৬ মাসে ৪ পাবলিক পরীক্ষা! অভিভাবকেরা দিশেহারা

  24-09-2019 12:47PM


পিএনএস ডেস্ক: চলতি বছরের নভেম্বর মাস থেকে আগামী বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে চারটি পাবলিক পরীক্ষা। ১৭ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী। চলবে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত। তার আগে ২ নভেম্বর শুরু হবে অষ্টম শ্রেণীর জেএসসি পরীক্ষা। শেষ হবে ১১ নভেম্বর।

এরপর আগামী বছরের ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে এসএসসি পরীক্ষা। লিখিত পরীক্ষা শেষ হবে ২২ ফেব্রুয়ারি। ব্যবহারিক পরীক্ষা চলবে ২৩ থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি। এরপর এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে ১ এপ্রিল। লিখিত পরীক্ষা শেষ হবে ৪ মে। ব্যবহারিক শেষ হবে ৫ থেকে ১৩ মের মধ্যে।

কয়েক বছর ধরে এভাবেই দেশে একের পর এক অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে চারটি পাবলিক পরীক্ষা। একের পর এক পাবলিক পরীক্ষার কারণে বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ যেমন অতিষ্ঠ, তেমনি দিশেহারা অনেক অভিভাবক বিশেষ করে যাদের একাধিক সন্তানকে একই সাথে এসব পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়।

আগে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শুধু দু’টি পাবলিক পরীক্ষা ছিল যথা এসএসসি ও এইচএসসি। কিন্তু বর্তমানে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণী শেষে আরো দু’টি পাবলিক পরীক্ষা যুক্ত হওয়ায় তীব্র চাপের মুখে পড়েছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। অধিক পাবলিক পরীক্ষার কারণে প্রাইভেট ও কোচিংয়ের সাথে যুক্ত অনেক শিক্ষক লাভবান হলেও বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর পাবলিক পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়া উচিত। আর অভিভাবকদের অনেকে দীর্ঘ দিন ধরেই পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর পাবলিক পরীক্ষার বিরোধিতা করে আসছেন।

অনেক অভিভাবক রয়েছেন যাদের দুই সন্তানকে একই সাথে দু’টি পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। তাদের মধ্যে যাদের দুই সন্তানকে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর সমাপনীতে অংশ নিতে হয় তাদের অবস্থা ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয় বলে জানিয়েছেন অনেক অভিভাবক। কারণ পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর পাবলিক পরীক্ষা দু’টি গ্রহণ করা হয় একই মাসে।

এ ধরনের একজন অভিভাবক এ প্রতিবেদককে বলেন, গত বছর আমার দুই সন্তানের একজন পঞ্চম ও আরেকজন অষ্টম শ্রেণীতে পাবলিক পরীক্ষা দিয়েছে। সে সময়কার অবস্থা মনে হলে এখনো আমাদের দম বন্ধ হয়ে আসে। আমাদের ভাগ্য ভালো আমরা পাগল হয়ে যাইনি। কিন্তু তখন আমাদের অবস্থা সত্যিই পাগল হওয়ার মতো ছিল। অতিরিক্ত চাপ আর দুশ্চিন্তার কারণে কখনো কখনো মনে হয়েছিল আমাদের হার্টঅ্যাটাক হতে পারে। প্রায় এক বছর ধরে আমাদের জীবন বলতে আসলে কিছু ছিল না। জীবন পানি হওয়া বলতে যা বোঝায় সত্যিকার অর্থেই আমরা তার শিকার হয়েছি। কোচিং প্রাইভেট ছাড়াও আমার স্ত্রী দিন-রাত দুই সন্তানের পেছনে সময় দিয়েছে। এক বছর পর্যন্ত আমাদের ঘর-সংসার বলতে আসলে কিছু ছিল না। নিজেদের গ্রামের বাড়ি তো দূরের কথা ঢাকায়ও কোনো আত্মীয়স্বজনকে বাসায় আসতে বলিনি আর আমরাও কোথাও যাইনি। পড়ার চাপে সন্তানগুলোর করুণ অবস্থা দেখেও আমাদের ভীষণ মানসিক যন্ত্রণা হয়েছে। এত ছোট ছোট শিশুর ওপর এ রকম পরীক্ষা চাপিয়ে না দিলেই সবার জন্য ভালো হতো। আমরা চাই এ পরীক্ষা দু’টি বাতিল হোক। যাদের একাধিক সন্তানকে এক সাথে একাধিক পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয় না তারাও নানা কারণে ভুক্তভোগী বলে জানান অনেক অভিভাবক।

রাজধানীর আরেক অভিভাবক জানান, আমার মেয়ে এ বছর সমাপনী পরীক্ষা দেবে। আমার ছোট ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। আমার দুই সন্তানকে আমি নিজে পড়াই। কিন্তু মেয়ের সমাপনী পরীক্ষার কারণে ছেলেকে পড়ানোর সময় পাচ্ছি না। সমাপনী পরীক্ষার এত পড়া আর এত চাপ যে, ছেলের দিকে মনোযোগ দেয়ার কোনো সুযোগই নেই আমার। ফলে তার পরীক্ষার রেজাল্ট খুব খারাপ হচ্ছে। প্রথম শ্রেণীতে পরীক্ষায় সে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিল। কিন্তু তৃতীয় শ্রেণীর অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় তার রোল চলে গেছে ১০ এর নিচে। এর একমাত্র কারণ তাকে আমি সময় দিতে পারিনি। মেয়ের সমাপনী পরীক্ষা না থাকলে আমাদের এত চাপের মধ্যে থাকতে হতো না।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন