বাংলাদেশে যৌথ প্রযোজনার নামে কলকাতার ছবি চালিয়ে দেয়া হচ্ছে?

  22-06-2017 08:41PM

পিএনএস ডেস্ক : মাত্র কয়েকদিন আগেই কলকাতার জনপ্রিয় নায়ক জিৎ তার ফেসবুকে বলেছিলেন, "আকাশে যতই মেঘ ঘনিয়ে আসুক না কেন সূর্য ওঠা কেউ আটকাতে পারে না।"

কলকাতার জনপ্রিয় এ নায়ক যখন ফেসবুকে এ মন্তব্য করেন তখন বাংলাদেশে শিল্পীদের একটি অংশ জোরালো দাবী তুলেছিলেন যাতে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা 'বস টু' এবং 'নবাব' বাংলাদেশের সিনেমা হলে মুক্তি না দেয়া হয়।

মি: জিৎ কাউকে উদ্দেশ্য করে সরাসরি কিছু না বললেও ফেসবুকে তার ভক্তরা ধরে নিয়েছিলেন যে বাংলাদেশী শিল্পীদের একাংশ যে দাবী তুলেছে মি: জিৎ সেটিকেই ইঙ্গিত করেছেন। কারণ মি: জিৎ 'বস টু' সিনেমার নায়ক।

বাংলাদেশী শিল্পীদের যে অংশটি যৌথ প্রযোজনার সিনেমা দুটি এদেশে প্রদর্শনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন তারা বেশ জোরালো অভিযোগ তুলছেন। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, যৌথ প্রযোজনার নাম দিয়ে কলকাতার বাংলা সিনেমা বাংলাদেশের হলে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে যখন তর্ক-বিতর্ক তুঙ্গে, তখন সিনেমা দুটি বাংলাদেশে প্রদর্শনের জন্য ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।

'বস টু' সিনেমায় জিৎ নায়ক হলেও বাংলাদেশের অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া রয়েছেন দু'জন নায়িকার একজন। অন্যদিকে 'নবাব' সিনেমার নায়ক বাংলাদেশের শাকিব খান এবং নায়িকা কলকাতার শুভশ্রী।

এ দুটো সিনেমা বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এদেশের চলচ্চিত্র নায়ক জায়েদ খান, যিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক। তার অভিযোগ যৌথ প্রযোজনার সিনেমার ক্ষেত্রে সরকার নির্দেশিত যে ধরনের নিয়ম-কানুন অনুসরণ করা হয়নি।

মি: খান বলছেন, " আমরা যৌথ প্রযোজনার ছবির বিপক্ষে নই।আমাদের যৌথ নীতিমালায় স্পষ্ট বলা আছে, যৌথ ছবির ক্ষেত্রে দুই দেশের সমানুপাতিক হারে মুখ্য সমান-সমান শিল্পী অভিনয় করতে হবে। এবং দৃশ্যায়নের ক্ষেত্রে দুই দেশের সমান-সমান অগ্রাধিকার থাকতে হবে। কোন কিছুই মানা হয়নি।"

তিনি অভিযোগ করেন, মুখ্য চরিত্রে নামে মাত্র বাংলাদেশের কয়েকজন অভিনয় শিল্পী নিয়ে পুরোটাই কলকাতার প্রেক্ষাপটে তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশের কোন প্রেক্ষাপট দেখানো হয়নি বলে মি: খান উল্লেখ করেন।
'নবাব' এবং 'বস টু' সিনেমা দুটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক এবং ইউটিউবে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছে। বাংলাদেশের নায়ক শাকিব খান, নায়িকা নুসরাত ফারিয়া এবং কলকাতার নায়ক জিৎ এবং নায়িকা শুভশ্রী তাদের নিজস্ব ফেসবুক পেইজে প্রচারণায় সরব ছিলেন।

এ দুটো সিনেমায় অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের অমিত হাসান। সিনেমাগুলো বাংলাদেশে প্রদর্শনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবার কোন যুক্তি দেখছেন না।

"যৌথ প্রযোজনার সিনেমাগুলিতে যারা সুযোগ পায় না তারাই এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এদের মধ্যে কেউ-কেউ কো-প্রোডাকশনের ছবিতে অভিনয় করেছে," বলছিলেন মি: হাসান।

১৯৮০'র দশক থেকে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার ছবি তৈরি হচ্ছে। সংখ্যায় খুব বেশি না হলেও চর্চা আছে। যে দুটো নিয়ে নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে সেগুলো খতিয়ে দেখেছে তথ্য মন্ত্রণালয়। সবকিছু দেখে সন্তুষ্ট হওয়ায় ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে বলে জানালেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

মি: ইনু বলেন, "এফডিসিতে একটা কমিটি কাজ করে। চলচ্চিত্র জগতের পরিচালক, প্রযোজক এবং শিল্পীরা তার সদস্য। তারা ছাড়পত্র দেবার পরে আমরা মন্ত্রণালয় থেকে অনাপত্তিপত্র দেই। যারা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন, সেটি আবার প্রিভিউ কমিটিতে পাঠিয়েছিলাম। প্রিভিউ কমিটি একাধিকার বৈঠকে বসে সেগুলো খতিয়ে দেখে কোন সত্যতা পায়নি।"
সাধারণত ঈদের সময় বাংলাদেশে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্রগুলো বাণিজ্যিকভাবে কিছুটা সফল হয়। সেজন্য চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা ঈদের সময়টিকে বাড়তি গুরুত্ব দেন। এবারও ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশে চারটি সিনেমা তৈরি হয়েছিল।

কিন্তু যৌথ প্রযোজনার সিনেমাগুলো প্রদর্শনের অনুমতি পাওয়ায় বাংলাদেশে নির্মিত সিনেমাগুলো আর মুক্তি পাচ্ছে না।

কারণ অধিকাংশ সিনেমা হল 'বস টু' এবং 'নবাব' প্রদর্শন করবে। কথিত আছে চলচ্চিত্র পরিবেশকদের একটি শক্তিশালী চক্র কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সিনেমা হলগুলো নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন