ঢাবিতে মেধাবীদের অপমৃত্যু রোধের সহজ উপায়

  29-01-2020 07:21PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : আমাদের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে বিপুল খ্যাত। কালক্রমে এ সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠটি তার গৌরব হারাতে থাকে। আজকে শিক্ষা-গবেষণার কেন্দ্রস্থলে মাদক, চাঁদাবাজিসহ নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা বাসা বেঁধেছে। ফলে জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত সচেতন জনগোষ্ঠী ও পণ্ডিতজনরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় ৬৭ শিক্ষার্থীকে আজীবন এবং ২২ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে ঢাবি প্রশাসন। ২৮ জানুয়ারি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানী রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এ বিষয়ে প্রক্টর বলেন, ‘দুটি অপরাধে বহিষ্কার করা হয়েছে। একটা হল ডিজিটাল জালিয়াতি ও অবৈধ পান্থায় ভর্তি। এর মধ্যে ভর্তি ফাঁস আছে, ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার আছে, মাইক্রো চিপস এর ব্যবহার আছে অর্থাৎ অবৈধ পান্থা অবলম্বন করায়। এর মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের প্রক্রিয়া কমপ্লিট করেছি।’

এর বাইরে অস্ত্র ও মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে চারজনকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। ছিনতাইয়ের অভিযোগে ১৩ জনকে এবং সাংবাদিকদের মারধরের অভিযোগে দুজনকে ছয় মাস করে বহিষ্কার করা হয়। আমাদের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠে কী হচ্ছে, জাতি এর একটি চিত্র পেয়েছে মাত্র। যে চিত্র তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, এখানে আসলে কী ঘটছে।

যেখানে পড়তে এসে নিজেকে আদর্শ ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে আলোর পথের দিশারিরা, সেখানে যদি এর উল্টোটা ঘটে; অস্ত্র আর মাদকে জড়িয়ে পড়ে, এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। গরীব কৃষক কষ্টের টাকায় তো এ জন্য তাদের সন্তানদের এখানে পাঠননি। যাদের অবহেলায় এ শিক্ষার্থীরা দিকভ্রান্ত, সে শিক্ষকরা এ দায় এড়াতে পারেন না।

যেখান থেকে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়বে, হবে গবেষণাধর্মী কার্যক্রম; উত্তাল থাকবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে সংঘটিত নানা অন্যায়-অত্যাচার, অবিচার ও মানবকল্যাণের জয়গানে, সেখানে জাগ্রত ছাত্রসমাজকে অভীষ্ট লক্ষ্য থেকে সরে রাখার এসব অনৈতিক কাজ আত্মঘাতী। একটি জাতিকে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এভাবে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে কার স্বার্থে?
আমাদের শিক্ষার্থীরা জ্ঞান অর্জন করে শুধু দেশে নয়, বিশ্বব্যাপী এর আলো ছড়িয়ে দেবে। জ্ঞান-বিজ্ঞানে নিজে সমৃদ্ধ হবে এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে ঈর্ষণীয় পর্যায়ে, আমরা চাই তেমন যুগোপযোগী জীবন ও কর্মমুখী শিক্ষা। যে শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী প্রথমে নিজেকে, পরে জাতিকে, সর্বোপরি দেশকে শতভাগ চিনবে এবং নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলি অর্জন করবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা শিক্ষার্থীদের সুপথে আনবেন, তারাই নাকি এমফিলের নামে কেলেঙ্কারি করে। ছাত্রীদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে। যে শিক্ষকরা এসব করে আর করেন, সেখানে অস্ত্রবাজ, চাঁদাবাজ, খুনি, মাদকাসক্ত, মাদক বিক্রেতা জন্ম হবে না তো ফেরেশতা জন্মাবে? এ প্রতিষ্ঠানটির অতীত গৌরব ফিরিয়ে আনতে হলে ভিসি থেকে শুরু করে কি-পয়েন্টগুলোয় দলবাজ নয়- বরং অভিজ্ঞ, যোগ্য, দক্ষ ও পেশাদার শিক্ষকদের বসাতে হবে। অন্যথায় এখানে মেধাবীদের অপমৃত্যু রোধ করা যাবে না।

প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন