স্বপ্ন পূরণ হলো না সুমিতের

  30-09-2016 08:30AM

পিএনএস: দেশের প্রধান বিচারপতি হওয়ার স্বপ্ন ছিল সুমিতের। প্রায় সময় ক্যাম্পাসের টংয়ের দোকানে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে গিয়ে তার এই ইচ্ছার কথা বলতো সে। আইন বিষয়ে ভর্তি হতে পেরে নিজেকে একজন সৌভাগ্যবান ছাত্র মনে করতো। বিচারপতি হওয়ার বাসনা তার মাঝে গড়ে উঠছিল বিন্দু বিন্দু করে।
কিন্তু মেধাবী এই ছাত্রের সেই স্বপ্ন অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানলো। সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র সুমিত মিত্র (২০) কে। টানা ৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে গতকাল সকালে মারা যায় ছেলেটি। তার মৃত্যুতে বন্ধু মহল ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

অভাব দারিদ্র্যকে জয় করে স্কুল কলেজের গন্ডি পেরিয়ে ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত আসার সুযোগ হয়েছিল মেধাবী সুমিতের। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা তার মাকে করেছে সন্তান হারা। মাত্র বছর খানেক আগেই মারা গিয়েছিল তার পিতা। এখন তার মৃত্যু একজন মাকে করে দিয়েছে আরো বেশি অসহায়।

সহপাঠীরা জানান, টানা ৫ দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর গতকাল সকাল ১০টায় মারা যায় সুমিত মিত্র। সে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল। গত ২৩শে সেপ্টেম্বর রাত সোয়া ৮টা। দুর্ঘটনাস্থল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেট এলাকা।

সেখানে বিপরীত দিক থেকে আসা বেপরোয়া সিএনজি অটোরিকশার ধাক্কায় তিনি ছিটকে পড়েন। এরপর মাথায় আঘাত পেয়ে অজ্ঞান হয়ে যান। রক্তাক্ত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে রাত সাড়ে ৮টায় প্রথমে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায়। পরে সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রাত ৯টায় নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেকে)। গতকাল মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সে চমেকের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে ছিল।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান, দুর্ঘটনায় সুমিতের মাথায় বড় ধরনের আঘাত লেগেছে। তাছাড়া একপাশ থেকে রক্তক্ষরণ হয়েছে। ফলে সে অনেকটা ক্লিনিক্যালি ডেড এর পর্যায়ে চলে যায়। তারপরও তাকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছে। শেষমেশ সকালের দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আফজাল নামের সুমিতের এক সহপাঠী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিল সে। তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরায়। বাবাও মারা গেছেন প্রায় বছর খানেক হলো। মা আক্রান্ত প্যারালাইসিসে। কে দেখবে তার অসুস্থ মাকে। সুমিতের ফেসবুক পেজ ঘেঁটে দেখা যায়, সেখানে সে আইন পেশা, আইনজীবী, বিচারপতি এসব বিষয়ের উপর প্রচন্ড ভালোবাসা থেকে বিভিন্ন সময় স্ট্যাটাস দিয়েছে। বন্ধুদের উদ্দেশ্যে সর্বশেষ লিখেছিল ‘ভাবতে পারিনি। এই সাবজেক্ট নিয়ে চবিতে পড়তে পারবো। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা অনেক বড় মাপের বিচারপতি। ব্যারিস্টাররা এখান থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন।

ক্যাম্পাসের বন্ধু ও বিজ্ঞান অনুষদের ছাত্রী নাজনিন বলেন, প্রায় সময় সে শাটল ট্রেনে চড়ে আমাদের সঙ্গে গান গাইতে গাইতে শহরে যেত। ওই সময় বলতো জানিস প্রধান বিচারপতি হতে পারলে অনেক সুনাম। তার উপর নির্ভর করে দেশের আইন কানুন। নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (দক্ষিণ) মো. কামরুজ্জামান বলেন, এই মৃত্যু আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসে একটি ছেলে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা যাবে তা কিছুতেই মানা যায় না। তার অসহায় মা এখন কীভাবে বাঁচবে তাই চিন্তার বিষয়। স্বামী হারানোর পর বেচারি ছেলেটিকেও হারালো। আফসোস!

তিনি আরো জানান, দুর্ঘটনার পর সিএনজি অটোরিকশা চালককে আটক করে স্থানীয়রা পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছিল। বর্তমানে ওই চালক কারাগারে আছে।




পিএনএস/বাকিবিল্লাহ্




@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন