ডাকসুকে কলঙ্কমুক্ত করা সময়ের দাবি

  18-09-2019 06:07PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : মূল দলের রাজনীতিতে যখন দুর্বৃত্ত-দুর্বৃত্তায়নের জয়জয়কার, রাজনীতি যখন সেবার পরিবর্তে অর্থ-সম্পদের পাহাড় গড়ার অন্যতম হাতিয়ার, অনৈতিকতা যখন ভর করছে পদে পদে তখন ছাত্র সংগঠনগুলোর একশ্রেণীর নেতা এতে গা না ভাসিয়ে কী-ই বা করার আছে। তারাও তো রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ।তারা মূলত ভাইরাসে আক্রান্ত।আদতে এ দায় রাজনীতির মাঠের দলগুলোর নীতিনির্ধারকদের।

রাজনীতি জনগণের জন্য নিবেদিত।একসময় যাদের ভাবনায় ব্যাকুল থাকতেন প্রবীণ রাজনীতিকরা। জনকল্যাণে তারা নিয়োজিত ছিলেন।বাপ-দাদার সম্পদ বিক্রি করে তারা রাজনীতি করতেন।দাঁড়াতেন গণমানুষের পাশে।তাদের সুখে-দুঃখে সবব্যথী হতেন।খোঁজ-খবর নিতে স্বজনের মতো।প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ নিয়ে এগিয়ে যেতেন। সমস্যা-সংকটে সহযোদ্ধার মতো পাশে থাকতেন।

সে রাজনীতি ছিল গণমানুষের। হালের রাজনীতি হয়ে গেছে খাই-খাই। যেমনি পারি তেমনি খাই।লাজ-লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে রাজনীতির মাঠে নীতিহীনদের জয়জয়কার হওয়ায় গণমুখী রাজনীতি উধাও হয়ে গেছে। সেখানে জায়গা করে নিয়েছে দুর্বৃত্তায়ন। রাজনীতির নামে একশ্রেণীর দুর্বৃত্ত যাচ্ছেতাই করছে।এরাই জনসেবার রাজনীতিকে করছে কুলুষিত।

জনকল্যাণ, জনসেবা, মানব সেবা, জনহৈতষী কার্যক্রম বলতে যা বোঝায়; সেটা এখন কথার মারপ্যাচে আটকে আছে। জনগণের ভোটাধিকারের নামে যা হচ্ছে, জনসেবার অবস্থা অনেকটা তাই। রাজনীতি তার চরিত্র হারানোয় রাজনীতির মাঠে ঢুকে গেছে সুবিধাভোগীরা। অর্থাৎ ব্যবসায়ীরা। রাজনীতিতে ব্যবসায়ী ঢুকে যাওয়ায় নীতি-আদর্শের অপমৃত্যু ঘটেছে।যে কারণে ভদ্রলোকদের বারোটা বেজে গেছে।

আমাদের ছাত্র রাজনীতির একসময় ঐতিহ্য ছিল। ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধ, গণতান্ত্রিক আণ্দোলনে রাজনীতির সোনালি অতীত ছিল।বর্তমানে যা মূল দলগুলোর মতো অর্থ-বিত্ত ও পেশিশক্তির কবলে। ছাত্র নং অধ্যয়ন তপঃ, এগুলো আজ কথার কথা। শিক্ষক লাঞ্ছনা, বেলেল্লাপনা, ইভটিজিং, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক গ্রহণ ও ব্যবসার মাধ্যমে গাড়ি-বাড়ির মালিক বনে যাচ্ছে অনেকে।যাদের মধ্যে শিক্ষার মশাল জ্বলে না। সেখানে জায়গা করে নিয়েছে অর্থ-সম্পদ।

কদিন ধরে ডাকসুর নেতাদের চিরকুটে ভর্তি, ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতার চাঁদাবাজির অভিযোগে পদচ্যুতি, ছাত্রদল নেতাদের সরকারের সঙ্গে লেজুড়বৃত্তির কালো অধ্যায়গুলো মানুষের মুখে মুখে। শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রদের চাঁদা দেওয়ার বিষয়টি যারপরনাই সচেতন জনগোষ্ঠীকে অবাক করছে। জ্ঞানের আলোর বদলে অর্থ যারা নেন আর দেন, উভয়ের জন্য করুণা হয় বৈকি।

ছাত্র রাজনীতি ছাত্রদের কল্যাণে নিবেদিত হওয়া উচিত।শিক্ষার্থীদের সুবিধা আদায়ে ছাত্রনেতারা সোচ্চা্র থাকবেন।অথচ হালের ছাত্র নেতারা শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে হামলা চালানোর মতো ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিচ্ছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়ার না গিয়ে চিরকুটে ভর্তি হয়ে ডাকসুর নেতা বনে যাওয়ার মতো অপকর্মগুলো করছেন। আর এর সঙ্গে যুক্ত একশ্রেণীর শিক্ষকও!

যে জাতীয় প্রতিষ্ঠানে নেতা বানোনোর এবং জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দেয়ার মতো নেতা সৃষ্টি হয়, সে নেতারা যদি চিরকুট-নির্ভর হন, তাহলে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার ও চরম হতাশার বৈকি। যারা চিরকুটের অধিকারী, যারা চিরকুট দিয়েছেন এবং যারা গ্রহণ করেছেন, প্রত্যেককে জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি। সবার আগে চিরকুট নির্ভর নেতাদের ডাকসু থেকে বিদায় সময়ের দাবি বলে মনে করছেন ভিপি নূরু।

প্রসঙ্গক্রমে একটি বিষয় স্মরণযোগ্য। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়ার একটি অনুষ্ঠান হয়।যে অনুষ্ঠানের কারণে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি।ক্ষমতাসীনদের কঠিন চাপ সত্ত্বেও তৎকালীন ভিসিসহ অনেকে সে শিক্ষার্থীদের পুনরায় পরীক্ষা নিয়ে ভর্তি করাতে ব্যর্থ হন। এসব নিয়ম মানার কারণেই সে সময় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক র্যা ঙ্কিয়ে স্থান অম্লান থাকে।

ঘুণে ধরা আজকের সমাজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বিশ্ব র্যা ঙ্কিয়ে স্থান পাচ্ছে না।যে বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনকে সামনে রেখে পরীক্ষা না দিয়ে চিরকুটের মাধ্যমে ভর্তির হয়ে নেতা হওয়া যায়, সে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা, শিক্ষার মান, সূচক দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে না এনে অকর্মার ঢেঁকি উপহার দেওয়াই তো স্বাভাবিক।যারা শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনের বদলে নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকবে আর শিক্ষকরা জ্ঞানের বদলে অকাতরে ওদের অর্থের জোগান দেবেন।

আমাদের দেশের রাজনীতিতে পছন ধরা শুরু হয়েছে অনেক আগ থেকে।সময়ে সময়ে অসহায়ের মতো এসব ঘূণে ধরা রাজনীতির পছন প্রত্যক্ষ করে দেশবাসী। ঠিক এক ও অভিন্নভাবে একশ্রেণীর শিক্ষকের আস্কারায় ছাত্র রাজনীতি কুলুষিত হচ্ছে।যার নির্মম বলি ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা। এর বাইরের নন ডাকসুতে চিরকুট-নির্ভর কজন নেতা।যত দ্রুত সম্ভব এদের ডাকসু থেকে বের করে এটিকে কলঙ্কমুক্ত করা সময়ের দাবি।

প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন