যেভাবে মুনজেরিন অক্সফোর্ডে সুযোগ পেলেন

  03-12-2020 11:15PM

পিএনএস ডেস্ক : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইংরেজিতে কথা বলার সহজ উপায় বলে দিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন মুনজেরিন শহীদ। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে বিশ্বে ইংরেজি ভাষার সবচেয়ে পুরোনো ও বিখ্যাত যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করে ডাক পান মুনজেরিন। সেখানে অ্যাপ্লায়েড লিঙ্গুয়েস্টিক অ্যান্ড সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ একুইজিশন মাস্টার্স নিয়ে পড়তে গিয়েছেন। পেয়েছেন শেভরিনের ১০০ ভাগ স্কলারশিপ।

কিভাবে মুনজেরিন এই স্কলারশিপ পেলেন। সিজিপিএ নাকি সহ-শিক্ষা কার্যক্রম কোনটি এগিয়ে রেখেছিল তাকে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন মুনজেরিন শহীদ।


স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে সব শিক্ষার্থীরই খুব সাধারণ প্রশ্ন থাকে কত সিজিপিএ হলে স্কলারশিপ পাওয়া যায়। আবার কেউ কেউ ভাবেন ভালো সিজিপিএ পেলেই সুযোগ পাওয়া যাবেন অক্সফোর্ডে। মুনজেরিন বলেন, ‘সিজিপিএ অক্সফোর্ডে ঢোকার অনেকগুলো গেইটের মাঝে একটি গেইটমাত্র। সেখানে মাস্টার্সে আবেদনের জন্য ন্যুনতম আপার সেকেন্ড ক্লাস সিজিপিএ অর্থাৎ ৩.৩ থেকে ৩.৭ পেতে হয়। এটি পেলেই যে অক্সফোর্ডে হয়ে যাবে এমন নয়। লাখো শিক্ষার্থী এখানে পড়ার জন্য আবেদন করে যাদের মাঝে হয়তো হাজার জনেরই সিজিপিএ ৪ এ ৪ আছে। আবার ৪ এ ৪ পেলেও যে অক্সফোর্ডে হয়ে যাবে তা নয়। আরও অনেক বিষয় এখানে গুরুত্বপূর্ণ।’

অক্সফোর্ডের চাহিদা অনুযায়ী সিজিপিএ হলে শিক্ষার্থী প্রথম ধাপ পার হতে পারে। এরপরই যে বিষয়টি চলে আসে সেটি হলো আর কোন কোন বিষয় বা কাজের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন পড়ে অক্সফোর্ডে সুযোগ বা স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য। মুনজেরিন জানান, শিক্ষার্থীর পূর্বের বিভিন্ন কাজের অভিজ্ঞতা তাকে এগিয়ে রাখতে কাজে লাগবে। তিনি বলেন, ‘কাজের অভিজ্ঞতা গুরুত্বপুর্ণ তবে কি ধরণের কাজের অভিজ্ঞতা আপনি তাদের দেখাচ্ছেন তা এখানে খেয়াল করতে হবে। আপনি যদি যে বিষয়ে পড়তে যাবেন সেটির সাথে সম্পর্কিত কাজের অভিজ্ঞতা দেখাতে পারেন তবে তা বেশি কাজে আসবে। আমি অক্সফোর্ডে ইংরেজি শেখার ওপর দ্বিতীয় মাস্টার্স করছি। দেশে আমি টেন মিনিট স্কুলের সাথে ইংরেজি শেখা নিয়ে যেসব কাজ করে এসেছি সেগুলো আমাকে অক্সফোর্ড ও শেভনিং স্কলারশিপ দুই ক্ষেত্রে আবেদনেই সহায়তা করেছে।’

মুনজেরিন এখানে একটি বিষয়ে আলাদা গুরুত্ব দেন। সেটি হলো, যে কাজের অভিজ্ঞতাই দেখানো হয় সেটি যেন অন্তত এক বছরের হয়। কেননা, যেখানে কাজ করেছেন সেখানে আপনি দীর্ঘ সময় ধরে লেগে ছিলেন, আপনি পরিশ্রম করতে পারেন এই বিষয়গুলো দেখানো খুবই জরুরি।

সাধারণত, অক্সফোর্ডের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদনের সময় শিক্ষার্থীদের অনেক কিছু লিখতে হয়। যেখানে থাকে, কেন সেখানে সে পড়তে চায়, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চায়, শিক্ষার্থীর নিজের সম্পর্কে লেখা ও কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে ইংরেজিতে রচনা লেখা। লেখাগুলোকেও লিখতে হয় একাডেমিক ইংরেজিতে, সাধারণ ইংরেজি লিখলে চলে না।

মুনজেরিন এই লেখা সম্পর্কে বলেন, ‘স্কলারশিপ বা এডমিশনের লেখাগুলো অনেক বেশি একাডেমিক হয়। আমাদের দেশে আমরা ইংরেজি লেখা শিখি। কিন্তু, একাডেমিক লেখা শিখি না। তাই বিদেশে আবেদনের জন্য যদি সত্যিকারের ইচ্ছা থাকে তবে এখন থেকেই একাডেমিক লেখা শেখা শুরু করে দিতে হবে। যত ভালো আপনি লিখতে পারবেন নিজের কাজগুলো ও জ্ঞান উপস্থাপন করতে পারবেন আপনার সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা ততোই বৃদ্ধি পাবে।’

অনেকেই আবার ভাবেন বিদেশে পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে গবেষণা হয়তো তাকে এগিয়ে রাখবে। কিন্তু, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আবেদন গ্রহণ করার সময় গবেষণাকে আবশ্যক হিসেবে উল্লেখ করে না। তবে গবেষণা যদি পূর্বে করা থাকে তবে তা শিক্ষার্থীকে এগিয়ে রাখবে।



মুনজিরনেকেও তার একটি রিসার্চ প্রজেক্ট সহায়তা করেছিল। মুনজেরিন বলেন, ‘আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে করা একটি রিসার্চ প্রজেক্টের সাথে অক্সফোর্ডে আমার একজন প্রফেসরের আগ্রহের বিষয়ের সাথে মিলে গিয়েছিল। ফলে আমার সেখানে সুযোগ পাওয়া আরও সহজ হয়ে যায়।’

মুনজেরিন বিদেশে পড়তে আগ্রহীদের তাদের গবেষনাকর্মের সাথে বা আগ্রহের বিষয় নিয়ে কাজ করছেন এমন প্রফেসর যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন সেখানে আবেদন করার পরামর্শ দেন।

স্কলারশিপ বা এডমিশন দুই ক্ষেত্রেই প্রাথমিক বাছাইয়ের পর সাক্ষাৎকারের প্রয়োজন হয়। মুনজেরিন নিজের সাক্ষাৎকারের স্মৃতি স্মরণ করে বলেন, ‘সাক্ষাৎকার নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ জায়গা থেকে সাক্ষাৎকার গ্রহীতারা প্রশ্ন করেন। তারা মূলত দেখতে চান একাডেমিক জায়গাতে আপনার দক্ষতা কেমন। গবেষনা কাজে লেগে থাকার মতো ধৈর্য ও পরিশ্রম করার মানসিকতা আপনার আছে কিনা। তবে প্রশ্নগুলো হবে বেশ একাডেমিক। আর তাদের কোনো প্রশ্ন সাধারণত আপনি আপনার স্নাতকে যতটুকু পড়ার কথা তার বাইরে যায় না।’

পিএনএস-জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন