ঘুরে আসুন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত...

  24-03-2017 10:14PM

পিএনএস, এইচ. এম নুর আলম : মানুষ আর সমুদ্রের মধ্যে যেন এক গভীর প্রণয়। বায়ু পরিবর্তনের জন্য কিংবা নিছক আনন্দের জন্য বন্ধু-পরিজন নিয়ে কোথাও যাওয়ার কথা উঠলেই মনে পড়ে যায় সমুদ্রের কথা। সমুদ্রের সঙ্গে এই যে আত্মার বন্ধন, তা চাইলেও তো ছিন্ন করা যায় না। তাই সামনের ঈদ-পূজার ছুটিতে অনেকেই হয়তো যাবেন সমুদ্রের ডাকে সাড়া দিতে। বাংলাদেশের সমুদ্র বলতেই তো কক্সবাজার। পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম প্রাকৃতিক বালুময় সৈকত হিসেবে পরিচিত এই কক্সবাজারে বছরের এই সময়টাতে থাকে প্রচুর পর্যটকের আনাগোনা। আজ জেনে নেওয়া যাক এই কক্সবাজার সম্পর্কে।

কক্সবাজার সম্পর্কে কিছু কথা: কক্সবাজার পূর্বে ‘পানোয়া’ নামে পরিচিত ছিল, যার অর্থ হচ্ছে হলুদ ফুল। ১২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সৈকত চট্টগ্রামের ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। বর্তমানের কক্সবাজার নামটি করা হয়েছে তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অফিসার হিরাম কক্সের নামে। ওয়ারেন হেস্টিংসের শাসনামলে ক্যাপ্টেন কক্স আরাকান রিফিউজি এবং আঞ্চলিক রাখাইনদের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। এই উদ্দেশ্যে একটি মার্কেট স্থাপন করা হয়, যার নাম হয় কক্সমার্কেট বা কক্সবাজার। আর কালের বিবর্তনে এই নামটিই স্থায়ী হয়ে যায়।

রংপুর থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রুটের যেকোনো বাস ধরে চলে আসতে পারেন কক্সবাজার। সে ক্ষেত্রে খরচ হতে পারে ৮০০-৯০০ টাকা। ঢাকা-কক্সবাজার যাওয়া-আসা করা বাসগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছে গ্রিনলাইন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সোহাগ পরিবহন প্রভৃতি। সাধারণত সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসগুলো ছেড়ে যায়। তবে কেউ চাইলে ট্রেনেও আসতে পারেন; কিন্তু সে ক্ষেত্রে সময় বেশি লাগবে। চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে নেমে আবার বাসে করে যেতে হবে কক্সবাজারের উদ্দেশে। সামর্থ্য থাকলে বিমানপথেও আসতে পারেন।

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে দিনের পুরোটা সময়ই ভিড় থাকে। এ স্থানটি লাবণী বিচ হিসেবে পরিচিত। কক্সবাজার শহর থেকে সবচেয়ে কাছে এই বিচ। এখানে নানা বয়সী নানা পেশার মানুষকে খুব হৈ-হুল্লোড় করে সমুদ্রে নেমে যেতে দেখা যায়। চারপাশে রয়েছে কিছু ভ্রাম্যমাণ ফেরিওয়ালা। শামুক, ঝিনুকের মালা, আচার, টুকিটাকি খাবারের মেলা নিয়ে বসে এরা। সৈকতের পাশ ঘিরে আছে সারি সারি ছাউনি। ৫০-১০০ টাকায় যেগুলো অনেকেই ভাড়া নিয়ে থাকেন বিশ্রামের জন্য। চাইলে কেউ ঘোড়ায়ও চড়তে পারেন এখানে। কিছু লোক ঘোড়ার লাগাম হাতে, কেউ বা ক্যামেরা হাতে ছবি তোলার সুযোগ পেতে সদাই ব্যগ্র। সব মিলিয়ে আশপাশের পরিবেশটি যেন মুখর হয়ে ওঠে। দিন শেষে বিকেলের দিকে সমুদ্র যেন অনেকটাই শান্ত হয়ে যায় যেন। সারা দিনের লম্ফজম্ফ শেষে মানুষগুলো আসে সূর্যাস্ত দেখতে। সূর্যাস্ত কক্সবাজারের অন্যতম আকর্ষণের দিকের একটি। সমুদ্রের বুকে লাল সূর্যের লুটোপুটি খাওয়া যেন দারুণ চিত্তাকর্ষক।

কক্সবাজারে রয়েছে আরো কিছু ভ্রমণযোগ্য স্থান। কক্সবাজার শহরের দক্ষিণে রয়েছে হিমছড়ি ন্যাশনাল পার্ক। ছোট ছোট পাহাড়, ঝর্ণা আর চারদিকে সবুজ নিয়ে মাথা তুলে আছে হিমছড়ি। সময় করে ঘুরে আসতে পারেন এখানে। চলে যেতে পারেন আগামদা খায়াঙ্গে। কক্সবাজারের সবচেয়ে বড় এই বৌদ্ধবিহার এখানকার বৌদ্ধদের জন্য খুবই সম্মানের জায়গা। এর স্থাপনাও যথেষ্ট নজরকাড়া। হাজার বছরের পুরোনো এই মন্দিরে আছে ছোট ছোট প্রার্থনাকক্ষ আর নানা আকৃতির ব্রোঞ্জের তৈরি গৌতম বুদ্ধের ছবি। আরো মন্দির দেখতে চাইলে রামু যাওয়া ভালো। কক্সবাজার থেকে এর দূরত্ব মাত্র ১০ কিলোমিটার। রামু নানা রকম হস্তশিল্প এবং হাতে তৈরি সিগারের জন্য বিখ্যাত। এসব স্থানে যাওয়ার জন্য রয়েছে বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি, যাকে স্থানীয়রা টমটম বলে থাকে।

স্থলে ঘোরাঘুরি করে আবার চলে যেতে পারেন জলের দিকে। বলছিলাম ইনানী বিচের কথা। কক্সবাজার থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইনানী বিচে চলে আসতে পারেন টমটম করে। লাবণী বিচের মতো খুব বেশি মানুষের ভিড় হয় না এখানে, যা অনেকটাই প্রশান্তিদায়ক। এখানকার সোনারঙ্গের বালুকা আর স্বচ্ছ জলের রাশি সৃষ্টি করেছে এক অপূর্ব দৃশ্যের। মহেশখালী থেকেও ঘুরে আসতে পারেন। ফিশারিবাজার থেকে স্পিডবোটে ৪০ মিনিটের পথ। ২৬৮ বর্গকিলোমিটারের এই ছোট্ট দ্বীপ উপকূল রেখা বরাবর অবস্থিত। অসম্ভব সুন্দর এই দ্বীপটিকে ঘিরে রয়েছে নানা রকম ছোট ছোট পাহাড়, যেগুলোর উচ্চতা ৩০০ ফুটের বেশি নয়। এই দ্বীপের সৌন্দর্য যেন নাটকীয়তা আর নৈসর্গিয়তায় ভরপুর। হাতে সময় থাকলে আরো ঘুরে আসতে পারেন সেন্টমার্টিন, সোনাদিয়া দ্বীপ। টেকনাফ থেকে ঘুরে আসতে পারেন।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত: বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষিত বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। নীল আকাশ আর নীল জলরাশি—এ দুইয়ের সমন্বয়ে যেন কক্সবাজার। গভীর রাতে সমুদ্রের মাঝে জোছনা যেন বাড়তি পাওনা। প্রকৃতির এত কাছে এসে বহুদিন ফাইলের নিচে চাপা পড়া কবিমনও যেন জেগে উঠবে। সমুদ্রের গর্জন আর বাতাসের গুঞ্জন যেন এতদিনের ক্লান্তিকে কাটিয়ে দিতে পারে এক মুহূর্তে। আর এসব কিছুই উপভোগ করতে হলে চলে আসতে হবে কক্সবাজারে। সমুদ্র যেন আপনারই অপেক্ষায়।

কিভাবে যাবেন: রংপুর থেকে হানিফ, শ্যামলী, ডিপজলসহ অন্যান্য পরিবহনে যেতে পারেন। ঢাকা থেকে সৗদিয়া, এস আলম এর মার্সিডিজ বেঞ্জ, গ্রিন লাইন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, এস.আলম পরিবহন, মডার্ন লাইন, শাহ্ বাহাদুর, সেন্টমার্টিনসহ বিভিন্ন বাসে সব সময় কক্সবাজার যাওয়া যায়। এসি, নন এসি বাস রয়েছে। ভাড়া পড়বে ৯০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে।

যদি ট্রেনে যেতে চান, তাহলে রংপুর থেকে রংপুর এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস দিয়ে টাকার কমলাপুর এবং কমলাপুর থেকে উঠতে হবে, নামতে হবে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম থেকে তারপরে আপনাকে কক্সবাজার যেতে হবে।

বিমানেও মাত্র ৪৫ মিনিটে কক্সবাজারে যাওয়া যায়। নিয়মিত কক্সবাজারে নভো এয়ার, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ, ইউনাইটেড এয়ার ওয়েজসহ অন্যান্য বিমান আসা যাওয়া করে। এক্ষেত্রে ভাড়া হবে ৬৫০০-৮০০০ হাজার টাকা।

যেখানে থাকবেন: কক্সবাজারে আছে পাঁচতারা হোটেল থেকে শুরু করে ছোট হোটেলও। সব ধরনের মানুষের কথা মাথায় রেখেই নানা রকম হোটেলে ভরপুর এই পর্যটন নগরী। পাঁচতারা হোটেলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হাইপেরিয়ন বেকুইন, সোহাগ রেস্ট হাউজ,নিটল বে রিসোর্ট, মারমেইড ইকো রিসোর্ট, হোটেল ওয়াসিস ইত্যাদি। আপনাকে থাকতে হবে কক্সবাজারের কোন একটি হোটেলে। কক্সবাজারে রয়েছে পর্যটকের জন্য সাড়ে চার শতাধিক আবাসিক হোটেল মোটেল, রিসোর্ট এবং কটেজ। ঢাকা থেকেই ফোন দিয়েই বুকিং দিতে পারেন। এছাড়াও বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন কর্তৃক পরিচালিত মোটেল শৈবাল, তারকা মানের সিগাল হোটেল, সি-প্যালেস, সি-ক্রাউন , মিডিয়া ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল ওসান প্যরাডাইস লি. উল্লেখ্যযোগ্য।

যেখানে খাবেন: খাবারের খরচ নির্ভর করছে আপনার চাওয়ার ওপর। বিলাসী রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে কম খরচে খাওয়ারও চমৎকার ব্যবস্থা আছে এখানে। তবে স্বাদ আর খরচের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কিছু রেস্টুরেন্ট বেশ জনপ্রিয় এখানে। এর মধ্যে রয়েছে বৈশাখী রেস্টুরেন্ট, আইবীচ ভাতঘর, ঝাউবন রেস্টুরেন্ট, নিরবিলি রেস্টুরেন্ট, পউশী রেস্টুরেন্ট, পানকৌরী রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি। এগুলো ছাড়াও পথে পথে ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান তো আছেই।

যা খাওয়া যাবে না: কক্সবাজারে খাবারে সাবধানতা অবলম্বন করবেন। অনেক কিছু খেতে মন চাবে কিন্তু আপনি পর্যটক হলে কয়েকদিনের জন্য ভ্রমণ বা শিক্ষা সফরে গেলে হিসেব করে আপনাকে খেতে হবে।কারণ সেখানকার হোটেলের খাবারের মান যেমন হোক রান্না তেমন সুস্বাদু নাও লাগতে পারে। আপনার পেটে নাও সইতে পারে।পরিবেশের ভিন্নতার কারণে এবং খাবার কাওয়ার কমবেশির কারণে আপনার জ্বর, মাথা ব্যথা, বমি, গ্যাস, পাতলা পায়খানা হতে পারে।কখনোই বাইরের পানি বা হোটেলের খোলা পানি খাবেন না। বোতলজাত পানি কিনে খাবেন। বিশেষ করে সেখানে খাবার স্যুট না করলে বমি এবং পেট খারাপ বেশি হয়। এজন্য আপনার কাছে স্যালাইন, আমাশয়, পাতলা পায়খানার ট্যাবলেট এবং গ্যাসের বড়ি থাকতে হবে। সেখান থেকেও কিনে নিতে পারেন।

কক্সবাজারে যা কিনতে পারবেন: এখানে রয়েছে শুকটির বাজার।নানা জাতের সামুদ্রিক মাছের শুকটি পাবেন এখানে। রয়েছে শামুক আর ঝিনুকের নানা আকৃতির জিনিস। মালা, ক্লিপ, কানের দুল, নাকের ফুলসহ অনেক জিনিস।দেখলেই কিনতে মন চাবে। আপনার প্রিয়জনের নামাংকৃত করে শামুকের আর ঝিনুকের চাবির রিংও কিনতে পাওয়া যায় এখানে।এছাড়াও ভালো মানের কাপড়, খাবার জিনিসও কিনতে পারেন কম দামে।

যে সব বীচ থেকে সমুদ্র উপভোগ করতে পারেন: সমুদ্র সৈকতের জনপ্রিয় পয়েন্টগুলো হলো: ঝাউতলা, লাবনী, সুগন্ধা, কলাতলী, হিমছড়ি, ইনানী। এ পয়েন্টগুলো থেকে আপনি অতি সহজেই সমুদ্রের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।

ইনানী সী বীচ: কক্সবাজার জেলার পর্যটন সেক্টরে ইমাজিং টাইগার হচ্ছে ইনানী। বিশ্বের দীর্ঘতম বালুকাময় সৈকত কক্সবাজার যার দূরত্ব প্রায় ১২০০ কিলোমিটার। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত দীর্ঘ একশো বিশ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর, আকর্ষণীয় ও নয়নাভিরাম হচ্ছে ইনানী বীচ। এককথায় ইনানীকে প্রকৃতির ভূস্বর্গ বলা চলে। ইনানী সৈকত থেকে শুরু করে টেকনাফ পর্যন্ত এর প্রাকৃতিক প্রবাল এবং পাথর সমুদ্রের ভাঙ্গন থেকে সৈকতকে রক্ষা করছে। আবার, এসব পাথর ইনানী সৈকতকে দিয়েছে বাড়তি সৌন্দর্য।

কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৩৩ কিঃমিঃ দক্ষিণে ইনানী সমুদ্র সৈকত অবস্থিত।আর হিমছড়ি থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে ইনানী বীচ বা ইনানী সমুদ্র সৈকত। প্রবাল পাথরের সমারোহে ইনানী সমুদ্র সৈকত এখন আগের চেয়ে অনেক সুন্দর সাজানো গোছানো বলা যায়। একদা ইনানী যেতে হতো কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক হয়ে সোনারপাড়া আধাপাকা ও কাঁচা রাস্তার দিয়ে। সে সময় এখন আর নেই। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর কর্তৃক ১৯৯২ সালে নির্মিত কলাতলী থেকে টেকনাফ ৮৪ কিঃমিঃ দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে যে কোন যানে এখন ইনানী সমুদ্র সৈকতে যাওয়া যায়। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চিংড়ি পোনা উৎপাদনের অনেক হ্যাচারি রয়েছে ইনানীতে। সুপারি গাছের সারি সারি ইনানীকে আরো মহিমান্বিত করে রেখেছে। বন বিভাগের একটি সুন্দর রেস্ট হাউসটি এক সময় একমাত্র রেস্টহাউস হলেও এখন ব্যক্তি মালিকানায় অনেক রেস্টহাউস ও হোটেল-মোটেল-কটেজ রয়েছে। পর্যটকরা অনায়াসে এখন ইনানী সমুদ্র সৈকতে পিকনিক করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। পর্যটন মৌসুমে পর্যটকদের ভিড়ের চাপে স্থানীয়দের পিকনিক আয়োজন করতে হিমসিম পোহাতে হয়। এমন কোন বছর নেই যেখানে কক্সবাজার শহরে কোন স্কুল কলেজ বার্ষিক বনভোজন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে না।

ইনানী বীচে প্রবাল পাথরের ছড়াছড়ি। অনেকটা সেন্টমার্টিনের মতই। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মত এখানে বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ে না সৈকতের বেলাভূমিতে। অনেকটাই শান্ত প্রকৃতির সৈকত এই ইনানী। জোয়ারের সময় এলে প্রবাল পাথরের দেখা পাওয়া যাবে না। ভাটার সময়েই কেবল মাত্র বিশাল এলাকা জুড়ে ভেসে উঠে এই পাথর। প্রবাল পাথরে লেগে থাকে ধারালো শামুক ঝিনুক। তাই এখানে বেশী লাফালাফি করা বিপদজনক।

ইনানী সমুদ্র সৈকত যাওয়ার পথে বনবনানীতে পাহাড়ঘেরা পাখির কলকাকলী ও সাগর বেস্টিত সমুদ্রের গর্জন স্বকর্ণে শোনা ও শুভ্র রঙ্গের সাগরের ঊর্মি, সারি সারি ঝাউবাগান এবং কক্সাবাজার জেলার নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ করার মজাই আলাদা। সিনেমা ও নাট্য পরিচালকদের শুটিং করার জন্য এ সমুদ্র সৈকতসহ আশে পাশে অনেক পিকনিক স্পট এখন অনেক লোভনীয় শুটি স্পট।

ইনানী সৈকতের প্রধান আকর্ষণ প্রবাল আর পাথর। প্রায় প্রতিটা পাথরই নানা আকার আর ধরণের। কত বছরের পুরনো সে পাথর! আর তাতে মিশে আছে কত স্মৃতি! আপনি যদি টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ দিয়ে ইনানী সৈকতে যান তবে যাবার পথে আপনার দু চোখ জুড়িয়ে দেবে উঁচু উঁচু পাহাড় আর উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ। শুধু চোখই জুড়বে না, বরং পুরো সময়টা আপনি থাকবেন এক ধরণের সিদ্ধান্তহীনতায়! এক পাশে পাহাড় আরেক পাশে সাগর। মন যে দু দিকই দেখতে চাইবে।

সাগরে নামতে না চাইলে বা সে রকম পরিকল্পনা না থাকলে ইনানী সৈকতে যেতে পারেন বিকেল বেলায়। পড়ন্ত বিকেলের শান্ত সাগর আপনার সামনে তুলে ধরবে তার বিশালতা। সূর্যাস্তটাও উপভোগ করে ফিরতে পারেন। বিকেলে জোয়ার থাকে বলে সাধারণত অন্য সময়ের তুলনায় সে সময়ে মানুষের উপচে পড়া ভিড় কিছুটা কম থাকে। সাগর যেখানে নিজের ভাষায় কথা বলছে সেখানে মানুষের কোলাহল কিছুটা কম থাকাই কাম্য!

হিমছড়ি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত একটি পর্যটনস্থল। কক্সবাজার থেকে এটি ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। হিমছড়ির একপাশে রয়েছে সুবিস্তৃত সমুদ্র সৈকত আর অন্যপাশে রয়েছে সবুজ পাহাড়ের সারি। হিমছড়িতে একটি জলপ্রপাত রয়েছে যা এখানকার প্রধান পর্যটন আকর্ষণ। যদিও বর্ষার সময় ছাড়া অন্যান্য অনেক সময়ই ঝরণায় পানি থাকে না বা শুষ্ক থাকে। তবুও প্রাকৃতিক পরিবেশ হিসেবে হিমছড়ি, পর্যটকদের অনন্য এক আকর্ষণ।

হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার হিমছড়িতে অবস্থিত। উদ্যানটি ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে কক্সবাজার শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে ১৭২৯ হেক্টর (১৭.২৯ বর্গ কিলোমিটার) জায়গা জুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান স্থাপনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে গবেষণা ও শিক্ষণ, পর্যটন ও বিনোদন এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ। হিমছড়ির একপাশে রয়েছে সুবিস্তৃত সমুদ্র সৈকত আর অন্যপাশে রয়েছে সবুজ পাহাড়ের সারি। উদ্যানে অনেকগুলো জলপ্রপাত রয়েছে, যার মধ্যে হিমছড়ি জলপ্রপাতটি সবচেয়ে বিখ্যাত। হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র।

জীববৈচিত্র্য: হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান একটি চিরসবুজ ও প্রায়-চিরসবুজ ক্রান্তীয় (Semi- evergreen tropical) বৃক্ষের বনাঞ্চল। বনের ১১৭ প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে ৫৮ প্রজাতির বৃক্ষ, ১৫ প্রজাতির গুল্ম, ৪ প্রজাতির তৃণ, ১৯ প্রজাতির লতা এবং ২১ প্রজাতির ভেষজ।

হিমছড়ি বনাঞ্চল হাতির আবাসস্থল বলে ধারনা করা হয়। এছাড়া এ বনে মায়া হরিণ, বন্য শুকর ও বানর দেখা যায়। এ বনে ৫৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ২৮৬ প্রজাতির পাখি, ৫৬ প্রজাতির সরীসৃপ ও ১৬ প্রজাতির উভচর প্রাণী পাওয়া যায়। হিমছড়ি বনাঞ্চল উল্লুকের আবাসস্থল।

পাখিপ্রেমীদের জন্য হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান একটি আদর্শ স্থান। এর ২৮৬ প্রজাতির পাখির মধ্যে ময়না, ফিঙ্গে ও তাল বাতাসি উল্লেখযোগ্য।

শিতল পানির ঝর্ণা হিমছড়ি: বাংলাদেশের একমাত্র শীতল পানির ঝর্ণা এটি। হিমছড়ি রামু হতে ২৫কি:মি: এবং কক্সবাজার হতে প্রায় ১০ কি:মি: দক্ষিণে। কক্সবাজার থেকে হিমছড়ি ২ ভাবে যাওয়া যায়। জীপ ভাড়া করে অথবা রিক্সায়। অথবা এখানে বেবি ট্যাক্সিও ও ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা ভাড়া পাওয়া যায়। সেটাতে করেও যেতে পারেন।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দক্ষিনে আকর্ষনীয় পর্যটনস্পট। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে এ সমুদ্রসৈকতের নাম হিমছড়ি। এখানকার সমুদ্র সৈকতটি কক্সবাজারের চেয়ে অপেক্ষাকৃত নির্জন ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। এর সৌন্দর্যওকোনো অংশে কম নয়। সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন বিষয় হলো হিমছড়ি যত না সুন্দর তারচাইতে সুন্দর ও রোমাঞ্চকর হল কক্সবাজার থেকে এ সৈকতে যাওয়ার পথটি।এটি অসাধারন, কাব্যিক, এবং স্বপ্নের মত মত সুন্দর। একপাশে বিস্তৃর্ন সমুদ্রের বালুকা বেলা আর এক পাশে সবুজ পাহাড়ের সাড়ি। মাঝে পিচ ঢালা মেরিন ড্রাইভ।এমন দৃশ্য সম্ভবত দেশের আর কোথাও পাওয়া যাবে না। কেউ কক্সবাজার এসে এই পথ ধরে না ছুটলে না তার পুরো ভ্রমনই মাটি। পাহাড়ে উঠলে চোখের সামনে ভাসবে নীল দিগন্তে হারিয়ে যাওয়া বিশাল সমুদ্র। হিমছড়ির পাহাড়ের হিমশীতল ঝরনাগুলোবেশ আকর্ষণীয়। ছোট ছোট ঝর্না আপন মনে ঝরে পরছে পাহাড়ের গায়ে ছূটে যাচ্ছে সাগরের দিকে।

হিমছড়িতে যাবার জন্য ক্ষিপ্র গতিতে যে গাড়ি চলে তার নাম চান্দের গাড়ি। ক্ষিপ্র গতিতে যখন জিপ ছুটে চলে খোলা জিপের উপর দাড়িয়ে দুপাশে তাকালে মনে হবে যেন স্বপ্নে দেশেভেসে যাচ্ছেন। এটি হতে পারে আপনার জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা। দুপুরের রোদ কমে গেলে রওনা হতে হবে। পথ চলতে হবেকক্সবাজারের নানা চিংড়ি হ্যাচারীর মাঝখান দিয়ে । পথে লাল রংয়ের স্কুল ড্রেসপরা ছেলেমেয়েদের দেখবেন। আর দুপাশে থাকবে সাগর পারের গাছপালা। এরপর বেশউচু একটা ব্রীজপার হয়ে শুরু হবে হীমছড়ির রাস্তা। রাস্তার একপাশে থাকবে উচুপাহাড় আরেক পাশে সাগর। নানা রকম পাখির কলতান শুনতে শুনতে আপনি রোমাঞ্চিতহবেন। এই রাস্তাটি সেনা বাহিনীর তৈরি করা। যাবার পথে সেনাবাহীর একটিক্যাম্প। পাহাড়েনানা রকম ঝোপঝারের সাথে সাথে সমুদ্র সৈতক পাড়ে দেখা যায়সুদুর ঝাউ গাছের সারি। মাঝে মাঝে নারিকেল গাছের এক পায়ে দাড়িয়ে থাকাসৌন্দর্যের ভিন্ন এক মাত্রা যোগ করে। জায়গায় জায়গায় দেখবেন পাহাড়ী ছোটছোট ঝড়না। শুকনা মৌসুমে হয়তো সবটাতে পানি দেখবেন না। পথে রিক্সা বা গাড়ীথামিয়ে ঝড়নার পারে ঘুরে আসতে পারেন। রাস্তার ওপর পাশে সাগর। মাঝে মাঝেদেখবেন জেলে নৌকা বালির উপর সারি করে রাখা আছে।

হিমছড়িতে একটি ছোট পর্যটন কেন্দ্র আছে। টিকেট কেটে এখানে ঢুকতে হয়।ভীতরের পরিবেশটা বেশ সুন্দর। পাহাড়ের উপরে আছে অনেকগুলো বিশ্রামাগার।প্রায় ২ শতাধিক সিড়ি মাড়িয়ে উপরে উঠতে হয়। কষ্টটা মুহুর্তেই ভুলে যাবেন যখনপাহাড়ের চুড়া থেকে কক্সবাজারের পুরো সমুদ্রসৈকতটা এক পলকে দেখতে পাবেন।দুলর্ভ সে দৃশ্য। এখানে একটি ছোট ঝর্না রয়েছে। ঝর্নাটি ছোট কিন্তু বর্ষামৌসুমে এটি দারুন রূপ ধারন করে।

রম্য ভূমি রামু উপজেলায় অবস্থিত হিমছড়ি সৈকতটাও বেশ সুন্দর, কোন কোলাহোল নেই। ছিমছাম, শান্ত নীরব ও সুনসান পরিবেশের এ রকম সৈকত আমদের দেশে আর নেই। সৈকতের আশেপাশেই আছে ছোট বড় বেশ কয়েকটি ঝর্ণা। এছাড়া হিমছড়িতে একটি জাতীয় উদ্যানও রয়েছে। ১৭২৯ হেক্টর আয়তনের বনের ভিতরের পরিবেশও বেশ চমৎকার।পাহাড়ের উপরে রয়েছে বেশ কিছু বিশ্রামাগার। এখান থেকে পুরো সৈকতটা দেখা যায়। হিমছড়ি পাহাড়রের শীতল পানির ঝর্ণাটা অসাধারণ। বর্ষাকালে এই ঝর্ণার প্রকৃত রুপ দেখা যায় সম্পূর্ণভাবে। তাই এখনই এই ঝর্ণার প্রকৃত রুপ দেখতে যাওয়ার মোক্ষম সময়।

সুগন্ধা পয়েন্ট: এটি জাকজমকপূর্ণ একটি সী বীচ।এখানে লাইফ গার্ড রয়েছে। সাঁতার কাটতে স্পীড বোড এখানে পাবেন। এছাড়াও যারা সাঁতার জানেন না টিউবের সাহায্যেও ভাসতে ভাসতে অনেক দূর যেতে পারেন।রবির সৌজন্যে এখানে সমুদ্রের দৃশ্য উপভোগ করতে বসার অনেক স্থান রয়েছে। মাত্র ৩০ টাকা দিয়ে পুরো একঘন্টা সী বীচের মনোরম দৃশ্য এবং মন মাতানো হাওয়া আর সমুদ্রের গর্জন উপভোগ করা যায় অনায়াসেই। এর পাশেই গড়ে উঠেছে নানা তৈজসপত্রের বাজার।ঝিনুক আর শামুকের নানা জিনিস কিনতে পাওয়া যায় এখানে।এখানকার কাড বাদাম, চকলেট আর বর্মিচ আচার খুবই জনপ্রিয়।সী বীচ সংলগ্ন রয়েছে শুটকির বাজার। নানা জাতের মাছের শুকটি এখানে পাওয়া যায় অতি সুলভে।

কক্সবাজার ঘুরে আসুন। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত না ঘুরে আসলে বুঝতেই পারবেন না সমুদ্রের নোনা পানি কেমন আর সমুদ্রের বিশাল জলরাশির গর্জন কেমন? তবে সমুদ্রের জোয়ার-ভাটার সময় জেনে সমুদ্রে নামুন।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন