টিভি নাটকে নিখোঁজ ‘মহড়া’

  18-10-2016 06:36AM

পিএনএস: ‘বলেন কি, মহড়া ছাড়াই টিভি নাটক হচ্ছে! এ কি করে সম্ভব? বাংলাদেশে তো একসময় টিভি নাটকের শুটিং শুরু হওয়ার আগে মহড়া ছিল মাস্ট। সম্প্রতি জানলাম এখন সেটে গিয়ে শিল্পীরা স্ক্রিপ্ট হাতে পান। আর তারপরই লাইট ক্যামেরা অ্যাকশন। সেটা কি নাটক হয়? আমার জানা নেই। এমনই যদি হয় তাহলে তো বলতেই হয় ঠিকভাবে শিল্পের চর্চাটা থাকছে না।’ দিনকয়েক আগে ঢাকায় বেড়াতে আসা কলকাতার এক জনপ্রিয় অভিনেতার সঙ্গে আলাপকালে এমনই বলছিলেন তিনি। প্রিয় পাঠক, বাংলাদেশের টিভি নাটকে এখন মহড়া হচ্ছে না জেনে বিস্মিত এই অভিনেতা। পাশের দেশ কলকাতার শিল্পীরা জানছেন এখানকার টিভি নাটক কিভাবে নির্মাণ হচ্ছে।

শিল্পীরা কিভাবে অভিনয় করছেন। দেশের বয়োজ্যেষ্ঠ শিল্পীরা কি সেটা জানেন? যাদের এক সময় অভিনয় করতে গিয়ে কতটা কাঠখড় পোহাতে হতো। শুটিংয়ের চার-পাঁচ দিন আগে থেকে যারা নাটকের জন্য মহড়ায় নামতেন। তারাও কি এখনকার নাটকের এই অবস্থা সম্পর্কে অবগত আছেন? হ্যাঁ, বিষয়টি তাদেরও অজানা নয়। সমপ্রতি ‘ভারতীয় চ্যানেলের সহজলভ্যতায় দর্শক হারাচ্ছে দেশের টিভি অনুষ্ঠান’ এমন শিরোনামের প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে সেসব বয়োজ্যেষ্ঠ শিল্পীর কাছ থেকেও জানা গেল এমন হতাশার কথা। বিষয়টি নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে তাদের মনেও। দেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রতিদিনই প্রচার হচ্ছে কোনো না কোনো খণ্ড কিংবা ধারাবাহিক নাটক। একঝাঁক শিল্পীর উপস্থিতি দেখা মেলে সেসবে। শুটিংকালে যাদের বেশিরভাগই জানেন না স্ক্রিপ্টটা কেমন। কি ধরনের গল্প নিয়ে চিত্রনাট্য তৈরি হয়েছে। টেলিআলাপে নির্মাতা কিংবা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের মারফত শিল্পী তার নাটকের চরিত্র সম্পর্কে জানতে পারেন। কিন্তু এতে করে কি ওই শিল্পী বা শিল্পীরা শৈল্পিক জায়গাটি ধরে রাখতে পারেন? নাটকের গল্পের মাঝে দর্শককে ডুবিয়ে রাখতে পারেন? হয়তো তা সম্ভব হয় না। না হলে না হবে। পর্দায় মুখ দেখাতে পারলেই হলো। এমনটাই এখনকার নাটকের হালচাল।

তবে নাটকের মহড়া নিখোঁজ হওয়ার পেছনে শিল্পী-নির্মাতার দোষ দিচ্ছেন না কেউই। নাট্যবোদ্ধারা মনে করছেন বাজেট স্বল্পতার কারণে দেশীয় নাটকের এই ক্রান্তিমুহূর্ত। একটা নাটক নির্মাণ করতে যে বাজেট নির্মাতা পান তাতে শুটিং কোনেমতে করতে পারলেই বেঁচে যান। তাতে মহড়ার চিন্তা মাথায় না আসাই স্বাভাবিক। এ বিষয়ে বিশিষ্ট নাট্যজন ড. ইনামুল হক বলেন, একসময় নাটক নির্মাণের আগে অনেক মহড়া হতো। রিহার্সাল ছাড়া আমরা শুটিং করতাম না। আর এখন তো নাটকের মহড়া নেই। এখানে আসলে নির্মাতা-শিল্পীর দোষ দেখছি না। তারা যথাসাধ্য ভালোটা দেয়ার চেষ্টা করছেন। সমস্যা হচ্ছে বাজেট নিয়ে।

একজন নির্মাতা যে বাজেট পান তাতে দুদিনের মধ্যেই একটি খণ্ড নাটকের কাজ শেষ করতে হয় তাকে। তাহলে মহড়ার কথা তো চিন্তাই করা যায় না। বাজেট বাড়ালে সবই সম্ভব। এদিকে বিশিষ্ট অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদও একই কথা জানালেন। তিনি বলেন, নাটকের অবস্থা খুব যে খারাপ হয়ে গেছে তা কিন্তু নয়। তবে আমাদের নাটকে আগের মতো কোনো রিহার্সাল হয় না। এটা বাজেটের অভাবে হচ্ছে। ভালো বাজেট না থাকায় অনেক সময় নির্মাতাকে স্বল্প সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে হচ্ছে। বিশিষ্ট অভিনেতা ও নির্মাতা আবুল হায়াত বলেন, সব সমস্যার মূলে বাজেট। ভালো বাজেট না থাকলে কোনো কিছুই সম্ভব নয়। আমরা প্রতিনিয়তই ভালোটা করার চেষ্টা করছি।

অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু বলেন, একসময় অভিনয় করতাম। অনেক রিহার্সাল হতো। নাটকের শুটিংয়ের আগে আমাদের অনেক কাঠখড় পোহাতে হতো। কিন্তু এখনকার চেহারা তো অনেক ভিন্ন। নাটকের জন্য এখন আর কোনো চর্চা করতে হয় না। শিল্পীরা শুটিং সেটে গিয়ে তারপর স্ক্রিপ্ট পান। রিহার্সালের কোনো সুযোগ নেই। অবশ্য যে বাজেট থাকে তাতে নির্মাতা মহড়ার কথা ভাবতেই পারেন না। অভিনেতা শফিক সাদেকী বলেন, মাঝে মাঝে ভাবি, আমাদের নাটকের ভবিষ্যৎ কি! এভাবে চলতে থাকলে তো ধ্বংস হয়ে যাবে। শিল্পী জানেন না তার চরিত্র কি। শুটিংয়ে এসে স্ক্রিপ্ট দেখে তারপর ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান।

এটা আমাদের ইন্ডাস্ট্রির জন্য খুবই দুঃখের খবর। বর্তমানে আমেরিকায় প্রবাসী অভিনেতা টনি ডায়েস বলেন, আমি বিস্মিত। শুটিং সেটে গিয়ে নাকি শিল্পী স্ক্রিপ্ট সম্পর্কে অবগত হচ্ছেন। এটা তো আগে ছিল না। শুটিংয়ের আগে একজন শিল্পীর ন্যূনতম প্রস্তুতি থাকা উচিত। নাটকের এ ক্রান্তি মুহূর্ত নিয়ে উদ্বিগ্ন দেশের প্রতিথযশা শিল্পীরা। এমন সংকট কাটিয়ে কবে দেশের নাটকে সুদিন ফিরবে! সুদিন অবশ্যই আসবে। তবে সেজন্য সময় লাগবে। এমন প্রত্যাশার কথাও ব্যক্ত করলেন তারা।



পিএনএস/বাকিবিল্লাহ্



@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন