প্রেমে পড়ার বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত ১৩টি লক্ষণ

  24-01-2017 04:16PM

পিএনএস: বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে প্রমাণ পেয়েছেন, প্রেমে পড়া মস্তিষ্ক শুধু লালসাগ্রস্ত মস্তিষ্কের চেয়ে পুরোপুরি আলাদা। এমনকি যারা দীর্ঘদিন ধরে কোনো প্রতিশ্রুতিশীল সম্পর্কে আবদ্ধ আছেন তাদেরও চেয়েও আলাদা তাদের মস্তিষ্ক।

গবেষণাটির নেতৃত্ব দিয়েছেন, রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানী হেলেন ফিশার, ভালোবাসর জৈবিক ভিত্তি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, “প্রেমে পড়ার” সময়টুকু একটি অনন্য বৈশিষ্টসুচক সময়কাল। আর এই ১৩টি লক্ষণে বুঝা যাবে আপনি প্রেমে পড়েছেন:

১. সে অনন্য
আপনি যখন প্রেমে পড়বেন তখন আপনার ভালোবাসার মানুষটিকে আপনার কাছে অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী বলে মনে হবে। মূলত মস্তিষ্কে ব্যাপকহারে ডোপামিন নিঃসরণের ফলে এই একক মানসিকতার সৃষ্টি হয়। এই রাসায়নিকটি মনোযোগ বাড়ানো এবং কেন্দ্রীভুত করার ক্ষেত্রে ভুমিকা পালন করে। আর একারণেই ভালোবাসার মানুষটির প্রতি এমন একক মানসিকতা বা অনুভূতি তৈরি হয়।

২. সে নিখুঁত
যারা সত্যিকার অর্থেই প্রেমে পড়েন তারা তাদের ভালোবাসার মানুষটির ইতিবাচক গুনাবলীর ওপরই বেশি মনোযোগ দেন। নেতিবাচক দিকগুলো উপেক্ষা করেন এবং তাকে যথাযথ বা নিখুঁত ভাবতে থাকেন। এছাড়া ভালোবাসার মানুষটির তুচ্ছাতিতু্চ্ছ বিষয়গুলোও মনে রাখেন। ডোপামিনের পাশাপাশি নরপিনারফ্রিন নামের রাসায়নিক নিঃসরণের ফলে এই স্মৃতি স্থায়ী হওয়ার ঘটনা ঘটে।

৩. আমি একটা সর্বনাশা!
প্রেমে পড়লে অনেক সময় আবেগগত এবং শারীরবৃত্তীয় অস্থিরতা তৈরি হয়। এর ফলে আপনার মধ্যে উল্লাস, প্রাণচাঞ্চল্য, অতি উদ্যম, নিদ্রাহীনতা, ক্ষুধামান্দ্য, কম্পন, হৃদপিণ্ডের ধুকপুকানি, শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি বেড়ে যাওয়া এবং সামান্যতম বিপত্তিতে উদ্বেগ, আতঙ্ক ও হতাশার অনুভূতি দেখা দিবে। অনেকটা মাদকাসক্তদের মতো অবস্থা তৈরি হবে। মাদক সেবন করলে মস্তিষ্কের যে অংশ সক্রিয় হয়ে ওঠে প্রেমে পড়ার পর ভালোবাসার মানুষটিকে দেখলেও ঠিক একই অংশ উত্তেজিত হয়। গবেষকদের মতে প্রেমে পড়াটাও এক ধরনের আসক্তির মতো।

৪. কারো সঙ্গে বিদ্বেষের ফলে আপনারা আরো ঘনিষ্ঠ হন
অন্য কারো সঙ্গে বিদ্বেষের ফলে যদি আপনার ভালো লাগার মানুষটির সঙ্গে আপনার ঘনিষ্ঠতা বাড়ে তাহলে আপনি নিশ্চিত তার প্রেমে পড়েছেন।

৫. আপনি তার চিন্তায় বুঁদ হয়ে থাকেন
যারা প্রেমে পড়েছেন তারা জানিয়েছেন, তারা তাদের জেগে থাকার ৮৫% সময় ভালোবাসার মানুষটির চিন্তায় কাটিয়ে দিয়েছেন। এর জন্য দায়ী মস্তিষ্কে সেরোটোনিন নামের রাসায়নিক নিঃসরণ।

৬. সব সময় একসঙ্গে থাকার ইচ্ছা হয়
যার প্রেমে পড়েন তারা আবেগগতভাবে তাদের ভালোবাসার মানুষটির ওপর নির্ভরশীলও হয়ে পড়েন। এর মধ্যে থাকে সব সময় আগলে রাখার প্রবণতা, ঈর্ষা, প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয় এবং বিচ্ছেদের ভয়।

৭. চিরদিন একসঙ্গে থাকার ইচ্ছা হয়
প্রেমে পড়লে ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে আমৃত্যু একত্রে থাকার ইচ্ছা জাগে। সারাক্ষণ শুধু ভালোবাসার মানুষটির আরো ঘনিষ্ঠ হওয়ার এবং তার সঙ্গে ভবিষ্যত কল্পনা কাজ করে। এমনকি তাকে ছাড়া বাঁচা অসম্ভব বলে মনে হয়।

৮. আমি তার জন্য যে কোনো কিছু করতে পারব
যারা প্রেমে পড়েন তারা তাদের ভালোবাসার মানুষের প্রতি শক্তিশালি সহানুভূতি অনুভব করেন। ভালোবাসার মানুষটির বেদনাকে নিজের বেদনা বলে মনে করে এবং তার জন্য যে কোনো কিছু উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকে।
৯. সে কি এই পোশাকটি পছন্দ করবে?
প্রেমে পড়লে আপনি পোশাক-আশাক, আচার-ব্যবহার এবং দৈনন্দিন অভ্যাসগুলোর ক্ষেত্রে আপনার ভালোবাসার মানুষটির পছন্দ-অপছন্দকে প্রাধান্য দিতে শুরু করবেন।

১০. আমরা কি স্বতন্ত্র হতে পারি?
যারা গভীরভাবে প্রেমে পড়েন তারা ভালোবাসার মানুষটির প্রতি যৌন কামনা বোধ করেন। এ ক্ষেত্রে কিছু আবেগগত উৎকণ্ঠাও কাজ করে। এর সঙ্গে থাকে অধিকারপ্রবণতা, একচেটিয়া যৌন অধিকার স্থাপন এবং যৌন অবিশ্বস্তার সন্দেহ সৃষ্টি হলে চরম ঈর্ষাকাতরতা কাজ করে। মানুষের মধ্যে এই ধরনের প্রবণতাগুলো কাজ করে যাতে করে তার সন্তান গর্ভধারণ করা পর্যন্ত তার সঙ্গিনী অন্য পাণিপ্রার্থীদের দূরে সরিয়ে রাখে।

১১. যৌনমিলনের চেয়ে আবেগগত মিলনের আকাঙ্খা বেশি
প্রেমে পড়লে ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে যৌন মিলনের আকাঙ্খার চেয়ে বরং আবেগগত মিলনের আকাঙ্খা বেশি কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে প্রেমে পড়লে ৬৪% মানুষই যৌনতার চেয়ে বরং আবেগগত মিলনকে বেশি প্রাধান্য দেন।

১২. নিয়ন্ত্রণহীনতা
প্রেমে পড়লে আপনি অনেকসময় আবেগগতভাবে স্বেচ্ছাচারী বা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়বেন।

১৩. স্ফুলিঙ্গ দূর হয়ে গেছে
দুর্ভাগ্যক্রমে, প্রেমে পড়ার অবস্থাটি চিরস্থায়ী হয় না। এটি একটি ক্ষণস্থায়ী দশা যা থেকে পরে দীর্ঘমেয়াদি, পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল সম্পর্ক তৈরি হয়। অথবা কোনো সম্পর্কই আর হয় না।
তবে দুজনের মাঝখানে সামাজিক বাধা বা স্থানিক দূরত্ব থাকলে প্রেমে পড়ার সময়কালটি দীর্ঘস্থায়ী হয়।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন