিরোধক স্প্রে ব্যবহার করা হচ্ছে। তারপরেও যদি কোনো শিক্ষার্থী আক্রান্ত হয় তাহলে হল প্রশাসন তার চিকিৎসার ব্যাপারে সার্বিক সহায়তা দেবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের প্রধান (ভারপ্রাপ্ত) মেডিকেল অফিসার ডা. সারওয়ার জাহান মুত্তাকী বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ ঢাকা শহরে বেড়ে গেছে। ঢাবির শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে যারা হলে থাকে তাদের ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা নেয়ার সংখ্যা বেশি। প্রতিদিনই ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে শিক্ষার্থীরা এখানে আসছেন। আমাদের মেডিকেলের ওয়ার্ডে আসলেই দেখবেন কী হারে শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা যথসাধ্য চেষ্টা করছি তাদের প্রোপার ট্রিটমেন্ট দিতে।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন