শিক্ষামন্ত্রীর নতুন আভাস : শীতের প্রকোপ কমলে খুলতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

  26-11-2020 12:07AM

পিএনএস ডেস্ক : শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, স্কুল কবে খুলবে, তা পুরোপুরি নির্ভর করবে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির ওপর। শীতের সময় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি থাকে আর আমাদের দেশে মার্চ মাস পর্যন্ত শীত থাকে। শীতের প্রকোপ কমার পর স্কুল খোলা হতে পারে।

বুধবার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি সংক্রান্ত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘যখনি স্কুল খোলা সম্ভব হবে, তখনি আমরা খুলে দেবো। তবে স্কুল খুললেও পুরোপুরি ক্লাস কার্যক্রম হয়তো শুরু করা যাবে না। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ক্লাসের কার্যক্রম করতে হবে।’

লটারিতে ভর্তি

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে স্কুলের সব শ্রেণীতে পরীক্ষার বদলে লটারির মাধ্যমে ভর্তি করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সামনে তিনটি বিকল্প ছিল। এক, শিক্ষার্থীদের স্কুলে এনে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া কিন্তু করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বাড়ছে, এমন পরিস্থিতিতে সেই ঝুঁকি আমরা নিতে চাই না। অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষার একটি অপশন ছিল কিন্তু অনেকের অনলাইন ব্যবহারের সুবিধা বা সুযোগ নেই বলে সেটিও গ্রহণ করেনি মন্ত্রণালয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি বছর প্রথম শ্রেণীতে লটারির মাধ্যমে ভর্তি করা হয়ে থাকে। তবে এবার আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সব শ্রেণীতেই পরীক্ষার বদলে লটারির মাধ্যমে ভর্তি করা হবে। জানুয়ারির মাসের ১০ থেকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে এই লটারির মাধ্যমে ভর্তির আয়োজন সম্পন্ন করা হবে।’

ডা. দীপু মনি আরও বলেন, ‘বাংলা ও ইংরেজি, সব মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। আবেদনের পুরো প্রক্রিয়াটি অনলাইনের মাধ্যমে হবে। ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রক্রিয়াটির বিস্তারিত জানানো হবে।’

শিক্ষামন্ত্রী জানান, ঢাকা মহানগরীতে স্থানীয় কোটায় শিক্ষার্থী ভর্তির (ক্যাচমেন্ট কোটা) সুযোগ আগের ৪০ শতাংশের বদলে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে একেকজন শিক্ষার্থী একেক ক্লাস্টারে পছন্দক্রম হিসাবে পাঁচটি স্কুলের তালিকা দিতে পারবেন। এতদিন শিক্ষার্থীরা একটি স্কুল পছন্দ করতে পারতেন।

পেছাচ্ছে এসএসসি ও এইচএসসি

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে আগামী বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ে নেওয়া সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

তিনি বলেন, ‘আগামী বছর যাদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা, তাদের জন্য ‘তিন মাসে শেষ করা যায়’- এমন একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে, তার আলোকে তাদের তিন মাস ক্লাস করিয়ে তাদের পরীক্ষা নেওয়া হবে।’

দীপু মনি আরও বলেন, ‘সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের আলোকে আমরা তাদের তিন মাস ক্লাস করাতে চাই। সে কারণে হয়ত এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা ২/১ মাস পিছিয়ে যাবে।’

বেশ কয়েক বছর ধরে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি এবং ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়ে আসছে। ওই দিনগুলো সরকারি ছুটি থাকলে পরের দিন থেকে এসব পরীক্ষা শুরু হয়। এবার এসএসসি পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ে নেওয়া গেলেও দেশে করোনা ভাইসের প্রকোপ বাড়তে শুরু করলে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আটকে যায়।

বছরের শেষভাগে এসে জানানো হয়, এবার মহামাররি মধ্যে আর এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে না। পরীক্ষার্থীদের অষ্টমের সমাপনী এবং এসএসসি ও সমমানের ফলফলের ভিত্তিতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হবে।

মহামারী পরিস্থিতির ততটা উন্নতি না হওয়ায় পঞ্চম ও অষ্টমের সমাপনী পরীক্ষা এবং স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষাও এবার হচ্ছে না। পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষার্থীরা সবাই পরের ক্লাসে উঠে যাবে। তবে শিক্ষার্থীদের কোথায় দুর্বলতা তা বোঝার জন্য ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে সাপ্তাহিক অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কওমি মাদ্রাসা বাদে অন্যসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগামী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা আছে।

বাড়তি ফি আদায় করা হলে ব্যবস্থা

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘কোন স্কুল বাড়তি কোন অর্থ আদায় করতে পারবে না। অনেক সময় অভিভাবকরা এরকম ঘটনার শিকার হলেও অভিযোগ করতে চান না। আমি আশা করবো কেউ এরকম অনৈতিক টাকা নেবেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভর্তির ক্ষেত্রে যেমন বাড়তি ফি নেয়া যাবে না, একই স্কুলের শিক্ষার্থী যারা নতুন ক্লাসে উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাদের কাছ থেকেও কোন ফি আদায় করা যাবে না। তারপরেওআমরা যদি প্রমাণ পাই, তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেবো।’

উক্ত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহাবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক গোলাম ফারুক, বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন