বই ও চলমান সামাজিক ব্যাধি রোধের সহজ উপায়

  26-10-2019 05:15PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : আগে দেখা যেত শিক্ষার্থীদের হাতে বই-খাতা-কলমসহ নানা ধরনের শিক্ষা উপকরণ।এগুলো তাদের স্কুল-কলেজের পোশাকের সঙ্গে বেশ শোভা পেত।আজকাল আর সে দৃশ্য চোখে পড়ছে না।এর বদলে তাদের হাতে মোবাইল ফোন চোখে পড়ছে। অনেক শিশুর হাতেও মোবাইল ফোন দেখা যাচ্ছে। অথচ শিশুদের জন্য যা সমূহ ক্ষতির কারণ।

শিশু বয়সে সব সময় হাতে বই রাখার শিক্ষা দিয়েছিলেন আমাদের্ একজন প্রিয় শিক্ষক। একটা সময় পর্যন্ত কেবল নয়, কর্মজীবনে ঢোকার পরও সেটা স্মরণে রেখে মেনে চলার চেষ্টা করেছি।বই মাথার কাছে রেখে ঘুমিয়েছি বিয়ের আগ পর্যন্ত। বিকেলে হাঁটতে এমনকি কোথাও ভ্রমণে গেলে সঙ্গী হিসেবে বই রাখার চেষ্টা করি।তবে সেটা আগের মতো এখন আর হয়ে উঠছে না।

বই পড়ে জ্ঞান অর্জন করা; সুপথে চলা; সদা সত্য কথা বলার সংস্কৃতি থেকে আমরা অনেক দূরে চলে গেছি বা যাচ্ছি।বই শিক্ষার্থীদের কাছে সঙ্গী হিসেবে না থাকায় সমাজে অধঃপতনের ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। বইয়ের সুশিক্ষায় শিক্ষার বদলে একশ্রেণীর শিক্ষার্থী কুপথে পা বাড়াচ্ছে। জড়িয়ে পড়ঠে নানা ধরনের অপরাধ প্রবণতায়।

আজকের দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে শিক্ষা উপকরণের বদলে শোভা পাচ্ছে অন্য কিছু।স্পষ্ট করে বললে অস্ত্র! বই পড়ার বদলে একশ্রেণীর কথিত ছাত্র গাঁজাসহ নানা ধরনের মাদক সেবন ও বিক্রি করছে।করছে সিট বাণিজ্য, র্যা গিংয়ের নামে পাঠীদের নির্যাতন। করছে চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি।বই না পয়ে শিক্ষাঙ্গনে জ্ঞান অর্জন করতে এসে হয়ে যাচ্ছে অস্ত্রবাজ, মন্তান, সন্ত্রাসী, খুনি।

কার না জানা, জাতিকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হিসেবে গড়ে তুলতে বই পড়ার বিকল্প নেই।জ্ঞান আহরণের এই গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমটি যে কেউ আঁকড়ে ধরলে অসৎ চিন্তা ও মাদক তাকে কোনোমতেই স্পর্শ করতে পারবে না।কেননা পঠিত বই-ই তাকে সুপথ দেখাবে।নিয়ে যাবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। বই পাগলরা ব্যক্তিজীবন ও সামাজিকভাবে সফলতার শীর্ষে পৌঁছে যান তরতর করে।

যার নিত্যসঙ্গী বই, তার মধ্যে সত্য ও সুন্দরের লক্ষণগুলো ফুটে উঠে।সমাজের সৃষ্টিশীল কাজে তাদের অবদান থাকে সবার চেয়ে বেশি।তাদের কথা-বার্তা, আচার-আচরণে থাকে এর ছাপ ও প্রভাব।তাদের যে কোনো উপস্থাপনা হয় সাবলীল ও রুচিকর।ফলে তারা সহজেই মানুষকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়। এতে তাদের কাজে সফলতা সহজেই ধরা দেয়।

প্রণোদনা থাকলে আমরাও বই পড়ার প্রতি সহজেই শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারি। করে তুলতে পারি আগ্রহী।এর জন্য বইপড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যায়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঠ অভ্যাস গড়ে তুলতে নানা ধরনের উৎসাহমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ সময়ের দাবি। এতে সমাজের চলমান অমানবীয় দিকগুলো থেকে নিস্তার পাওয়ার পথ কিছু হলেও সুগম হতে পারে।

নেদারল্যান্ডসে বই থাকলে নাকি ট্রেনের টিকিট লাগে না। আমরা বিষয়টি ভাবতে পারি।বই না পড়ে যারা মোবাইল ফোনে সদা ব্যস্ত, তাদের এ রোগ থেকে মুক্তি দিতে টনিক হিসেবে কাজ দিতে পারে বই পড়া। বই থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণেই মেধাবী হিসেবে পরিচিত সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে আবরারের মতো শিক্ষার্থীরা পড়তে এসে লাশ হয়ে ফিরে তার সহকর্মীর হাতে।এ দানবীয় সংস্কৃতির অবসানে বই পড়ায় মনোযোগী জাতি গঠনে কাজ করতে হবে মননশীলদের।

পণ্ডিতজনদের মতে, সমাজে বর্তমান সীমাহীন অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও চলমান সহিংসা রোধে শিশুদের মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। পাঠ্যসূচিতে মানবিক গুণাবলি অর্জনের পাঠ থাকতে হবে এবং সম্ভব হলে এ শিক্ষা হাতেকলমে দিতে হবে। এর বাইরে ধর্মীয় ও পারিবারিক শিক্ষা অতীব জরুরি।শিশুমনে একবার মানবিক গুণাবলি স্থান পেলে তা জীবনভর বহমান থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বর্তমানে ঘরে-বাইরে, অফিস-আদালত, যানবাহনে এমনকি চলার পথে মোবাইল ফোনের প্রতি সর্বস্তরের মানুষের যে আসক্তি চোখে পড়ছে, এ থেকে সহজে মুক্তি মিলবে বলে মনে হয় না।যে অবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে, তাতে এটি সামাজিক ব্যাধি হিসেবে পরিগণিত হওয়ার উপক্রম।সমাজের সর্বস্তরে চলমান অনৈতিক কাজগুলো থেকে পরিত্রাণ পেতে বই পড়ার প্রতি নাগরিকদের আগ্রহী করে গড়ে তোলা সময়ের দাবি।

প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন